ঘুরে আসুন টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়ি

S M Ashraful Azom
0
ঘুরে আসুন টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়ি
মহেলা জমিদার বাড়ি
সেবা ভ্রমন ডেস্ক: টাঙ্গাইলের মহেড়া জমিদার বাড়ির মত সুন্দর এবং যত্নে সংরক্ষিত জমিদার বাড়ি বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। টাঙ্গাইল সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে আট একর জায়গা জুড়ে মহেড়া জমিদার বাড়ি বিস্তৃত।

মহেড়া জমিদার বাড়ি প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অমূল্য নিদর্শন স্বরূপ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জমিদার বাড়ির সাথেই ছোট পার্ক, চিড়িয়াখানা, পিকনিক স্পট ও বোট রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে।

রাজধানী ঢাকার বেশ কাছে হওয়ায় সকালে রওনা দিলে এক দিনেই জমিদার বাড়ি থেকে ঘুরে আসা যায়। এই জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথেই রয়েছে বিশাল দুইটি সুরম্য গেট।

বিশাল তিনটি প্রধান ভবনের সাথে নায়েব সাহেবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর, দীঘি ও আরো তিনটি লজ রয়েছে। প্রবেশ পথের আগেই বিশাখা সাগর নামে একটি দীঘি আছে। মূল ভবনে পিছনের দিকে পাসরা পুকুর ও রানী পুকুর নামে আরো দুইটি পুকুর রয়েছে।

মহেরা জমিদার বাড়িতে দেখার মতো....

চৌধুরী লজঃ 

মূল ফটক দিয়ে জমিদার বাড়ি প্রবেশের পরেই চৌধুরী লজ দেখা যায়। গোলাপি রঙের ভবনটির পিলার গুলো রোমান স্থাপত্য শৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে। সুন্দর নকশাখচিত ভবনের ভেতরে রয়েছে ঢেউ খেলানো ছাদ। দোতলা এই ভবনের সামনে রয়েছে সুন্দর বাগান ও সবুজ মাঠ।

মহারাজ লজঃ

বাইজেনটাইন স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মহারাজ লজ ভবনের সামনে ৬ টি কলাম আছে। গোলাপি রঙের মহারাজ লজের সামনের সিঁড়ির বাঁকানো রেলিংটি ও ঝুলন্ত বারান্দা ভবনের শোভা বৃদ্ধি করেছে। ভবনটিতে মোট কক্ষ আছে ১২ টি, সামনে বাগান ও পেছনে একটি টেনিস কোর্ট রয়েছে। এই ভবনটি শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আনন্দ লজঃ

মহেরা জমিদার বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবন হচ্ছে আনন্দ লজ। নীল ও সাদা রঙের ভবনটির সামনে ৮ টি সুদৃশ্য কলাম রয়েছে। তিন তলা অবস্থিত ঝুলন্ত বারান্দা এ ভবনকে করেছে আরো দৃষ্টিনন্দন। আনন্দ লজের সামনে হরিণ, বাঘ ও পশু-পাখির মূর্তিসহ একটি চমৎকার বাগান আছে।

কালীচরণ লজঃ

 জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির শেষের দিকে নির্মিত কালীচরণ লজ অন্য ভবন থেকে বেশ আলাদা। ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষরের আদলে এই ভবনটি ইংরেজ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। অন্যোন্য স্থাপত্য শৈলীর জন্য বিকাল বেলা ভবনের ভেতর থেকে সুন্দর আলোর ঝলকানি দেখা যায়।

উপরের ভবনগুলো ছাড়াও মহেরা জমিদার বাড়িতে রয়েছে নায়েব ভবন, কাচারি ভবন ও রানী মহল।

 জমিদার বাড়িতে ঢুকতে দিতে টিকেটের মূল্য

মহেড়া জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করতে ৮০ টাকার প্রবেশ মূল্য প্রদান করতে হয়। আর বোট রাইডে চড়তে দরদাম করে নিন কারণ ছুটির দিনগুলোতে রাইডে চড়ার মূল্য অনেক বেশি বেড়ে যায়।

টাঙ্গাইল ঠিক আছে, কিন্তু কিভাবে যাবেন?

মহেড়া জমিদার বাড়ি দেখতে আপনাকে যেতে হবে টাঙ্গাইল জেলার নটিয়াপাড়া বাস স্ট্যান্ড। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগবে ২ থেকে ২.৫ ঘণ্টা। তবে এই ঢাকা টাঙ্গাইল রোডে প্রায়শই জ্যাম থাকে তাই সেইভাবে সময় হিসেব করে বের হলে ভালো।

ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিনিময়, ঝটিকা, ধলেশ্বরী ইত্যাদি বাস টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এই সমস্ত বাস ভাড়া লাগে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। পছন্দমত কোন বাসে চড়ে নাটিয়াপাড়া বাস ষ্ট্যান্ডে আসতে হবে। নাটিয়াপাড়ায় বাস থেকে নেমে সিএনজি, রিকশা বা বেবী টেক্সী যোগে মহেরাপাড়া পুলিশ প্রশিক্ষন কেন্দ্রে আসতে হবে। মহেরা জমিদার বাড়িটিই বর্তমানে পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

যদি মাহাখালী থেকে ১৬০ টাকা ভাড়ায় নিরালা বাসে চড়েন তবে ডুবাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে নামলে আপনার সুবিধা হবে। ডুবাইল থেকে সিএনজিতে মহেড়া জমিদার বাড়ি যেতে প্রতিজন ১৫ টাকা ভাড়া লাগে, আর যদি রিজার্ভ নিতে চান তবে ৭৫ টাকা ভাড়া লাগবে।

এছাড়া দেশের অন্য কোন জায়গা থেকে আসতে হলে আপনাকে যে কোন উপায়ে টাঙ্গাইল আসতে হবে। টাঙ্গাইল নটিয়াপাড়া এসে উপরে উল্লেখিত উপায়ে মহেড়া জমিদার বাড়ি ভ্রমণ করতে পারবেন।

এছাড়া ট্রেনে যেতে চাইলে একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে পারেন ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী কোন ট্রেন মহেরা স্টেশন স্টপেজ দেয়। আর উত্তরবঙ্গ থেকে আসার সময় জেনে নিবেন কোন ট্রেন মহেরা স্টেশন বা টাঙ্গাইল স্টেশন এ স্টপেজ দেয়। তাহলে চাইলে সেই সব ট্রেনে করেও যেতে পারবেন।

সেখানে কি থাকার ব্যবস্থা আছে?

চাইলে আপনি সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতেও পারবেন। প্রতি রাত থাকার জন্যে আপনাকে দিতে হবে ৩,০০০-১০,০০০ টাকা।

থাকলাম, কিন্তু খাবো কি? 

মহেরা পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একটি স্বল্প মূল্যের ক্যান্টিন রয়েছে। এখানে আগে অর্ডার দিলে আপনার পছন্দের মেনু অনুযায়ী খাবারও খেতে পারবেন।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ:

মহেরা জমিদার বাড়িতে পুলিশ ট্রেনিং একাডেমির কার্যক্রম চালু আছে তাই বাড়িটিতে অনুমতি নিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে হয়।


⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top