চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী, তোমায় স্যালুট

S M Ashraful Azom
0
চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী, তোমায় স্যালুট
সেবা ডেস্ক: সারাদেশেই তাঁর চট্টগ্রামের জহুর আহমদ এই একনামেই পরিচয়। চট্টগ্রাম নামের সাথে মিলে মিশে একাকার এমন পরিচয়ে পরিচিত আরেকজন মানুষ হলেন চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন চৌধুরী। জহুর আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, পথিকৃৎ শ্রমিক নেতা, ভাষাসৈনিক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য। কিন্তু এসব পরিচয় একটি সূত্রে গাঁথা, সেটি হলো রাজনীতি।

রাজনীতির প্রতি তিনি এতই সমর্পিত ছিলেন যে পরিবারের কথাও তাঁর মনে থাকত না। যেসব কর্মী রাজনীতির সূত্রে তাঁর কাছাকাছি আসতেন, তাঁদের লেখাপড়া, ভালোমন্দ, নানাদিকে তীক্ষ দৃষ্টি রাখতেন।বর্তমানকালের নেতাদের চরিত্রে এমনটি ভাবতেই পারা যায়না  এই নিঃস্বার্থ মনোভাবের পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। মানুষ তাঁকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসেছে, সমর্থন দিয়েছে।

১৯৫৪ সালের ঘটনা, যেবার হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্ট পূর্ব বাংলার মাটি থেকে মুসলিম লীগের নাম-নিশানা প্রায় মুছে ফেলেছিল। জহুর আহমদ চৌধুরী সে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন যুক্তফ্রন্টের টিকিটে। প্রতিদ্বন্দ্বী সেই সময়ের চট্টগ্রামের শীর্ষ ধনী ও প্রভাবশালী সমাজপতি রেয়াজউদ্দিন বাজারের মালিক শেখ রফিউদ্দিন সিদ্দিকী। জহুর আহমদ চৌধুরীও তাঁকে খুবই সম্মান করতেন। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এটা ছিল অসম লড়াই। তবু এই অসম লড়াইয়ে জয়ী হলেন জহুর আহমদ চৌধুরী। এই ঘটনা কতখানি গুরুত্ববাহী তা বোঝা যায় সে সময়ের সংবাদপত্র দেখলে। কলকাতার বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক স্টেটসম্যান সম্পাদকীয় পর্যন্ত প্রকাশ করে। তাতে মন্তব্য করা হয়, জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে রফিউদ্দিন সিদ্দিকীর এই পরাজয়, ‘মক্ষিকার কাছে হস্তীর পরাজয়ের সমতুল্য’। জহুর আহমদ চৌধুরী দেশ ভাগের পর কলকাতা থেকে প্রথমে ঢাকা, তারপর জন্মস্থান চট্টগ্রামে এসে ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি চালক ও দোকান কর্মচারীদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এভাবে ধীরে  ধীরে  জনসম্পৃক্ত হন তিনি। তারপর কর্ণফুলীর পানি যতই গড়িয়েছে জহুর আহমদ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপত্তি ততই বেড়েছে। মৃত্যুর আগেও তিনি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণমন্ত্রী।

জহুর আহমদ চৌধুরী ১৯৪৯ সাল থেকে অর্থাৎ  আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে এ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রামে দলকে সুদৃঢ় ভিত্তি দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সে অবস্থায় ১ জুলাই ১৯৭৪ সালে ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। জহুর আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে প্রদত্ত শোক বিবৃতিতে সংসদ নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের শাসকদের অত্যাচার-নির্যাতন সইতে হয়েছে। জহুর আহমদ চৌধুরীও আইয়ুব—মোনায়েমের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। তাঁকে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে বদলি করে করে হয়রানি ও নির্যাতন চালানো হয়। সিলেট জেলে অমানুষিক নির্যাতন চালানোর ফলে তাঁর শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়।

জহুর আহমদ চৌধুরীর জীবনের সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তর সালের ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণার পর, চট্টগ্রামে জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে পাঠিয়েছিলেন দেশে-বিদেশে প্রচারের জন্য। পরবর্তীকালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা প্রচার করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে আগরতলায় অবস্থান নিয়ে জহুর আহমদ চৌধুরী মুজিব নগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে গোটা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি আগরতলা গিয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের সংবাদ বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশের পক্ষে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার আহ্বান জানান। আজ তাঁর ৪৫ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে গভীরভাবে স্মরন করছি।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top