ভালো গ্রাহক খুঁজে পায় না দেশের ব্যাংকগুলো!

S M Ashraful Azom
0
ভালো গ্রাহক খুঁজে পায় না দেশের ব্যাংকগুলো!
সেবা ডেস্ক:  ৯০% ঋণ ভালো ঋণগ্রহীতার হাতে কৃষককে বেশি প্রণোদনা দেওয়ার পরামর্শ সাবেক গভর্নরের। ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ৯০ শতাংশই অশ্রেণীকৃত, অর্থাৎ এর গ্রাহকরা নিয়মিত পরিশোধ করে। তবু ভালো গ্রাহককে প্রণোদনা দিতে ব্যাংকগুলোরই আগ্রহ নেই।

এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে চার বছর পর একই বিষয়ে আবারও নির্দেশনা দিতে হলো। ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রণোদনা প্রসঙ্গে’ শিরোনামে সার্কুলার জারি করেছিল। ব্যাংকগুলোর সাড়া না পেয়ে ওই বছরের ডিসেম্বরে আরেকটি সার্কুলার দিয়ে ব্যাংকগুলোকে স্মরণ করিয়েও দেওয়া হয়েছিল।

চার বছর আগে জারি করা সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকার করেছিল, ভালো ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহিত করার জন্য কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা প্রদান করার নীতিমালা নেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে উন্নত ঋণ সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে অর্থাৎ ভালো ঋণগ্রহীতাদের অতিরিক্ত কিছু সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করার প্রয়োজন রয়েছে।

ওই সার্কুলারে ভালো ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিত করার জন্য সংজ্ঞাও ঠিক করে দিয়ে সার্কুলারটি ‘অবিলম্বে কার্যকর’ করার জন্য বলা হয়েছিল সব তফসিলি ব্যাংককে। টানা তিন বছর নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেছে এমন গ্রাহককে ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত করে আদায়কৃত সুদের ‘অন্যূন ১০ শতাংশ’ রিবেট দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

এরপর প্রতিবছর সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে এ সুবিধা দিয়ে তাকে বর্ধিত ঋণ দিতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
তবে এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর তৎপরতা না দেখে ওই বছরেরই ৩০ ডিসেম্বর আরেকটি সার্কুলার দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, ভালো ঋণগ্রহীতা চিহ্নিত করে আগের সার্কুলারটি ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করতে। গত বৃহস্পতিবার জারি করা সার্কুলারে সুবিধা আগের মতো (১০ শতাংশ রিবেট) রেখে নতুন করে ভালো ঋণগ্রহীতার মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১২ মাসে বিরূপমানে শ্রেণীকৃত না হলে গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত হবে।

ব্যাংকের আর্থিক হিসাবেই দেখা যায়, ভালো গ্রাহকের সংখ্যাই বেশি, তাদের নিয়মিত পরিশোধেই খারাপ ঋণগ্রহীতার সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে ব্যাংকগুলো লাভের মুখ দেখে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল, ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১০ শতাংশের কিছু বেশি। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট ঋণ ছিল ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এ ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই ভালো ঋণগ্রহীতাদের কাছে। তবু ভালো ঋণগ্রহীতা চিহ্নিত করে উঠতে পারেনি ব্যাংকগুলো। 

ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রশংসিত করা ও প্রণোদনা দেওয়ার তাগিদ থেকে চার বছর আগে সার্কুলারটি দেওয়া হয়েছিল, তবে ব্যাংকগুলো থেকে তেমন সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তখনকার গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এসংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রণোদনা দিতে হবে, তবে খারাপ গ্রহীতাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনার সঙ্গে তার পার্থক্য কতটুকু, তার ওপরই নির্ভর করবে এর কার্যকারিতা। যদি মন্দ ঋণগ্রহীতার জন্য প্রণোদনা বেশি হয়, তবে ভালোরাও মন্দ হতে উৎসাহিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সুবিবেচনা ও আরো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

ভালো ঋণগ্রহীতার প্রণোদনার ক্ষেত্রেও কিছু বিভাজন থাকা দরকার বলে মনে করেন ড. আতিউর। বিশেষ করে কৃষক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার হার বেশি হওয়া উচিত। ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বড়রা যদি ১০ শতাংশ রিবেট পায়, তাহলে ছোটদের ক্ষেত্রে তা ১৫ শতাংশ হতে পারে। কারণ বড় গ্রহীতা ১০ শতাংশ মওকুফ পেলে তার হয়তো ১০০ কোটি টাকা বেঁচে যাবে, একজন কৃষক বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার হয়তো বাঁচবে ১০ হাজার বা বড়জোড় এক লাখ টাকা।

দুর্যোগে সর্বস্বান্ত হয় কৃষকরা, ভালো ফলনেও দাম পায় না তারা। কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট মামলা স্থগিত রেখে তাদের শূন্য বা নামমাত্র ডাউন-পেমেন্টে পুনঃ তফসিলের সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর। ‘ব্যাংকগুলো যাতে কৃষকদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা না করে সে ব্যাপারে আমি সচেষ্ট ছিলাম আমার সময়।’   

গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষকদের কাছে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ ৪০ হাজার ১১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছয় হাজার ৬৭১ কোটি, যা মোট ঋণের মাত্র ০.৭৩ শতাংশ। এ ঋণ আদায়ে অহরহ সার্টিফিকেট মামলা করে ব্যাংকগুলো।

‘কৃষকদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। উদার প্রণোদনা দিলে ঋণও আদায় হবে, কৃষকরাও বাঁচবে’ বললেন ড. আতিউর।

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top