
সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এর একদল গবেষক সম্প্রতি হাইব্রিড গাড়ি নিয়ে গবেষণায় সাফল্য অর্জন করেছে। তাদের নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে একই গাড়ি জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং সূর্যের তাপ ব্যবহার করে চালানো যাবে।
একটি গাড়িতে তিন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহারের এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
গবেষক দলের সদস্য ও শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে একই গাড়িতে ইলেকট্রিক্যাল প্লাগ ইন, ইঞ্জিনসেবা ও সোলার চার্জিং সিস্টেম রয়েছে; ফলে জ্বালানি শেষ হলেও চলবে গাড়ি। সোলার সিস্টেম থাকায় জ্যামে আটকে থাকলেও ব্যাটারি চার্জ হবে। এতে করে জ্বালানির অপচয় রোধ হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চার্জ দেয়ার প্রক্রিয়া থাকায় খরচ কমবে বলেও জানান তিনি।
সাত সদস্যবিশিষ্ট এ গবেষক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ইমদাদুল হক। দলের অন্য সদস্যরা হলেন- একই বিভাগের প্রভাষক ফজলুর রশীদ, শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, ওবায়দুল হাসান, তানভির রহমান এবং ইসমাইল হক ফরিদ।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, ২০১৪ সালের দিকে বৈদ্যুতিক চার্জে চলা ইজিবাইক নিয়ে তারা গবেষণা শুরু করেন। এক থেকে দেড় বছর পর গবেষণায় তিনি ইজিবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পাশাপাশি সোলার সিস্টেম ব্যবহারে সফল হন।
ইজিবাইকে একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সোলার সিস্টেম ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেন। তবে ইজিবাইক ছোট হওয়ায় তাতে ইঞ্জিন-ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের জায়গা কম। ফলে জ্বালানি ব্যবহারের গবেষণাটিতে ভালো ফল পাননি। এরপর তিনি প্রাইভেট কার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
অধ্যাপক ইমদাদুল হক আরো বলেন, ২০১৪ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে একটি প্রকল্প পান। সেই প্রকল্পের আওতায় তিনি এই গবেষণা করেছেন।
অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, আমাদের জ্বালানি শক্তি সীমিত। জ্বালানি শক্তি দিন দিন কমছে। তাছাড়া এই জ্বালানি পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতি করে; কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। আমরা গবেষণা করেছি গাড়িতে জ্বালানির অপচয় বা ব্যবহার কমিয়ে কীভাবে পরিবেশকে গ্রিন রাখা যায়। ৭০০-৮০০ সিসি এমন ধরনের ছোট প্রাইভেট কারের গবেষণায় সফল হয়েছি। উদ্ভাবিত পদ্ধতি অবলম্বন করে এসব গাড়িতে ৩০-৪০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, জ্বালানি, বিদ্যুৎ বা সোলার সিস্টেমের ব্যবস্থা থাকলেও একটা ফুয়েলের সঙ্গে আরেকটা ফুয়েলের গতির তারতম্য ঘটবে না। এখানে ব্যাটারি সিস্টেম রয়েছে, যেখানে চার্জ সংরক্ষিত হবে। বিদ্যুৎ বা সোলারের চার্জ একই ব্যাটারিতে জমা হবে, যার ফলে সব ফুয়েলেই গাড়িকে সমান গতি দেবে। নতুন এবং ভালো মানের গাড়িতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, এটি নিয়ে আমরা এখনও কাজ করছি; প্রাথমিকভাবে ১২০ কিলোমিটার যাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
গাড়ির খরচ সম্পর্কে অধ্যাপক ইমদাদুল বলেন, আর্থিক সমস্যা থাকায় পুরাতন একটি গাড়ি নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। এই পদ্ধতি নতুন-পুরাতন সব ধরনের গাড়িতেই ব্যবহার করা যাবে। একটি গাড়িতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে দুই থেকে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে। যেসব গাড়িতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যবস্থা আগে থেকেই রয়েছে, সেসব গাড়িতে খরচ আরও কম হবে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।