পোরশার সন্তান রাজশাহীর সফল উদ্যোক্তা

S M Ashraful Azom
0
পোরশার সন্তান রাজশাহীর সফল উদ্যোক্তা
সালাউদ্দীন আহম্মেদ, পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: পোরশার সন্তান রাজশাহী শহরের একজন সেরা ও সফল উদ্যোক্তা। বাবা সাজ্জাদ আলী ছিলেন পোরশার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষার প্রতি ছোট থেকেই তিনি বিশেষ মনোযোগী ও দায়িত্বশীল।

 বাবার আদর্শ ও সম্মানকে ধারণ করে মাধ্যমিক পাশের পরে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে রাজশাহী শহরে পাড়ি দেন পোরশার এক তরুণ। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।

পড়াশোনা শেষে চাকরীর প্রস্তুুতিতে মনোযোগ দিতে শুরু করেন তিনি। চাকরীর জন্য এতো এতো পড়া যে, এত গুলো পড়া শেষ করেও চাকরী হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হলেও কতদিন পরে হবে তা নিশ্চিত না।

উদ্ভাবনী এক তরুণ ভাবতে লাগলেন নতুন কিছু করার। এরি মধ্যে রাজশাহী শহরের একটি কোচিং সেন্টারে তিনি খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন। উদ্দেশ্য কোচিং এ পড়ালে বাসায় পড়ানোর জন্য দুই একটা টিউশনি জোগাড় করা যাবে। ওই কোচিংয়ে রাজশাহী শহরের সবচেয়ে ভালো ভালো স্কুল যেমন পিএন, ল্যাবরেটরী, কলেজিয়েট সহ অন্যান্য স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা কোচিং করে।

কোচিং এ ক্লাস নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা তাঁর পড়ানোর কৌশল দেখে মুগ্ধ হয়। ধীরে ধীরে সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেণ তিনি। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাঁকে ব্যাচ আকারে পড়ানোর অনুরোধ করতে থাকেন।

২০১৬র শেষ দিকে প্রথমে কোচিং এর পাশেই একটি ছোট ঘরে কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী নিয়ে ব্যাচ আকারে পড়ানো শুরু করেন। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। অল্প দিনে মাত্র তিন বছরের মধ্যেই তাঁর খ্যাতি বাড়তে থাকে। এখন তাঁর প্রায় ৫ শতাধিক ছাত্র ছাত্রী। প্রাইভেট পড়ানোর জগতে তিনি এখন রাজশাহীর সেরা ইংরেজি শিক্ষকদের একজন।

এতোক্ষন যাঁর সম্পর্কে জানলেন তাঁর নাম মো: শামিম আখতার। রাজশাহী মহানগরীতে তিনি শামিম স্যার নামেই পরিচিত। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন Shamim's English Cadet। রাজশাহী শহরের সেরা স্কুল পিএন স্কুলের পাশে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে পড়াচ্ছেন।

সুসজ্জিত ভবনে অত্যাধুনিক সব সুযোগ সুবিধাই তিনি ব্যবস্থা করছেন। পুরোটাই এয়ার কন্ডিশনার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। এখানে একদিকে যেমন শ্রেণিভিত্তিক ইংরেজি পড়ছে পাশাপাশি ইংরেজিতেও দক্ষ হচ্ছে।

 তাঁর অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। কোনো বিষয়ে ইংরেজিতে লিখতে দিলে তারা অনায়াসে লিখতে পারে।

শামিম আখতার তাঁর প্রতিষ্ঠানে ১৬ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন। সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। কেউ খাতা দেখেন, কেউ অফিসের কাজ করেন আবার কেউ কেউ কম্পিউটারে নোটপত্র তৈরিতে ব্যস্ত। আর ক্লাস নেন শামিম স্যার নিজেই।

