![]() |
হেলেন জুয়েট |
১৮৩৬ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে হেলেন জুয়েট নৃশংসভাবে খুন হন। হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহের দৃষ্টি পড়ে তার অন্যতম খদ্দের রিচার্ড রবিনসনের দিকে। তখনকার খবরের কাগজগুলো এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঠকের মেজাজ উসকে দেবার মতো সংবাদ ছাপতে থাকে। হেলেন জুয়েট ও রিচার্ড রবিনসন সংবাদ জগতে একরকম অখণ্ড মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ান।
![]() |
হেলেনের পড়ে থাকা লাশ |
প্রসঙ্গক্রমে রিচার্ড রবিনসনের কথা একটু বলে নিলে ভালো হয়। ১৮১৮ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রলোক সুশিক্ষিত ছিলেন। কাজের সন্ধানে নিউইয়র্কে এসে চাকরি নেন ম্যানহাটনের এক বড় দোকানে। তখন তার বয়স বেশি নয়, নিতান্ত টিনএজার। ‘ফ্রাঙ্ক রিভার্স’ নাম নিয়ে সে পতিতালয়ে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করে। নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুসারে, ১৭ বছর বয়সে ম্যানহাটন থিয়েটারের বাইরে কোনো এক স্থানীয় গুণ্ডার সঙ্গে মারপিট করার পর, আহত অবস্থায় হেলেন জুয়েটের ঘরে ঢুকে পড়েন রিচার্ড। হেলেন জুয়েট এই টিনএজারের সাহস ও উদ্যম দেখে কিছুটা মুগ্ধ হয়। দিয়েছিলেন কলিং কার্ডও।
![]() |
পতিতালয় |
তখনকার দিনে দৈনিক পত্রিকায় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির আকর্ষণীয় খবরকেই মূলত ফলাও করে প্রচার করা হতো। স্থানীয় অপরাধ ও হত্যাকাণ্ডের খবর সেই তুলনায় কমই আলোচিত হতো। কিন্তু হেলেন জুয়েট হত্যাকাণ্ড এই ধারা কার্যত বদলের শুরু করে। হেলেন জুয়েটের এই কাহিনী রাতারাতি সংবাদমাধ্যমের খোরাকে পরিণত হলো। সাংবাদিকরা এই হত্যাকাণ্ডকে চটকদার উপায়ে উপস্থাপন করতে লাগলেন। এদের মধ্যে পরিষ্কার দুটি ভাগ স্পষ্ট হয়ে উঠলো অল্পদিনেই।
![]() |
রিচার্ড রবিনসন |
এসব পত্রিকায় এই খুনের ঘটনায় রিচার্ড রবিনসনের মতো প্রতিষ্ঠিত নাগরিকের জড়িত থাকা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। নরনারীর সম্পর্কের কিছু অন্ধকার দিকের প্রতি নির্দেশ করার মাধ্যমে তারা বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থার ত্রুটি তুলে ধরেন। সান পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, রিচার্ডের জড়িত থাকার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই বললেই চলে। বেশ কিছু পত্রিকা এর বিরোধিতা করে।
নিউইয়র্ক হেরাল্ড পত্রিকায় হেলেনের প্রকৃত খুনীর লেখা এক চিঠির হদিস পাওয়ার সংবাদ ছাপা হয়। এই খবর প্রচারের পর পত্রিকার প্রচার সংখ্যা রাতারাতি ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার হয়ে যায়। পরে অবশ্য জানা গিয়েছিল, পত্রিকার সম্পাদক গর্ডন বেনেট ৫০ ডলার ঘুষের মাধ্যমে পরিচিত মহলের সাহায্যে কাজটি করেছিলেন। রিচার্ড রবিনসনকে নির্দোষ হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য গর্ডন বেনেট, পতিতালয় ও এর সঙ্গে জড়িত অন্ধকার জগতের কথা লিখতে লাগলেন। এছাড়া আইনি ব্যবস্থায় থাকা ত্রুটি ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কথাও লেখা হচ্ছিল।
উল্লেখ্য, আদালতের সুস্পষ্ট রায়ের পর রিচার্ডের কিছু চিঠি পাওয়া গিয়েছিল, যাতে তার জড়িত থাকার পুরোক্ষ কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু ততদিনে রিচার্ড, নিউইয়র্ক ছেড়ে সুদূর টেক্সাসে গা ঢাকা দিয়েছিল। খবরটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ক্রমে বেড়েই যাচ্ছিল। সে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছিল খবরের কাগজের কাটতি। সমাজের নিচুতলা, ভদ্রগোষ্ঠী ও এদের পারষ্পরিক গোপন লেনদেন নিয়ে চমকপ্রদ সম্পাদকীয় ছাপা হতে লাগলো। যা আগে মার্কিন ও অন্যান্য পত্রিকায় কখনো এত গুরুত্ব পেতো না। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের চেয়ে চমক দেওয়া খবর ছেপে প্রচার বাড়ানো হতো।
![]() |
আদালতে হেলেন জুয়েট মার্ডারের বিচারকালনি সময় |
মার্কিন ইতিহাসে অষ্টাদশ শতক বেশ উল্লেখযোগ্য সময়। গৃহযুদ্ধের বিভীষিকা ও নতুন ভূখণ্ড দখলের পাশাপাশি, সামাজিক অস্থিরতায় আচ্ছন্ন ছিল ওই সময়ের মার্কিন সমাজ। ফলে বেড়েই চলছিল অপরাধের প্রবণতা। তবে সংবাদের পাতায় সেসব অপরাধ, বিশেষ গুরুত্ব পেতো না। হেলেন জুয়েট হত্যাকাণ্ড মার্কিন সংবাদ জগতের মানচিত্র বদলে দিয়েছিল।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।