
সেবা ডেস্ক: আজ এশার নামাজের পর লাইলাতুল কদরের রাতে (সর্বাধিক সম্ভাবনাময়) ২৭তম রোজার তারাবীহ নামাজে পবিত্র কোরআনের শেষ পারা (৩০তম পারা) তেলাওয়াত সম্পন্ন করা হবে।
রোজা এমন এক ইবাদত, যার জন্য শারীরিক, মানসিক এমনকি আর্থিক আত্মত্যাগের প্রয়োজন হয়। স্বভাবতই এই ইবাদতের প্রতিদানও অতুলনীয়।
আজ ষড়বিংশতিতম রমজান। নাজাত দশকের পঞ্চম দিন শেষ হল। দেখতে দেখতে শবে কদর এর রাত চলে এসেছে। ২৬ তম তারাবিতে ২৯ পারা শেষ হল এবং সেই সাথে সুরা মূলক, সুরা কলম, সুরা হাককা, সুরা মা’আরিজ, সুরা নুহ, সুরা জিন, সুরা মুজ্জাম্মিল, সুরা মুদ দাস সির, সুরা কিয়ামা, সুরা দাহর ও সুরা মুরসালাত পর্যন্ত পড়া হল।
দুনিয়াতে যারা কষ্ট স্বীকার করে রোজা রাখবে আখেরাতের দিন তাদের জন্য আল্লাহর কাছে রোজা সুপারিশ করবে। পবিত্র কোরআনও সুপারিশ করবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, রোজা এবং কোরআন (আখেরাতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। বায়হাকি।
শবে কদর এর অর্থ কি?
আরবিতে লাইলাতুল কদরের অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ রাত, ভাগ্য রজনী বা মহিমান্বিত রজনী। আমাদের দেশের মানুষের কাছে এটি শবে কদর নামেই সমধিক পরিচিত। এ রাতটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।এ রাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সূরা কদর নামে স্বতন্ত্র একটি সূরাও আছে। সুরাটির সারসংক্ষেপ হলো: ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কি জানো? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।
’
হজরত আনাছ (রা.) হতে বর্ণিত হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন: শবে কদর একমাত্র আমার উম্মতকে দেওয়া হয়েছে, অন্য কোনো উম্মতকে নয়। (মুসলিম, দুররে মানছূরে)
শবে কদর কিভাবে আমরা পেলাম?
পূর্ববর্তী উম্মতগণ দীর্ঘায়ু হওয়ার কারণে বেশি বেশি ইবাদত করতে পারতেন। আখেরি নবীর উম্মত স্বল্পায়ু হওয়ার কারণে বেশি ইবাদত হতে বঞ্চিত ছিল। তাই আল্লাহ পাক দয়া করে এই রাতটি উম্মাতে মুহাম্মদিকে উপহার দিলেন।
অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, মহানবী (সা.) একদিন বনী ইসরাইলের এক ব্যক্তির হাজার মাস জিহাদে কাটানোর কথা সাহাবাদের নিকট উল্লেখ করেন, এতে সাহাবায়ে কেরামের ঈর্ষা হয়। তখন আল্লাহ রব্বুল আলামিন সূরা কদর নাজিলের মাধ্যমে শবে কদর দান করে তাঁদের সান্ত্বনা দেন।
সূরা কদরের ৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যার অর্থ হলো, এ রাতের ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের সমতুল্য।
রাসুল (সা.) বলেন: তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় তারিখে শবে কদর খোঁজ করো। (বুখারি)।
যদি কোনো ভাগ্যবানের একটি রাতও নছিব হয়ে যায়, আর এ রাতটি ইবাদতে কাটায়, তবে যেন ৮৩ বছর ৪ মাসের অধিক কাল ইবাদতের ছওয়াব পাবে।
হুজুর পাক (সা.) বনী ইসরাঈলের চার নবী আইয়ূব (আ.), যাকারিয়া (আ.), হিযকিল (আ.), ইউশা (আ.)-এর আলোচনা করলেন। তাঁরা একেকজন ৮০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং এক পলকের জন্যও আল্লাহর নাফরমানি করেননি। সাহাবাগণ আশ্চর্য হলে তখন হজরত জিবরাইল (আ.) উপস্থিত হন এবং সূরা কদর শোনান। উম্মাতে মুহাম্মদির জন্য এটি আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিয়ামত। এ রাত আল্লাহরই দান, আর এতে আমল করাও তাঁরই তাওফিকে লাভ হয়ে থাকে।
শবে কদরের কখন হতে পারে?
এই রাত নির্ধারণের ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে: একদা নবী করিম (সা.) ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদের দিকে আসছিলেন, পথে দেখলেন দুজন লোক ঝগড়া করছে; তিনি বিমর্ষ হলেন। মসজিদে এসে সাহাবিদের বললেন, আমাকে শবে কদরের তারিখ জানানো হয়েছিল। আমি আসছিলাম তোমাদের তা জানাতে; কিন্তু দুই ব্যক্তির ঝগড়ার কারণে আমি তা ভুলে গেছি।তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোয়, অর্থাৎ
- বিশ তারিখ দিবাগত (একুশ তারিখের রাত),
- বাইশ তারিখ দিবাগত (তেইশ তারিখের রাত),
- চব্বিশ তারিখ দিবাগত (পঁচিশ তারিখের রাত),
- ছাব্বিশ তারিখ দিবাগত (সাতাশ তারিখের রাত),
- আটাশ তারিখ দিবাগত (উনত্রিশ তারিখের রাত) শবে কদর সন্ধান করো। (মুসলিম)।
বুজুর্গানদের অনেকেই ছাব্বিশ তারিখ দিবাগত (সাতাশ তারিখের) রাতকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিরাপদ পন্থা হলো ইতিকাফ করা।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।