ঘুরে আসুন দারুচিনির দ্বীপ সেন্টমার্টিন

S M Ashraful Azom
0
ঘুরে আসুন দারুচিনির দ্বীপ সেন্টমার্টিন
সূর্য্য ডুবার সময় সেন্ট মার্টিন
সেবা ভ্রমন কাহিনী: বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ যা সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপ নামে পরিচিত। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। এ দ্বীপে প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। প্রচলিত আছে অনেক বছর আগে প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যে এখানে দারুচিনি বোঝাই আরবের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ পানির নীচে থাকা একটি বিশাল পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে জাহাজ ভেঙ্গে জাহাজে থাকা দারুচিনি এই দ্বীপের সবখানে ছড়িয়ে যায় ফলে সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপের নাম হয়ে যায় ‘দারুচিনির দ্বীপ’।

ভূপ্রকৃতি: সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দেখতে কেমন?

ভূপ্রকৃতি: সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দেখতে কেমন?

ভূপ্রকৃতি: সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দেখতে কেমন?

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপটির ভূপ্রকৃতি প্রধানত সমতল। তবে কিছু কিছু বালিয়াড়ি দেখা যায়। এ দ্বীপটির প্রধান গঠন উপাদান হলো চুনাপাথর। দ্বীপটির উত্তর পাড়া এবং দক্ষিণ পাড়া দু’জায়গারই প্রায় মাঝখানে জলাভূমি আছে। এগুলো মিঠা পানি সমৃদ্ধ এবং ফসল উৎপাদনে সহায়ক। দ্বীপটিতে কিছু কৃষি উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য।


জীববৈচিত্র: কি দেখতে পাবেন?

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১শ ৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১শ ৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১শ ৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২শ ৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১শ ২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে পেজালা নামে পরিচিত Sea weeds বা অ্যালগি (Algae) এক ধরণের সামুদ্রিক শৈবাল সেন্ট মার্টিন্সে প্রচুর পাওয়া যায়। এগুলো বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে তবে লাল অ্যালগি (Red Algae) বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।[১] অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্যাসী শিল কাঁকড়া,লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল,রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ,উড়ুক্কু মাছ ইত্যাদি। [১] সামুদ্রিক কচ্ছপ সবুজ সাগর কাছিম এবং জলপাইরঙা সাগর কাছিম প্রজাতির ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে জায়গাটি খ্যাত।
জীববৈচিত্র: কি দেখতে পাবেন?
আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল সেখানে মিলেমিশে একাকার, তীরে বাঁধা নৌকা, নান্দনিক নারিকেল বৃক্ষের সারি আর ঢেউয়ের ছন্দে মৃদু হাওয়ার কোমল স্পর্শ–এটি বাংলাদেশের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য বর্ণনার ক্ষুদ্র প্রয়াস। বালি, পাথর, প্রবাল কিংবা জীব বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে জ্ঞান আর ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য অনুপম অবকাশ কেন্দ্র সেন্টমার্টিন। স্বচ্ছ পানিতে জেলি ফিশ, হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, প্রবাল বিশ্ব রহস্যের জীবন্ত পাঠশালায় পরিণত করেছে সেন্টমার্টিন ও তৎসংলগ্ন এলাকাকে।
জীববৈচিত্র: কি দেখতে পাবেন?
সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। আয়তন ১৭ বর্গ কিলোমিটার। টেকনাফ থেকে ট্রলারে, লঞ্চে কিংবা জাহাজে যেতে লাগে দুই থেকে সোয়া দুই ঘণ্টা। এর জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। নারিকেল, পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো, ধান এই দ্বীপের প্রধান কৃষিজাত পণ্য। আর অধিবাসীদের প্রায় সবারই পেশা মৎস্য শিকার। তবে ইদানীং পর্যটন শিল্পের বিকাশের কারণে অনেকেই রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল কিংবা গ্রোসারি শপের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ নিতান্ত সহজ–সরল। তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। স্বল্প খরচে পর্যটকদের জন্য থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
ঘুরে আসুন দারুচিনির দ্বীপ সেন্টমার্টিন

সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে আসা যাওয়া করে।

প্রতিদিনের পর্যটকরা বিকেলের মধ্যেই ফিরে যায়, তাই বিকেলের পর থেকে দ্বীপে ঘুরে বেরানোর মজাই আলাদা। আর যদি ভরা পূর্ণিমায় যেতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই, রাতের বেলা সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপে ঘুরে বাড়াবেন আর বাঁচার ইচ্ছেটা বাড়িয়ে নিবেন।

সেন্ট মার্টিনে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় কি?

