বিশ্বের তুলনাহীন ১০ থিয়েটার

S M Ashraful Azom
0
বিশ্বের তুলনাহীন ১০ থিয়েটার
সেবা ডেস্ক: বিশ্বে বেশ দৃষ্টিনন্দন এমন কিছু থিয়েটার রয়েছে, যেগুলোর সথে কোন থিয়েটারের কখনও তুলনা করা যায় না! এরমধ্যে কোনো কোনোটি আবার দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। আজ কথা হবে বিশ্বের সেরকমই ১০টি থিয়েটার নিয়ে।

ট্যাট্রো লা ফেনিচে

ট্যাট্রো লা ফেনিচে। এটি অবস্থিত ইতালির ভেনিসে। এটি দর্শনের দিক দিয়ে যেমন চমৎকার, তেমন ভঙ্গিতো আছেই, সঙ্গে এর ঐতিহাসিক গভীরতাটাও কিন্তু কম নয়। ভেনিসের বহুল জনপ্রিয় এই নাট্যশালাটি। এই থিয়েটারটি সর্বপ্রথম খোলা হয় ১৭৯২ সালে। এরপর থেকে সেখানে বিশ্বের নামজাদা সব গীতিকার, সুরকার যেমন- ভেরদি, রোজিনি, বেলিনি, দোনিযেত্তি এবং স্ট্রাভিন্সকির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে, ১৯৬৬ সালে অগ্নিকান্ডের মতো আরো বেশ কয়েকটি বিপর্যয়ের সাক্ষী হয়েও এখনো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে এই থিয়েটারটি। বর্তমানে ২২৩তম পর্বেও বেশ ভালো অবস্থানই দখল করে রেখেছে এই থিয়েটারটি।

সিবানে

সিবানে। এটি অস্ট্রিয়ার সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। জার্মান ভাষায় সিবানে কথাটির অর্থ হলো সমুদ্রের স্টেজ। নামটি অবশ্য এই থিয়েটারের সঙ্গে একেবারেই মানানসই কারণ থিয়েটারটি বাস্তবিকেই পানিতে ভেসে থাকে। ব্রিগেন ফেস্টিভ্যাল সর্বপ্রথম শুরু হয় লেক কনস্ট্যান্সে ১৯৪৬ সালে এবং ধীরে ধীরে ১৯৫০ সালে স্টেজ নির্মাণ করা হয়। সিবানে দ্য ম্যাজিক ফ্লুট থেকে শুরু করে ওয়েস্ট সাইড স্টোরির মতো নন্দিত কাজগুলো এখানে মঞ্চস্থ করা হয়েছে।

আরো মজার ব্যাপার হলো যে, প্রতিটি নাটক বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অনুযায়ী সেখানে নানান ধরণের মঞ্চ স্থাপন কর হয় এবং প্রতিটিই যেন পাল্লা দিয়ে নয়নাভিরাম এবং নতুনত্বের বার্তা নিয়ে আসে। স্থাপত্য শিল্পীরাও তাদের কারসাজি দেখানোর সুযোগ পান এতে।

দ্য উইন্টার গার্ডেন থিয়েটার 

দ্য উইন্টার গার্ডেন থিয়েটার। এটি কানাডার টরোন্টোতে অবস্থিত। এই থিয়েটারটি মূলত সকল দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। অবশ্য এই জনপ্রিয়তা পাওয়াটা যুক্তিসঙ্গতও বটে! কারণ, কানাডার এই রত্নটি দেখতে দারুণ, মানুষের মন আকর্ষণ করার মতই। এই থিয়েটারের দেয়ালগুলো হাতে আঁকা যা দেখে মনে হবে কোন বাগানে এসেছেন। এছাড়াও এই থিয়েটারের ওপরের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে ছাদ থেকে নিচের দিকে প্রকৃতপক্ষেই বীচ বৃক্ষের ডালপালা বা শাখা ঝুলানো আছে। প্রথমে একটি চিত্তাকর্ষক বিচিত্রানুষ্ঠান বা লোকসঙ্গীত হিসেবে এই থিয়েটারের যাত্রা শুরু হয়।

এরপর ১৯২৮ সালে যখন সবাই বিচিত্রানুষ্ঠানের চাইতে টক শো এর প্রতি অধিক মোহিত হওয়া শুরু করলো, তখনই এই থিয়েটারটি কোন এক কারণে বন্ধ হয়ে যায়। উইন্টার গার্ডেন থিয়েটারটি বহু দশক ধরে একই অবস্থায় পড়ে ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে ওন্টারিও হেরিটেজ ট্রাস্ট বেশ কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করে তা পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু করেন। দেয়ালের শিল্পকর্মগুলোর কোন রকম ক্ষতি সাধন এড়াতে কাঁচা রুটি দিয়ে পুরো জায়গাটি পরিষ্কার করা হয়। বলা বাহুল্য যে, পরিষ্কার খাতের এই খরচাপাতি মোটেও ভেস্তে যায়নি।

পালাউ ডি লা মিউজিকা ক্যাটালানা 

পালাউ ডি লা মিউজিকা ক্যাটালানা। এটি স্পেনের বার্সেলোনায় অবস্থিত। এই থিয়েটারটি মূলত কনসার্ট মিলনায়তনের পথ ধরে হাঁটতে থাকলেও এর প্রতিটি বাঁকে বাঁকে চোখে পড়বে রঙিন কাচ, টাইলস করা অথবা দামী মোজাইক এবং মার্বেলের তৈরি ভাস্কর্য। এটি ক্যাটালান আর্ট নুভাইউয়ের (স্পেনের ঐতিহাসিক মূল্যবোধ ভিত্তিক স্থাপত্য শিল্পকর্ম) একটি মারাত্মক শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় যা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের একমাত্র কনসার্টের স্থান হওয়ার অগ্রাধিকার লাভ করে।

