সেবা ডেস্ক: আমরা সাধারণত বসবাসের জন্য বাড়ি নির্মাণ করি। কিন্তু অনেকেই ব্যক্তিগত কীর্তি স্থাপন অর্থাৎ বিলাসবহুলভাবে বসবাসের জন্য, আবার কেউ কেউ স্থাপন করে ঐতিহাসিকভাবে কোনো রাজ্য বা দেশ পরিচালনার স্বার্থে। চলুন জেনে আসি এমন কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি বা প্রাসাদ সম্পর্কে, যেগুলো নির্মাণে খরচ হয়েছে কোটি কোটি টাকা।
নিউইয়র্কের ফেয়ার ফিল্ডস পন্ডস: নিউইয়র্কে ৬৩ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই বিশাল বাড়িটি। যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের রেইনকো গ্রুপের কর্ণধার ইরা রেনোট এই বাড়িটির মালিক। ১৯৯৯ সালে বাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল, তবে প্রতিবেশীদের অভিযোগের কারণে ২০০৪ সালের আগ পর্যন্ত তিনি বাড়িতে উঠতে পারেননি। প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেছিলো এক লাখ দশ ফিটের এই বাড়িটি তাদের চলাচল এবং স্বাভাবিক পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে প্রতিবেশীদের মামলাটি খারিজ হয়ে যাবার পর বাড়িটির মালিক নির্মাণ কাজ শেষ করেন। তারপর থেকে নিউইয়র্কে সাউদার্ন টন এলাকায় ২০ হাজার স্কয়ার ফিটের উপরে কোনো বাড়ি নির্মাণ করার অনুমোদন নেই। ফেয়ার ফিল্ডস পন্ডস নামের এই বিশাল বাড়িটিতে রয়েছে ২৯ টি বেডরুম, ৩৯ টি বাথরুম, নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা, তিনটি সুইমিংপুল, একটি প্রার্থনা ঘর, দুটি উঠান, একটি কমলা বাগান, ১৬৪ সিটের হোম থিয়েটার, বাস্কেটবল কোর্ট এবং টেনিস কোর্ট। এছাড়াও বাড়িটিতে দেড় লাখ ডলার খরচ করে একটি হট টাব তৈরি করা হয়েছে। বাড়িটির ডাইনিং রুম ৯১ ফুট লম্বা। প্রায় আড়াইশো মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এই বাড়িটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান বাড়িগুলোর একটি। এবং সারা বিশ্বে তার অবস্থান পঞ্চম।
ফ্রান্সের ভিলালিও পইলা: রুশ ধনকুবের মিগ্যাল প্রোগোরভ ২০০৮ সালে যখন বাড়িটি কেনার চেষ্টা করেন তখন এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ কোটি ইউরো। ১৯০২ সালে বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপোর্ড বাড়িটি তৈরি করেছিলেন, পরে তার এক প্রেমিকাকে বাড়িটি উপহার হিসেবে দেন। ১৯৮৮ সালে এক লেবানিজ ব্যাংকার এডমন্ড সাফরা বাড়িটি কিনে নেন। ১৯৯৯ সালে তার মৃত্যুর পর স্ত্রী লিলি সাফরা বাড়িটির মালিক হন। ৫০ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত এই বাড়িটিতে ১১টি বেডরুম এবং ১৪টি বাথরুম রয়েছে। একটি বাণিজ্যিক গ্রীন হাউজ, আউটডোর কিচেন, সুইমিং পুল ছাড়াও বাড়িটিতে রয়েছে একটি হেলিপ্যাড। বিখ্যাত দুটি মুভিতে ব্যবহার করা হয়েছিল এই বাড়িটি।
