
গাইবান্ধা প্রতিনিধি : মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে গাইবান্ধায় নির্মিত অর্ধশতাধিক শহীদ মিনারের এখন জীর্ণ দশা। ভাষার মাসে কিছুটা যত্ন নেয়া হলেও, বছরের বাকি সময় পড়ে থাকে অযত্নে-অবহেলায়। এমন অবস্থায়, সুষ্ঠু তদারকির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে, ১৯৫২ সালে যারা বুকের তাজা রক্তে রাঙিয়েছিলেন রাজপথ, সেইসব মহান শহীদদের স্মরণে, গাইবান্ধায় সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে, বিভিন্ন সময় নির্মাণ করা হয় প্রায় অর্ধ শতাধিক শহীদ মিনার। কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় এগুলোর বেহাল দশা।
জেলা সদর উপজেলা কুপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বারান্দায় শহীদ মিনারের বেহাল দশা। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কতৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা জানান বিদ্যালয় কতৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে।
![]() |
| কুপতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের বেহাল দশা |
বিদ্যালয়ের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবার বরাদ্দ পেলেই শহীদ মিনারটির কাজ শুরু করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয় কতৃপক্ষের কারণেই এমন অবস্থা। বিদ্যালয় কর্তপক্ষ কাজ করলেই আমরা সামনে ২১শে ফেব্র“য়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস যথাযথভাবে পালন করতে পারতাম।
এদিকে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের লেংগা বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটিরও একই অবস্থা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হক জানান, সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় শহীদ মিনারের এমন অবস্থা।
অপরদিকে পুলিশ লাইন সংলগ্ন গাঁ ঘেসে বোর্ড বাজারে মেইন সড়কে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করায় শহীদ মিনারটির গুরুত্ব হারিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। মাঠ না থাকায় অনেকেই এই শহীদ মিনারে আসেন না। ফলে মাতৃভাষা দিবসটি এখানে পালন হয় না।
![]() |
| গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর বাজারে অবস্থিত জরাজির্ন শহিদ মিনার |
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, আমরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি এই শহীদ মিনারটি কোন সংস্কার করা হয় না। মাতৃভাষা দিবস কিংবা ২৬ মার্চ উপলক্ষে এই শহীদ মিনারে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না।
![]() |
| ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে অবস্থিত শহীদ মিনারটির আরও জীর্ণ দশা |
এব্যাপারে ধোপাডাঙ্গা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান রাজু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে কোন বরাদ্দ নাই। ফলে শহীদ মিনারটি সংস্কার করতে পারছি না। বরাদ্দ পেলেই শহীদ মিনারটির কাজ শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য, আড়াই যুগ আগেও ছিল শহীদ দিবস পালনসহ সকল আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। এখন পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। এসবের গাঁ ঘেঁসে গড়ে উঠেছে দোকান। অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে গাইবান্ধা জেলার অর্ধশতাধিক শহীদ মিনার। দীর্ঘ দিন আগে নির্মিত শহীদ মিনারগুলোকে ঘিরে বিভিন্ন উপজেলার সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হলেও শহীদ মিনার গুলোতে এখন কেউ আর সেখানে যায় না। ফলে স্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে শহীদ মিনারসহ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিসার এনায়েত আলী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শত ভাগ শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
⇘সংবাদদাতা: গাইবান্ধা প্রতিনিধি




খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।