পালাইস গার্নিয়ার

পালাইস গার্নিয়ার। এটি ফ্র্যান্সের প্যারিস শহরে অবস্থিত। এই নাট্যশালাতে গেলে সৌন্দর্য দেখেই আপনি পাগল হবেন নিশ্চিত। এর ছাদের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন, কতটা পরিশ্রমে সাজানো হয়েছে এই থিয়েটারটিকে। নতুন করে প্রস্তুত করা থিয়েটারগুলোর মধ্যে এটি একটি, পূর্বে ষাটের দশকের দিকে যার চিত্রাঙ্কনের কাজটি করেন মার্ক সিগাল।

এই থিয়েটারটিতে ঢুকলে ঐশ্বর্যমণ্ডিত ঝাড়বাতির চারপাশে বিভিন্ন জনপ্রিয় নাট্যশালা বা অপেরা হাউজের সম্মিলিত দৃশ্য চোখে পড়বে। এই ঝাড়বাতি ১৮৯৬ সালে একজন নির্মাণ শ্রমিকের ওপর পড়লে, তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনা থেকেই গ্যাস্টন ল্যারক্স তার দ্য ফ্যান্টম অব দ্য অপেরা লেখাটির জন্য অনুপ্রেরণা পান।

মিনাক থিয়েটার 

মিনাক থিয়েটার। এটি ইংল্যান্ডের পোর্তকার্নোয় অবস্থিত। মিনাক থিয়েটারটির আসন পাথরের তৈরি, দেখতে অনেক সুন্দর। কেউ যদি এক টিকিটে দুই শো দেখতে চান? তাহলে তাকে মিনাকে চলে যেতে হবে। যেখানে আপনি সরাসরি নাট্যশালা দেখতে পাবেন এবং কর্নওয়াল দেশীয় অভূতপূর্ব দৃশ্যও উপভোগ করতে পারবেন। আর সবচাইতে ভালোলাগে যখন সেখানে বৃষ্টিতে বসে থাকা যায়! মঞ্চে বসে পুরো ভিজে থাকার অনুভূতিটা কেমন? তা নিশ্চয়ই সেখানে বসেই উপলব্ধি করা যাবে। পোর্তকার্নো-র এরকম নয়নাভিরাম দৃশ্য থাকলে মখমলি সিট এবং ওপরে ছাদ ছাড়াও অবলীলায় থিয়েটারের আনন্দ অনুভব করা যায়।

বলশই থিয়েটার

বলশই থিয়েটার। এটি রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থিত। ১৭৭৬ সালে বহু ঘটনার শুরু হয়। ওইসময় আমেরিকা হয়ে যাচ্ছিলো ম্যারিকা, তখনই দ্বিতীয় ক্যাথরিন প্রিন্স পিয়োটর উরুসভকে একচেটিয়া দশ বছরের জন্য রাশিয়ার বিনোদন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে মঞ্জুরি দেন। পিয়োটর উরুসভ সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি প্রথম যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি গ্রহণ করবেন, এটি হচ্ছে একটি থিয়েটার নির্মাণ। আর এভাবেই ১৭৮০ সালে বলশই নির্মাণ করা হলো। এরপর থেকে এই থিয়েটারে বহুবার বিভিন্ন রকম পরিবর্তন আনা হয়।

গুয়াংঝো অপেরা হাউজ

গুয়াংঝো অপেরা হাউজ। এটি চায়নার গুয়াংঝো শহরে অবস্থিত। স্থাপত্য শিল্প নিয়ে যদি আপনার অঢেল জ্ঞান থাকে, তাও আপনার বুঝতে কষ্ট হবে এর শুরু থেকে শেষ। এটা এত নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, যা খোলা চোখে বুঝাই যাবে না। মূলত চায়নার অসাধারণ সব কাজের মধ্যে এটি অন্যতম। সেখানকার ঝিকিমিকি আলো এবং জলপ্রপাতের মতো স্তরগুলো আপনাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করাতে ব্যস্ত রাখবে।

তিতুর ম্যানওয়েল

তিতুর ম্যানওয়েল। এটি মাল্টার ভ্যালেতায় অবস্থিত। এতে ছয় বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের প্রবেশের অনুমতি নেই। তাই বুঝতেই পারছেন যে, জায়গাটি আসলেই কতোটা অভিনব! এরপরও যদি কোন মন্থর সন্দেহ থাকে তাহলে একই নামধারী বিবেচনা করতে পারেন, দ্য গ্র্যান্ডমাস্টার অ্যান্টন ম্যানোয়েল ডি ভিলেনা। এই থিয়েটারে মূলত আপনার আশানুরূপ অপেরা বা গীতিনাট্য এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সবটাই পাবেন। এছাড়া বিনোদনের অনেক উপকরণ খুঁজে পাবেন।

বালবোয়া থিয়েটার 

বালবোয়া থিয়েটার। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ডিয়েগো প্রদেশে অবস্থিত। বছরের ধারাবাহিকতায় এই থিয়েটারটি নানান রকমের রূপ ধারণ করেছে। প্রথমবার সিনেমা হল হিসেবে, পরেরবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নৌবাহিনীর হাউজিং হিসেবে এবং তৃতীয়বার ক্ষয়প্রাপ্ত খালি স্থান হিসেবে এটি পরিচিতি পায়। তবে এখন এই থিয়েটারটি বেশ সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো একটি জায়গা, যেখানে নার্ডিস্ট প্রোডাকাস্ট, ভেজি টেলস ও স্ক্রিমফেস্টস্‌ সরাসরি দেখানো হয়।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top