কূপ খননের অপেক্ষায় জামালপুরের মাদারগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র

S M Ashraful Azom
0
কূপ খননের অপেক্ষায় জামালপুরের মাদারগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র
সেবা ডেস্ক: জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার তারতাপাড়া গ্রামে গ্যাসক্ষেত্রের বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।

কূপ খনন করে এই গ্যাসক্ষেত্রে কী পরিমাণ গ্যাস আছে তার পরিমাপের অপেক্ষায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্প এলাকায় কোনো কাজ না করায় ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

বাপেক্স সূত্র জানায়, অনুসন্ধানের সময় যে সব তথ্য মিলেছে তাতে গ্যাস থাকার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত। তবে কূপ খনন না করা পর্যন্ত গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া সম্ভব নয়। কূপ খননের কাজটি কারিগরিভাবে খুবই জটিল। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি জামালপুরের মাদারগঞ্জের তারতাপাড়ায় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন গ্যাস স্ট্রাকচার কাঠামো চিহ্নিত করতে তারতাপাড়ার গ্যাস ক্ষেত্রেও জরিপের তালিকায় রয়েছে।

বাপেক্সের নিজস্ব জরিপে ২ হাজার ১৫০ মিটার জরিপ কাজ শেষে নতুন করে এ ক্ষেত্রে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। এ গ্যাস ক্ষেত্র চালু হলে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে।

অপরদিকে গ্যাস কূপ খনন কোম্পানি সকারের অনীহার কারণে জামালপুরের মাদারগঞ্জে তারতাপাড়া গ্রামে গ্যাস অনুসন্ধান কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নের পর দীর্ঘদিনেও গ্যাস অনুসন্ধান কাজ শুরু না হওয়ায় এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্ন ও হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে।

২০১২ সাল থেকে মাটিতে বুদবুদ আকারে উঠা গ্যাসের সাহায্যে কৃষি জমিতে সেচযন্ত্র চালিয়ে আসছেন মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউপির তারতাপাড়া গ্রামে রবিউল ইসলাম নামে এক কৃষক। ২০১৪ সালের মার্চ এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে জামালপুরের সাবেক ডিসি শাহাবুদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম মাদারগঞ্জ উপজেলার তারপাড়ায় সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তারা প্রাথমিকভাবে তারতাপাড়া গ্রামে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠান। এ চিঠি পাওয়ার পর ভূতাত্ত্বিক জরিপে তারতাপাড়া গ্রামে গ্যাস পাওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা দেখা দেয়। পরে পেট্রোবাংলার তেল গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্প রূপকল্প-৩ এর আওতায় মাদারগঞ্জ উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৭ সালে গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমানের জানান, রূপকল্প-৩ এ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা-১ ও মাদারগঞ্জ-১ এলাকা অন্তর্ভুক্ত। আজারবাইজানের গ্যাস কূপ খনন প্রতিষ্ঠান সকার (স্টেট ওয়েল কোম্পানি অব দ্যা আজারবাইজান রিপাবলিক) মাদারগঞ্জ-১সহ সেমুতাং ও বেগমগঞ্জে গ্যাস কূপ খননের কাজ পায়। প্রথমে প্রতিষ্ঠানটি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার সেমুতাংয়ে খনন কাজ চালায়। সেখানে গ্যাস পাওয়া যায়নি। পরে ওই কোম্পানির লোকজন তাদের যন্ত্রপাতি নিয়ে বেগমগঞ্জে যায়। কিন্তু সেখানে গ্যাস কূপ খননের আগে সকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে তারা আর গ্যাস কূপ খনন করবে না বলে প্রকল্প পরিচালক বরাবরে টার্মিনেশন লেটার পাঠায়। টার্মিনেশন লেটারে প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি মোতাবেক সময় মতো টাকা পরিশোধ না করার কথা উল্লেখ করেছে।

ড. মিজানুর রহমানের দাবি, সেমুতাং কূপ খননের জন্য তারা চুক্তির কিছু টাকা অগ্রিম চেয়েছিল সেটা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ওই কূপ খনন কাজ শেষে কিছুটা দেরিতে হলেও খননের পুরো টাকাই পরিশোধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, হয়তো তাদের সামর্থ্য না থাকা কিংবা অন্য কোনো কারণে সকার বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে চাচ্ছে। তবে আমরা তাদের টার্মিনেশন লেটার গ্রহণ করিনি।

প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ আছে। এ সময়ের মধ্যে সকার কাজ শুরু না করলে আমরা দেশি প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে দিয়ে মাদারগঞ্জে কাজ করাবো। তবে সে ক্ষেত্রে আবার নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

গ্যাস অনুসন্ধান কাজে স্থবিরতার বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, বিদেশি কোম্পানি যে কাজ ২৫-৩০ কোটি টাকায় করে, বাপেক্স সেটা ১০ কোটি টাকায় করতে পারে। আজারবাইজানের কোম্পানির চাইতে বাপেক্সের সক্ষমতাও কম না। পেট্রোবাংলা ইচ্ছা করলে প্রথমেই কূপ খননের দায়িত্ব বাপেক্সকে দিতে পারতো।

আনু মোহাম্মদ আরো বলেন, স্থলভাগে কূপ খননের দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেয়ার উদ্দেশ্যই হলো কমিশন বাণিজ্য এবং দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি করে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা।

বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কাজ দেয়া প্রসঙ্গে রূপকল্প-৩ এর প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বাপেক্স বছরে সর্বোচ্চ ৩-৪টি কূপ খনন করতে পারে। একসঙ্গে অনেক জায়গায় গ্যাস কূপ খননের জন্যই তৎকালীন ম্যানেজমেন্ট বাপেক্সের পাশাপশি বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কাজ দেয়।

তিনি বলেন, বাপেক্স বর্তমানে কুমিল্লায় বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের দুটি ওয়ার্ক ওভার কাজে ব্যস্ত আছে। এ ছাড়া কুমিল্লার মুরাদনগরে শ্রীকাইল ইস্ট নামে একটি কূপ খনন কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাপেক্স। তাদের খনন যন্ত্রসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সেখানে চলে গেছে। শিগগিরই বাপেক্স সেখানে কাজ শুরু করবে।

স্থানীয় সাংসদ মির্জা আজম জানান, মাদারগঞ্জের তারতাপাড়ার গ্যাসক্ষেত্রে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ দল অনুসন্ধান ও গবেষণা চালিয়ে গ্যাসের অস্তিত্বের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। দায়িত্বে নিয়োজিত কোম্পানি দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সন্ধানের তালিকায় থাকায় এ প্রকল্পে পুরোপুরিভাবে কাজ করতে একটু সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত সময়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের এ গ্যাসক্ষেত্র চালু হলে জামালপুর জেলার অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে জামালপুর জেলার নাম। এভাবে জামালপুরকে উন্নয়নের রোল মডেলসহ বহুমাত্রিক উন্নয়নের স্রোতধারায় উদ্ভাসিত করতে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ জেলার সার্বিক উন্নয়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top