যুক্তরাজ্যের রুটলেন্ড গেইট ম্যানসন: লন্ডনের নার্স ব্রিজের হাইডি পার্ক এলাকায় রুটলেন্ড ম্যানসন নামে ৪টি বাড়ি ছিলো। পরবর্তীতে চারটি বাড়িকে একটি একক বাড়ি হিসেবে নির্মাণ করা হয়। ৬০ হাজার স্কয়ার ফুটের এই বাড়িটিতে ৪৫ টি বেড রুম রয়েছে। এছাড়াও সাত তলা এই বাড়িটিতে রয়েছে একটি সুইমিং পুল এবং আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং। বাড়িটির ভেতরে সোনার পাত দিয়ে অভ্যন্তরীণ নকশা করা হয়েছে। বাড়িতে প্রত্যেকটি জানালা তৈরি করা হয়েছে বুলেটপ্রুফ গ্লাস দিয়ে। ১৯৮২ সালে বাড়িটির মালিকানা ছিলো ইয়ং কর্পোরেশনের হাতে। ২০০৫ সালে লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ব্যবসায়ী রাফিক হারিরি নিহত হবার আগ পর্যন্ত বাড়িটি তার লন্ডনের বাসভবন ছিলো। মৃত্যুর পর তার ব্যবসায়িক অংশীদার ও সৌদি যুবরাজ সুলতান বিন আব্দুল আজিজকে বাড়িটি উপহার হিসেবে দেয়া হয়। রাজপুত্র সুলতান ২০১১ সালে মারা যাওয়ার পরের বছর বাড়িটি বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে বাড়িটি বিক্রি না হওয়ায় সৌদি মালিক সেখানে অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করে।
ভারতের আন্তিলিয়া: ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি ১০০ কোটি ডলার খরচ করে তার স্বপ্নের বাড়ি আন্তিলিয়া নির্মাণ করেছিলেন। মুকেশ আম্বানির এই ব্যক্তিগত বাসভবনটি দক্ষিণ মুম্বাইয়ে অবস্থিত। চার লাখ স্কয়ার ফিট আয়তনের এই বাড়িটিতে ১৭৮৮টি রুম ও ২৫৭ টি বাথরুম রয়েছে। বিশাল এই বাড়িটি দেখভালের জন্য রয়েছে ৬০০ জন তত্ত্বাবধায়ক। বাড়িটির নিচে ছয় তলা বিশিষ্ট পার্কিং এরিয়া রয়েছে আর। এই জায়গাটি শুধুমাত্র মুকেশ আম্বানির পছন্দের গাড়ি রাখার জন্যই বরাদ্দকৃত। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি এই বাড়িতে ৫০ সিটের একটি হোম থিয়েটার রয়েছে। অত্যাধুনিক এই বাড়িটি রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে।
ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্যালেস: ইংল্যান্ডের রানীর ব্যক্তিগত বাসভবনের নাম বাকিংহাম প্যালেস। এডওয়ার্ড ব্লোরের দ্বারা শুরু হওয়া এই প্রাসাদের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৮৫০ সালে। এটির পুনঃসংস্করণ করা হয় ১৯১৩ সালে স্যার এস্টন ওয়েবের দ্বারা। এটি মূলত বাকিংহাম হাউস নামে পরিচিত ছিল। এটি ডিউক অফ বাকিংহামের জন্য একটি বিরাট টাউনহাউস আকারে ১৭০৩ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। এবং পরবর্তীতে এটি প্রায় দেড়শ বছর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হিসেবে ছিল।অতঃপর রাজা তৃতীয় জর্জ তার রানী চার্লটের জন্য ১৭৬১ সালে বাড়িটি কিনে নেন এবং তখন বাড়িটির নাম হয় কুইন্স হাউস। উনিশ শতকে এই বাকিংহাম প্যালেসকে সবিস্তারে আরো বাড়ানো হয় এডওয়ার্ড ব্লোর এবং জন ন্যাশের তত্ত্বাবধানে। এই প্রাসাদটিতে ৭৭৫ টি রুম ৫২টি রাজকীয় অতিথিকক্ষসহ ১৯৮ টি স্টাফরুম, ৯২ টি দপ্তর এবং ৭৮ বাথরুম। পুরো লন্ডন শহরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাগান এই বাকিংহাম প্যালেসেই রয়েছে। তাই এই রাজপ্রাসাদটি শুধু সবচেয়ে দামি বাড়ি নয় সবচেয়ে বেশি কক্ষবিশিষ্ট ভবনও। নিশ্চিত ভাবে এটি বিক্রির জন্য না হলেও এই বাড়িটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে দেড়শ কোটি মার্কিন ডলার। ১৯৫২ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই বাড়িটির বর্তমান মালিক।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।