
সেবা ডেস্ক: মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার ১৯০৫ সনে জামালপুরে জেলার, নিলক্ষিয়ায় জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম মরহুম মির্জা আসাদ উদ্দিন হায়দার এবং মাতা তৈবন নেছা। জন্মের ৬/৭ মাস বয়সে মা মারা য়ায়।
* ১৯১৬ সনে ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে ক্লাস থ্রীতে ভর্তি হন। এর আগে জমিদারি পারিবারিক পাঠসারায় শিক্ষা লাভ করেন। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে মেট্রিক পরীক্ষার আগেই স্কুল ছেড়ে আন্দোলনে নেমে পরেন। এবং পরবর্তীতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সহিত ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। অতঃপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত নিলক্ষিয়া এবং তার আশপাশের গ্রাম গুলোতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামুলক এবং তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদমর্যাদার অনেক জনসেবা মুলক কর্ম সম্পাদন করেন।
তন্মধোঃ
১। নাম করা খেলোয়ার ও সংগঠন হিসেবে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
২। গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করে এলাকার শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করায় নিয়োজিত ছিলেন।
৩।স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে নিলক্ষিয়া গ্রামের পার্শ্ববতী কুরখা ও ভোরশা দুই বৃহৎ বিলের মাঝে ৬ মাইল দীর্ঘ খাল খনণ করেন। যাতে কৃষক প্রজারা খাদ্য শর্ষ্য উৎপাদনে উপকৃত হয়।
যাহা সেই এলাকায় র্মিজা খালি নামে পরিচিত।
৪।ব্রিটিশ সরকার তাকে ইউনিয়ন বোর্ড, বেন্চ কোর্ট এবং স্পেশাল ঋণ শালিশী বোর্ডেও চেয়ারম্যান নিযুক্ত করিলে তিনি সুষ্ঠু ও সফলভাবে সেসব দায়িত্ব পালন করেন।
৫। নিজ গ্রাম নিলক্ষিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রুপজাহান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী।
৬। ১৯৩৯ সনে নিলক্ষিয়ায় নিজ প্রতিষ্ঠিত রুপজাহান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন।
৭। ১৯৪১ সনে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ হইতে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে আই,এ পাশ করেন।
ইতিমধো ব্রিটিশ সরকার তাকে শেরপুরের প্রথম শ্রেণীর ক্ষমতা প্রাপ্ত অনারেরী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেন।
৮। ১৯৪৩ সনে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বি,এ পরীক্ষার সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহাদুর্ভিক্ষে ত্রাণকার্যে সক্রিয় ভাবে জরিয়ে পড়েন এবং ত্রানকার্যের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব পালনের কারনে পরীক্ষায় একতরফা ভাবে তাহাকে অকৃতকার্য ঘোষনা করা হয়।
৯। ১৯৪৭ সনে বৃটিশ শাসনের অবসান হলে, ১৯৪৮ সনে তিনি জামালপুর শহরে চলে আসেন এবং আমলাপাড়াই বসবাস শুরু করেন।
১০। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের আইন অনুযায়ী জমিদারি প্রথা (প্রজাসত্ব আইন) উঠিয়া গেলে পাতিলাদহ স্টেট এ তাহার অংশ ( কড়িতলা, শিমোল চরা, নাপিতের চর, কুশলনগর, গোপালপুর ইত্যাদি মৌজা সমুহ) পরিত্যাগ করিয়া স্থায়ীভাবে জামালপুরের উন্নতির জন্য মনোনিবেশ করেন।
তিনি
