এক নজরে বারো দুয়ারী মসজিদের ইতিহাস..

S M Ashraful Azom
0
এক নজরে বারো দুয়ারী মসজিদের ইতিহাস..
সেবা ডেস্ক: আজ ইতিহাসের সন্ধানে বেড়িয়েছিলাম শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের বারো দুয়ারী মসজিদে। প্রাচীন আমলের এই মসজিদটিতে প্রবেশের জন্য রয়েছে বারোটি দরজা তাই ঐতিহাসিকভাবে এটি বারো দুয়ারী মসজিদ নামে খ্যাত। পবিত্র সালাতুল আছরের নামাজ এবং নফল ইবাদতের পরে মহান আল্লাহতায়ালার শানে মুনাজাত আদায় করে আমরা দুজন অনুসন্ধানী তালাশ করি এর পৌরাণিক কাহিনী। জনশ্রুতিতে বেরিয়ে আসে সে খবর যার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ-

অবস্থানঃ 

শেরপুর জেলা থেকে ৭ মাইল উত্তর পশ্চিমে শ্রীবরদী থানার পূর্বদিকে গড়জরিপা ইউনিয়নে এর অবস্থান।

 ঐতিহাসিক গুরুত্বঃ 

এককালে ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরাঞ্চলীয় ভূ-ভাগ শেরপুরসহ গারো পাহাড় সন্নিহিত এলাকার মানকেন্দ্র ছিল গড়জরিপা। কথিত আছে কামরুপের রাজার রাজ্য গড়জরিপার শাসক ছিলেন দলিপ সামন্ত। এখানে তার রাজধানী ছিল। রাজধানীর প্রধান দুর্গটি খুবই নিরাপদ ছিল বলেই মনে হয়। মাটির তৈরি দুর্গের ভেতরে ৭টি বেষ্টনী ছিল। বর্তমানে মাটির দুর্গের চিহ্ন না থাকলেও ধ্বংসাবশেষ এবং এখানে-ওখানে মাটির ঢিবি দেখতে পাওয়া যায়। অন্যমতে মুসলিম আমলেই দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। জরিপ শাহ্ ফকির ছিলেন গড়জরিপার শাসক। তার নামানুসারেই গড়জরিপা নাম হয়েছে। এখানে বাংলার সুলতান সাইফউদ্দিন ফিরোজ শাহের (১৪৮৬-৮৯) একটি শিলালিপি পাওয়া গেছে। তার আমলেই দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল বলে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে প্রমাণিত হয়।

নির্মানকালঃ 

বারদুয়ারী মসজিদ গড়জরিপার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এ মসজিদের নির্মাণ কাল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে একথা নিশ্চিত যে, মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হলেই এখানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। প্রাচীন এ মসজিদের বারোটি দরজা ছিল বলে এর নাম হয়েছে বারোদুয়ারী মসজিদ। ইংরেজ আমলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে এ মসজিদটি মাটি চাপা পড়লে অনেকদিন এর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ মসজিদটি মাটির নীচে বহু বছর চাপা পড়েছিল। তবে এ মসজিদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। চাপাপড়া মসজিদের উপর বিশাল এক বৃক্ষ দীর্ঘদিন শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে দাঁড়িয়েছিল। এ কারণে এর কোন হদিস পাওয়া যায়নি।

আবিস্কারঃ 

জামালপুরের শরীফপুর ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটির কুতুবগঞ্জ হাক্কানী দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল আজিজ অনেক বছর চেষ্টার পর এ মসজিদ আবিষ্কার করেন। ১৯৬০ সালের দিকে মওলানা আব্দুল আজিজ শেরপুর জেলার শ্রীবরদীতে ভূমি জরিপ কার্যালয়ে পিএলএ পদে চাকরি করতেন। এজন্য তিনি পিএলও মাওলানা নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি শ্রীবরদীতে চাকরির সুবাদে মাঝে- মধ্যে গড়জরিপা আসতেন বারোদুয়ারী মসজিদের খোঁজে। কয়েক যুগ পূর্বে এক ঘূর্ণিঝড়ে বটগাছটি ভেঙে উপড়ে পড়লে একটি মসজিদ দৃষ্টিগোচর হয়।

খননকার্যঃ 

এ সংবাদ পেয়ে আজিজুর হক স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বটগাছ কেটে ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করে মাটি খোঁড়া শুরু করেন। অবশেষে মাটির নীচে একটি মসজিদের ভগ্নাবশেষ দৃষ্টিগোচর হয় যা ছিল বহু প্রত্যাশিত বারোদুয়ারী মসজিদ। কিন্তু ১০ ফুট খনন কররে চারদিকে পানি ও কাদামাটি বের হয়। পরে খনন কাজ বন্ধ রাখা হয়। এর ফলে প্রাচীন মসজিদটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে বারোদুয়ারী মসজিদের সাবেক ভিটির উপর ১২টি দরজা বিশিষ্ট তিনটি গম্বুজসহ নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আগের মতোই নবনির্মিত বারোদুয়ারী মসজিদের সামনে ৯টি, দক্ষিণে ২টি উত্তরে ১টিসহ মোট ১২টি দরজা রয়েছে। অপরূপ নকশা ও কারুকার্য বারোদুয়ারী মসজিদের সামনে ৯টি, দক্ষিণে ২টি ও উত্তরে ১টিসহ মোট ১২টি দরজা রয়েছে। অপরূপ নকশা ও কারুকার্য খচিত মসজিদটি দেখতে খুবই সুদৃশ্য। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোক এ মসজিদটি দেখতে আসেন।

আধুনিকায়নঃ 

বর্তমানে মসজিদটির বর্ধিত অংশ অাধুনিকায়ন, দ্বিতল ভবন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। মসজিদের প্রবেশমুখে সংযোজন করা হয়েছে নব্য ডিজাইনের নান্দনিক ১২টি দরজা।

দর্শনীয় স্থানঃ 

শেরপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্য বারোদুয়ারী মসজিদের বেশ সুনাম রয়েছে। দূরদূরান্তের অনেক পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয় এই পবিত্র স্থানটি। বিশেষ করে শুক্রবার পবিত্র জুম্মার দিনে দূরদূরান্ত থেকে মানত্ কিংবা সিন্নি দিতে অাগমন ঘটে অসংখ্য মুসল্লির। এখানে সিন্নি রান্নাবান্নার আলাদা জায়গাও রয়েছে।

পরিশেষে বলা যায় সরকারিভাবে খননকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলে প্রাচীন আমলের অনেক ধ্বংসাবশেষ এবং এর প্রকৃত ইতিহাস উদ্ধার অনেকাংশে সহজ হত। বর্তমানে মসজিদটির নব্য অাধুনিকায়নের কাজ স্থবির রয়েছে। সরকারিভাবে পরিপূর্ণ সহযোগিতা পেলে মসজিদটি সম্পূর্নরূপে ঐতিহাসিক নিদর্শনের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top