
সেবা ডেস্ক: স্ট্রোক শব্দটির সাথে আমরা মোটামুটি কম বেশি সবাই পরিচিত, প্রায় সময়ই অনেকে বলে থাকেন যে অমুকে হার্ট স্ট্রোক করেছেন, কিন্তু এটা একটা ভুল ধারণা। হার্টে স্ট্রোক হয়না, স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে বা ব্রেইনে। হার্টে হয় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক।
স্ট্রোক কি:
আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে আমরা স্ট্রোক বলি। আমাদের দেহের মোট রক্তের শতকরা মাত্র ২ ভাগ মস্তিষ্ক ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু মস্তিষ্কের কোষসমূহ অত্যন্ত সংবেদনশীল,কোন কারনে মস্তিস্কে অক্সিজেন বা গ্লুকোজ সরবরাহে সমস্যা হলে দ্রুত এই কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। মস্তিষ্কের ওই কোষগুলো শরীরের যেই অংশকে নিয়ন্ত্রণ করত ওই অংশ গুলো প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে।স্ট্রোকের প্রকার:
স্ট্রোক দুই ধরনের হতে পারে-
- ইসচেমিক স্ট্রোক (মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কোন রক্তনালীতে ব্লকের কারনে মস্তিষ্কের সেই অঞ্চলে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া)
- হেমোরেজিক স্ট্রোক (মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিড়ে রক্তক্ষরণ হওয়া)
স্ট্রোকের লক্ষণ:
মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ কিংবা আঞ্চলিকভাবে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া,এই দুই অবস্থাই স্ট্রোক এর আওতায় আসে।রোগীর দু'অবস্থাতেই প্রায় একই ধরনের উপসর্গ থাকতে পারে।তবে রোগীর অবস্থা কতটা খারাপ তা নির্ভর করে মস্তিষ্কের অঞ্চলসমূহের কোন এলাকায় রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলো,কতোটা এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হলো তার উপর।
সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা যায়ঃ
হঠাৎ কথা বলতে সমস্যা হওয়া,শরীরের যেকোন একপাশ অবশ লাগা বা অকেজো হওয়া,মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে যাওয়া,শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারা,মাথাব্যাথা করা,চোখে ঘোলা লাগা বা অন্ধকার লাগা এক জিনিস দুইটা দেখা ইত্যাদি।মস্তিষ্কের যে পাশ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তার বিপরীত পাশের দেহের অংশ প্যারালাইজড হয়।
স্ট্রোকের কারণ:
হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুকির কারণ গুলো মোটামুটি একই:
- উচ্চ রক্তচাপ
- রক্তে কোলেস্টেরলের বেশি মাত্রা
- ডায়াবেটিস
- ধুমপান
- অতিরিক্ত শারীরিক ওজন
- মদ্যপান
- স্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাস।
স্ট্রোক সাধারণত ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে।
স্ট্রোকের রোগ নির্ণয়:
- স্ট্রোক একটি অতি জরুরী অবস্থা।উপসর্গ ও শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াও স্ট্রোক হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কতগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।
- সিটি স্ক্যান : এখানে মস্তিস্কের 3D স্ক্যান করে দেখা হয়,হেমোরেজিক স্ট্রোক সিটি স্ক্যান করে ভালোভাবে নির্ণয় করা যায়।
- এমআরআই : এখানে চুম্বকক্ষেত্র তৈরী করে দেখা হয় মস্তিষ্কের কোন অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- আর্টেরিওগ্রাফী : মস্তিষ্কের রক্তনালির ভিতরে বিশেষ ডাই বা রঞ্জক প্রবেশ করিয়ে তারপর এক্সরে করে দেখা হয় রক্তনালির কোথাও কোন ব্লক আছে কিনা।
- সেরেব্রাল এনজিওগ্রাম :বমস্তিষ্কের রক্তনালির ভিতরে বিশেষ সূক্ষ ক্যামেরা ঢুকিয়ে সরাসরি দেখা হয় কোথাও কোন ব্লক আছে কিনা।
- ইকো কার্ডিওগ্রাফি: এখানে আল্ট্রা সাউন্ড ব্যবহার করে হৃদপিন্ডের একটা ছবি তুলে দেখা হয় কোনো জমাট রক্ত, বুদ বুদ কিংবা অন্যকিছু রক্তের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ করছে কিনা।
স্ট্রোকের ঝুকি কমানোর উপায়:
- নিয়মিত রক্তচাপ জানা এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- ধুমপান না করা।
- অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এবং চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়া।
- সতর্ক ভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- প্রতিদিন নিয়ম করে হাটা বা হালকা দৌড়ানো।
- দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা।
- মাদক না নেয়া , মদ্য পান না করা।
স্ট্রোকের চিকিৎসা:
কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন। রোগী যদি স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে আসে, তাহলে নির্দিষ্ট চিকিৎসা দিয়ে যে রক্তনালীটি বন্ধ হয়েছে তা খোলার চেষ্টা করা হয়। সে ক্ষেত্রে রক্তনালি যদি আবার আগের ক্ষেত্রে ফিরে আসে, সে ক্ষেত্রে আমরা বলি যে রোগী দ্রুত ভালো হয়ে যাবে। আর যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রোগী হাসপাতালে আসতে না পারে, যদি দেরি হয়ে যায়, তাহলে উদ্দেশ্য থাকে যেন স্ট্রোকের জন্য রোগীর কোনো ঝুঁকি না থাকে সেই ব্যবস্থা করা। রোগী যেন স্ট্রোকের পর ভালো থাকেন এবং আবার আগের কাজে ফিরে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়া হয়। নিয়মিত রোগীর ডায়াবেটিস ও প্রেসার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তার সঙ্গে রোগীর পুনর্বাসনের জন্য স্পিস থেরাপি, ফিজিওথেরাপি,বিহেভিয়ার থেরাপি এসব দেওয়া হয়। এগুলো দিয়ে চেষ্টা করা হয় যেন রোগী আগের অবস্থার কাছাকাছি ফিরে যেতে পারে।সবাই ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।