১৯৫১ সনে প্রথম বারের মত জামালপুর হইতে নিজ প্রচেষ্টায় ও সম্পাদনায় নিজ প্রেস হইতে সাপ্তাহিক "তওফিক" পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন।জামালপুর শহরের রেল স্টেশনের নাম সিংহজানি জংশন হইতে জামালপুর টাউন জংশন নামে পরিবর্তন করনে সচেষ্ট হন। যার ফল শ্রুতিতে ১৯৫৪ সনের ১৪ই আগষ্ট সরকারি ঘোষনা অনুযায়ী জামালপুর টাউন জংশন নামকরন করা হয়।
১৯৫৩ সনে জামালপুর অরাজনৈতিক সাহিত্য সন্মেলনের জন্য গঠিত অভ্যর্থনা কমিটির সেক্রেটারী জেনারেল নিয়োজিত ছিলেন।
১৯৫৫ সনে জামালপুর সেন্ট্রাল-কো-অপারেটিভ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক হন।
জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন।
দেউরপাড়া চন্দ্রায়, রাজা হরিচন্দ্রের সুপ্রাচীন পতিত ব্যবহার অযোগ্য দিঘী ক্রয় করিয়া পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেন, এবং উহা পূর্ণ খনন করিয়া ব্যবহার উপযোগী করে মৎস্য চাষ জনপ্রিয় করার জন্য উদ্যোগী হন।
১৯৫৯ সনে দি জামালপুর কো-অপারেটিভ ইলেকট্রিক সাপ্লাই সোসাইটি লিঃ প্রতিষ্ঠা করেন, এবং জামালপুরে প্রথম বারের মত বিদ্যুৎ (ইলেকট্রিসিটি) প্রবর্তন করেন।
উক্ত সোসাইটির তিনি প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী ছিলেন।
জামালপুর প্রিপারেটরী মডেল প্রাইমারী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ( যা বর্তমানে জামালপুর হাই স্কুল)।
১৯৬০ সনে জামালপুর কে জেলা দাবিতে প্রথম বারের মত দাবি উত্থাপন করেন। এবং জামালপুর জেলা চই প্রতিষ্ঠার কমিটির সেক্রেটারী নিযুক্ত হন।
১৯৬২ সনে জামালপুর অন্ধ কল্যান সমিতি প্রতিষ্ঠা করে প্রথম বারের মত জামালপুরে বিনা পয়সাই চক্ষু চিকিৎসক ডাঃ টি আহমেদের নেতৃত্বে চক্ষু অপারেশনের ক্যাম্প করেন।
দেউরপারা চন্দ্রায় প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
দি জামালপুর কমার্শিয়াল ট্রেনিং কলেজ নামে জামালপুরে প্রথম টাইপিং, শর্টহ্যান্ড এবং টেলিগ্রাফী শিক্ষার প্রতিষ্ঠান স্থাপিত করেন।
১৯৬০ সন থেকে ১৯৬৫ সন পর্যন্ত তিনি জামালপুর পৌরসভার নির্বাচিত প্রধান নির্বাহী (ভাইস-চেয়ারম্যান) নির্বাচিত হন।
১৯৬৫ সনে তদানীন্তন পুর্ব পাকিস্তান কোঃ অপারেটিভ ইউনিয়ন লিঃ এর ডিরেক্টর হন।
জামালপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃ এর ডিরেক্টর হন।
১৯৭৬ সন হইতে ১৯৭৮ সন পর্যন্ত জামালপুরের প্রথম শ্রেণীর অনারেরী ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত ছিলেন।
ইহা ছাড়াও জামালপুর ওয়াটার ওয়ার্কস, পাবলিক হল, পাবলিক লাইব্রেরী, স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠায় প্রধান উদ্যেগী ছিলেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি বিবাহিতা। তার স্ত্রী মোসাম্মত আমেনা খাতুন রংপুরের জমিদার কন্যা।
তিনি ছিলেন ১ কন্যা ও ২ পুত্রের জনক।
সন্তানদের পরিচিতিঃ
কন্যা মরহুমা আন্জুমান আরা জামান ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম,এ ডিগ্রিধারী। তার জামাতা ডাঃ এফ জামান পুর্ব পাকিস্তানের প্রথম গ্রেজুয়েট দন্ত চিকিৎসক।১ম পুত্র মরহুম ডাঃ মির্জা আলি হায়দার। প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল।
২য় পুত্র বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি।
জনাব মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার ১৯৮৫ সনের ১০ই জুন ঢাকায় তাহার কন্যা বাড়ীতে ৮০ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন।
পরিশেষে আমরা এই মহান মানুষটির বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা কর
বকশীগঞ্জের কৃতিসন্তান: চলবে..
ত:সূ:-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।