নাগরপুরের জাহালম ফিরে পেল তার পাটকলের চাকরি

S M Ashraful Azom
0
নাগরপুরের জাহালম ফিরে পেল তার পাটকলের চাকরি
সেবা ডেস্ক: টাঙ্গাইলে অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগে বিনা দোষে ৩ বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেয়েছেন নাগরপুরের পাটকল শ্রমিক জাহালম। এবার বিজেএমসি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার নরসিংদীর ঘোড়াশালের পুরোনো চাকরিটি ফিরে পেলেন। গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) থেকে তিনি তার পুরনো কর্মস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুটমিলে তাঁতি হিসেবে যোগদান করে কাজ শুরু করেছেন।

সোনালী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারীতে দুদকের দায়ের করা মামলায় ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রয়ারি জাহালমকে আটক করা হয়। দীর্ঘ ৩ বছর ভুল আসামি হিসেবে জেলে থাকার পর এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ৫৮ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।

জানা যায়, মুক্তির পর তিনি চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় সকল প্রকার কাগজপত্র নিয়ে বিজেএমসির চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন জানান। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজেএমসি চেয়ারম্যান জাহালমের সকল প্রকার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তাকে স্বপদে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা মোতাবেক এ মাসের ১৬ তারিখে তিনি পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে অবস্থিত বিজেএমসির নিয়ন্ত্রাণাধীন বাংলাদেশ জুট মিলের কর্তৃপক্ষের কাছে তার কাগজপত্র পেশ করেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক স্বপদে তার যোগদান গ্রহণ করা হয়।

দীর্ঘ ৩ বছর পর চাকরি ফিরে পেয়ে জাহালম জানান, এই ৩টি বছর বিনা দোষে কারাবরণ করে শরীর অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে। মানসিক অবস্থাও আগের মতো নেই। ফলে আগেরমতো এখন আর কাজে মন বসে না। এদিকে ৩ বছরে আমার সংসার তছনছ হয়ে গেছে। একেবারে পথের ফকির হয়ে গেছি আমি। তাই জীবন থেকে চলে যাওয়া ৩ বছরের ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

জাহালম আরও জানান, আমি জেলে যাওয়ার পর সংসার চালাতে স্ত্রী কল্পনা বেগম স্থানীয় প্রাণ কোম্পানীতে চাকরি নেয়। এতে যে বেতন পেতো তাই দিয়ে সংসার চালিয়ে আমার মামলার খরচ চালাতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে আমার সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই।

জানা যায়, ঘোড়াশালের টেকপাড়া আমির হোসেনের ভাড়া বাড়িতে বাবা মায়ের সঙ্গেই থাকতেন জাহালম ও তার স্ত্রী কন্যা। ২০০৩ সালে বাবার বদলি শ্রমিক হিসেবে মিলের তাঁতি পদে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ৯বছর শ্রমিক হিসেবে কাজ করার পর ২০১২ সালে এই চাকরিটি স্থায়ীকরণ করা হয়। যেহেতু চাকরিটি স্থায়ী তাই সপ্তাহে ৪/৫ হাজার টাকা আয় করতো। তা দিয়েই মা-বাবা, স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সুখে শান্তিতেই কাটছিল জাহালমের জীবন।

এরইমধ্যে বাবা ইউসুফ মিয়ার চাকরি শেষ হয়ে যাওয়ায় মা-বাবা ২০০৯ সালে টাঙ্গাইলে নাগরপুর উপজেলার ডুপুরিয়ায় নিজ গ্রামে চলে যায়। অপরদিকে জাহালম তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ঘোড়াশালেই রয়ে গেছেন। চাকরির পাশাপাশি মেয়েকে ঘোড়াশালে ভালো একটি স্কুলে ভর্তি করান। কিন্তু সেই সুখ আর শান্তির ঘরে হানা দিল দুদক।

৫ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে জাহালমের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ঠিকানায় একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় জাহালমকে দুদকে হাজির হতে বলা হয়। জাহালম সেসময় নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করছিলেন। যথা সময়ে দুদকে হাজিরা দিয়ে জাহালম আবার তার নরসিংদীর জুট মিলের কর্মস্থলে চলে যান। এর দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালের ওই জুট মিল পাশ্ববর্তী কালীগঞ্জ গুদারাঘাট থেকে জাহালমকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে, সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ৩৩টি মামলায় জাহালমের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুদক। ওইসময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জাহালম নিজেকে নিদোর্ষ দাবি করে এবং সে অপরাধী নয় বলেও দুদককে জানায়। কিন্তু তারা কেউই তার কথায় কর্ণপাত করেননি।

এ নিয়ে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে : শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে প্রশাসেনর। জাহালমের মুক্তির বিষয়ে কারও কাছে সমাধান না পেয়ে জাহালমের বড় ভাই শাহানূর মিয়া গত বছর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে যান। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে জাহালমের সঙ্গে দেখা করেন কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

পরে মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসে, আবু সালেক আর জাহালম একই ব্যক্তি নন। কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মামলার অন্যতম আসামি নজরুল ইসলাম ওরফে সাগরের সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারে কমিশনের কথা হয়। তিনি জানান, আবু সালেক মিরপুরের শ্যামল বাংলা আবাসন প্রকল্পের মালিক।

অবশেষে আদালত জাহালমকে দুদকের ২৬ মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে রাতে কারাগারে কাগজ পৌঁছানোর পর জেল থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

জাহালমের চাকরি ফিরে পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ জুট মিলের মহা ব্যবস্থাপক মো. গোলাম রব্বানী জানান, জাহালম এই মিলেরই একজন স্থায়ী তাঁতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারণে নিয়মানুযায়ী চাকরি চলে যায়। দীর্ঘ ৩ বছর অনুপস্থিতির পর অবশেষে জাহালমের যোগদানের বিষয়ে বিজেএমসি একটি নির্দেশনা জারি করে। এই নির্দেশনায় আমরা জাহালমের স্বপদে যোগদান গ্রহণ করি। জাহালম এ মাসের ১৬ তারিখে মিলের কার্যালয়ে এসে যোগদান করেন। বর্তমানে সে আমাদের মিলে কর্মরত আছে।

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top