 অফিসে খাতা দেখেন এমন একজনের নাম সাকিল। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গ্রামের বাড়ি বগুড়া। তিনি বলেন, “আমি দু’বছর ধরে এখানে স্যারের সাথে কাজ করছি। যখন আমি আসি তখন আমার রাজশাহীতে এক পয়সাও আয়ের সুযোগ ছিলনা। এখন আমি স্যারের কাছে থাকার ফলে টিউশনি পাই। টিউশনি এবং স্যারের বেতন মিলে আমি প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা আয় করি। যেটা আমি একজন ছাত্র হিসেবে কোনোদিনও কল্পনা করতে পারিনি। এ-সবই শামিম স্যারের অবদান।”

 শুধু খাতা দেখেন এমন ১০ জন আছেন। তাদের প্রত্যেকেই প্রায় একই রকম আয় করেন।
রাজশাহীতে আরো অনেক শিক্ষকই এভাবে প্রাইভেট আকারে পড়ান। কিন্তু এতোটা বড় আকারে নয়। কিভাবে এই সফলতা, জানতে চাইলে শামিম আখতার বলেন,“দেখুন, প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে স্টুডেন্টসরা কি চায়, সেটা তাদেরকে দিতে হবে এবং সহজ কৌশল বের করতে হবে যেটাতে স্টুডেন্টরা আকর্ষিত হবে।

 আমি সেটাই দেয়ার চেষ্টা করেছি। রাজশাহীতে আমি যেভাবে পড়াই এবং যে সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকি এটা কারো পক্ষেই দেওয়া সম্ভব নয়।” তিনি আরো বলেন, “আমাদের মূল টার্গেট হলো ছাত্র ছাত্রীদের ইংরেজি শেখানো।

শুধু ক্লাসের পড়া পড়িয়ে হয়তো পরীক্ষা ভালো হবে কিন্ত প্রপারলি ইংরেজি শিখতে পারবেনা। আমি এখানে একদিকে যেমন স্কুলের পরীক্ষার পড়া পড়াই পাশাপাশি প্রপারলি ইংরেজি শিখাচ্ছি এবং অভিভাবকরা মূলত এটাই চান।”

শামিম আখতার এখন ৩য় শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি পড়াচ্ছেন। তবে আগামীতে খুব শীঘ্রই তিনি ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াবেন বলে জানিয়েছেন। রাজশাহী মহানগরীতে শিক্ষায় অবদান রাখার পাশাপাশি পোরশা উপজেলাতেও তিনি অবদান রাখতে চান

তিনি খুব শীঘ্রই রাজশাহীর আদলে পোরশাতেও এরকম একটি প্রতিষ্ঠান চালু করতে চান। যাতে করে পোরশা উপজেলার ছাত্র ছাত্রীরা সহজেই ইংরেজি শিখতে পারে।

চাকরি না করে শুধু প্রাইভেট পড়ানোকে পেশা হিসেবে নিলেন কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে শামিম আখতার বলেন, ”দেখুন, সবাইকে চাকরি চাকরি করলে হবেনা।

 আমরাতো টাকার জন্যই চাকরী করি। অর্থ যেখান থেকে আসবে সেটাই চাকরী। সরকার এখন উদ্যোক্তা তৈরিতে জোর দিচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে উদ্যোক্তা তৈরির কোনো বিকল্প নেই।

আর সবাইকে ডাক্তার ইন্জিনিয়ার হওয়ার দরকার নেই। চাকরি না করে নিজের প্রতিষ্ঠানে অন্যকে চাকরি দেওয়ার চিন্তা থেকেই এ পেশায় আসা।
শামিম আখতারের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুরে। তিনি বিয়ে করেছেন সাবেক এমপি ডা. বশিরুল হক এর সন্তান অধ্যক্ষ শাহ ফজলুল হক এর ছোট মেয়ে ফাহমিদা জান্নাতকে। ফাহমিদা জান্নাতের ভাই পোরশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ মন্জুর মোরশেদ চৌধুরী। ফাহমিদা জান্নাত পোরশার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শামিম আখতার ও ফাহমিদা দম্পতি এক কন্যা সন্তানের জনক।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top