মিন্নি এক্সক্লুসিভ প্রকাশ্যে হতবাক সবাই

S M Ashraful Azom
0
মিন্নি এক্সক্লুসিভ প্রকাশ্যে হতবাক সবাই
সেবা ডেস্ক: বরগুনা সদরে চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার তার স্ত্রী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সেই জবানবন্দি এখন প্রকাশ্যে। কিন্তু কীভাবে গোপান এই জবানবন্দি প্রকাশ্যে এলো এ নিয়ে চলছে ধোঁয়াশা।

এর আগে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেছিলেন, মিন্নি হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত। আদালতে মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার আগেই তার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে খুনের পরিকল্পনায় মিন্নির জড়িত থাকার কথা পুলিশ সুপার বলেছিলেন।

এরপর পুলিশ সুপারের কাছে সাংবাদিকরা মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তাধীন মামলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রকাশের সুযোগ নেই। যদি প্রকাশ পায় তাহলে মামলার তদন্তে সমস্যার সৃষ্টি হবে।

অথচ ২২ জুলাই একটি দৈনিক মিন্নির জবানবন্দি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তারা কিভাবে তথ্য পেল? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কপি পুলিশের পাশাপাশি আদালতে রক্ষিত থাকে। পুলিশের কোনো কর্মকর্তা ওই জবানবন্দির কপি কাউকে সরবরাহ করেননি। এমনকি ওই পত্রিকাটি কোথা থেকে জবানবন্দির কপি পেয়েছে তাও তিনি জানেন না।

প্রকাশ্যে আশা সেই জবানবন্দিতে মিন্নি বলেছেন- একটি গোপন মুঠোফোন নম্বরে নয়ন বন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিফাতকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন মিন্নি। ই নম্বরে শুধু নয়ন বন্ডের সঙ্গেই কথা বলতেন তিনি। মুঠোফোন নম্বরটি ক্রসফায়ারে নিহত নয়নের মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এমনকি রিফাত হত্যা হওয়ার পরও ওই নম্বরে নয়নের সঙ্গে মিন্নির দীর্ঘ সময় ধরে ফোনালাপ হয়। হত্যার পর পলাতক থাকা নয়নকে মিন্নি বলেন, ‘তুমি তো রিফাতরে কোপাইয়া মাইরা ফালাইছ। এখন তো তুমি ফাঁসির আসামি হইবা।’ হত্যার ঘটনার আগে-পরে এসব কথাবার্তার ভয়েস রেকর্ড ও কললিস্ট সিডি আকারে মামলার নথিতে সংযুক্ত করা হয়েছে।

১৯ জুলাই বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলাম গাজীর খাসকামরায় এ জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। খাসকামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডকালে বিচারক ও মিন্নি ছাড়া আর কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আড়াই পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে রিফাত হত্যার বিবরণ দেন মিন্নি। পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র ২১ জুলাই গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিন্নি বলেন, ছয় লাখ টাকা কাবিনে ২০১৮ সালের অক্টোবরের ১৫ তারিখে নয়ন বল্ডের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। নয়ন বন্ডের মা সাহিদা বেগমসহ অনেকেই এই বিয়ের বিষয়টি জানতেন। কিন্তু মিন্নি বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখে পরে রিফাত শরীফকে বিয়ে করেন। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়ন বন্ডের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। কলেজে গিয়ে কলেজের দেয়ালের নিচ দিয়ে তিনি নয়নদের বাড়িতে প্রায়ই যেতেন।

তিনি আরো মিন্নি বলেন, নয়নের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েও পারেননি। কারণ মিন্নির একটি ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও নয়নের কাছে ছিল।

এছাড়া চলতি বছরের ০৩ জুন নয়ন বন্ড গ্রুপের সদস্য হেলালের মুঠোফোন সেট জোর করে নিয়ে যায় রিফাত শরীফ। এ নিয়ে নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাতের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নয়ন বন্ড মিন্নিকে বলেন, ‘রিফাতকে ফোন ফিরিয়ে দিতে বল। না হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। হত্যার ঘটনার দুদিন আগে রিফাতকে মিন্নি বলেন, তুমি হেলালের ফোন ফেরত দাও।’ একথা শুনে রিফাত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। নয়নের সঙ্গে মিন্নির যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চেয়ে মিন্নিকে প্রচণ্ড মারধরও করে রিফাত। এতে মিন্নি রিফাতের ওপর ক্ষুব্ধ হন।

পরদিন নয়নের কাছে রিফাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন এবং শিক্ষা দিতে বলেন। এরপর নয়ন তাকে শিখিয়ে দেন, কোথায় কিভাবে রিফাতকে নিয়ে উপস্থিত হতে হবে। কথা অনুযায়ী মিন্নি ঘটনার দিন রিফাতকে কলেজে এসে তাকে নিয়ে যেতে বলেন। রিফাত এলে তাকে সঙ্গে নিয়ে কলেজ থেকে বের হন মিন্নি। কিন্তু তখনও নয়ন বন্ডের লোকজন প্রস্তুত না হওয়ায় মিন্নি গোপন একটি ফোন নম্বর দিয়ে নয়ন বন্ডের নম্বরে ফোন করে বলেন, ‘তোমার পোলাপান কই।’ এরপর নয়ন বন্ডের ছেলেরা আসার কিছুক্ষণ পরই মিন্নি রিফাতকে সঙ্গে নিয়ে কলেজ থেকে বের হন। এ সময় নয়ন বন্ডের সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে ঘিরে ধরে। প্রথমে কিল-ঘুষি দেওয়ার পর এলোপাতাড়ি কোপানো শুরু করে।

প্রসঙ্গত, বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top