সেন্ট মার্টিনে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় কি?
হ্যা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কয়েক জায়গায় সাইকেল ভাড়া নেওয়া যায়। যার জন্য ঘন্টা প্রতি ৬০-৮০ টাকা খরচ করতে হয়। সাইকেল নিয়ে মনের সাধ মিটিয়ে বীচ ধরে ঘুরতে পারবেন। সময় থাকলে পুরো দ্বীপটি সাইকেল দিয়ে ঘুরা সম্ভব।


সেন্ট মার্টিনে বিদ্যুৎ  এর ব্যবস্থা?

সেন্ট মার্টিন পুরোটাই জেনারেটর নির্ভর। রিসোর্ট-হোটেলগুলো সন্ধ্যা থেকে সাধারণত রাত ১১টা পর্যন্ত জেনারেটর চালায়। দিনের বেলায় পানির পাম্প চালানোর জন্য কিছুটা সময় চালু রাখা হয়। মোবাইল, ক্যামেরা ল্যাপটপ এসব চার্জ করা নিয়ে সমস্যাই পরতে হয়, সাথে উন্নত মানের ২-৩টা পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে গেলে ভালো হয়।

কিভাবে যাবেন দারুচিনির দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে:


কিভাবে যাবেন দারুচিনির দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে:

বাংলাদেশের যে কোনও স্থান থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। কক্সবাজার থেকে প্রথমে জিপে চড়ে টেকনাফ, টেকনাফ থেকে সি–ট্রাক, জাহাজ কিংবা ট্রলারে চড়ে পৌঁছাবেন সেন্টমার্টিনে। 

প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বেশ কিছু গাড়ি। বাসে ভাড়া লাগবে এসি ৬৫০–৭০০ এবং নন–এসি ৩৫০–৪০০ টাকা। কক্সবাজার তো গেলেন তারপর বাসে ২৫–৩০ টাকা, ট্যাক্সিতে ৩০–৪০ টাকা অথবা রিজার্ভ মাইক্রোবাসে সেন্টমার্টিন যেতে ভাড়া লাগবে ৫০০–১০০০ টাকা (৮–১০ সিট)। 

প্রতিদিন সকাল থেকে কক্সবাজার–টেকনাফ রুটে চলাচল করে এসব গাড়ি। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা–যাওয়া করে সি–ট্রাক, কেয়ারি সিন্দাবাদ এবং নাফসি হাজাজ। চমৎকার এসব জাহাজের পাশাপাশি ট্রলারও চলাচল করে এই সমুদ্র রুটে। পছন্দসই বাহনে যেতে পারেন। তবে নিরাপদ জলযান হিসেবে কেয়ারি সিন্দাবাদ ও নাফসি জাহাজই নির্ভরযোগ্য। এসব জাহাজে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। অন্যদিকে প্রতিদিনই বিকাল ৩টায় এসব সাহাজ সেন্টমার্টিন ছেড়ে আসে। শীত মৌসুমে সমুদ্র শান্ত থাকে এবং গ্রীষ্ম–বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল থাকে, তখন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ।

সেন্ট মার্টিনে গিয়ে কোথায় থাকবেন? 

সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি উন্নতমানের হোটেল ও কটেজ রয়েছে। তবে অবশ্যই তা আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে। নতুবা থাকার জন্য ভাল জায়গা পাওয়া যাবেনা। এছাড়াও সেখানে বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে যার ভাড়া পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা। থাকার জন্য উল্লেখযোগ্য হোটেল হলো – ব্লু মেরিন রিসোর্ট (ঢাকা অফিস-৯৫৫৬২৫১, ০১৭১৩৩৯৯০০০, সেন্টমার্টন-০১৭১৩৩৯৯২৫০), প্রিন্স হেভেন (০১৮৩৩৩৬০৩৩৩), সীমানা পেরিয়ে (০১৯১১১২১২৯২, ০১৮১৯০১৮০২৭), প্রাসাদ প্যারাডাইস (৮৮১৭৪০০, ৯৮৯১৯২২, ০১৫৫৬৩৪৭৭১১), কোরাল ব্লু রিসোর্ট (০১৭১৩১৯০০১৩, ০১৭১৩১৯০০০৭), লাবিবা বিলাস (০১৭৪৪১৩৬১৪৫, ০১৭১৪৬৩৪৭৬২), পর্যটন হোটেল অবকাশ (০১৮৬৬৯৮৯৮৫৫, ০১৮৬৬৯৮৯৮৫৬, ০১৮৬৬৯৮৯৮৬০) ইত্যাদি। ভাড়া পড়বে রুম ভেদে ১৫০০-৫০০০ টাকা।

সেন্ট মার্টিনে গিয়ে কোথায় থাকবেন?

সেখানে কি খেতে পারবেন?

এই দ্বীপের সবচেয়ে বিখ্যাত জিনিস হল ডাব। এই দ্বীপের নাম নারিকেল জিঞ্জিরা এমনি এমনি হয়নি। এখানকার ডাবের পানি যেমন মিষ্টি তেমনি সুস্বাদু। সেন্ট মারটিনে গেলে ডাবের পানি মিস করা ঠিক হবে না। এখানে প্রায় সকল আবাসিক হোটেলের রেস্টুরেন্ট আছে, তাই আপনি চাইলে ওখানে খেয়ে নিতে পারেন। যারা মাছ খান না আমার মতে তাদের সেন্ট মার্টিন যাওয়ার অধিকারই নেই। কারন কোরাল,সুন্দরী পোয়া,ইলিশ, রূপচাঁদা,লবস্টার,কালাচাঁদার স্বাদ এক কথায় অসাধারণ। আর একটা জিনিস অবশ্য খেয়ে দেখতে পারেন। সেটা হল কুরা (স্থানীয় ভাসায় দেশী মুরগিকে বলা হয় কুরা)। শুঁটকি মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে লইট্টা, ছুড়ি, রূপচাঁদা, কাচকি ট্রাই করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন বেশির ভাগ শুঁটকি কিন্তু আসে কক্সবাজার ও চট্ট্রগ্রাম থেকে। যারা ইলিশ খুব বেশি পছন্দ করেন তারা জেনে রাখুন সমুদ্রের ইলিশ নদীর ইলিশের মত টেস্টি নয়। এ ছাড়া সব খাবার হোটেলের বাইরে টেবিলে সাজিয়ে রাখা হরেক রকমের জ্যান্ত মাছ থেকে বেছে নিয়ে অর্ডার দিতে পারবেন। রাতের বেলা বার-বি-কিউ করতে পারবেন, মাছ বাছাই করে ওদের বলে দিলে ওরাই করে দিবে আপনাকে।

আরেকটি কথা,যারা জানুয়ারী বা ফেব্রুয়ারীতে সেন্ট মারটিন যাবেন তারা অবশ্যই তরমুজ মিস করবেন না। দেখতে খুব একটা লাল না হলেও খেতে কিন্তু বেশ।


বিশেষ সতর্কতা

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রবালের উপর হাটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে নতুবা পা কেটে যেতে পারে। ভাটার সময় বিচে না নামাই ভালো। বিচের বালু বা পানিতে কোন প্রকার ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। এর সৌন্দর্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সিট্রাকে ভ্রমনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে জেটিতে উপস্থিত হোন।


⇘সংবাদদাতা: সেবা ভ্রমন কাহিনী
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top