![]() |
গত মৌসুমের মজুদ লবণ বিক্রি করছে বাঁশখালীর মধ্যম ছনুয়ার লবণ চাষিরা। |
উপকূলীয় অঞ্চল গুলোর মধ্যে দেশের কক্সবাজার এবং খুলনার পর চট্টগ্রামের একমাত্র বাঁশখালীতেই লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বাঁশখালীতে পুইছড়ি, ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, চাম্বলের ডিপুটিঘোনা, শীলকুপের পশ্চিম মনকিচর, সরল, মিনজির তলা, কাথরিয়া, খানখানাবাদ (আংশিক) এলাকায় লবণের ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও শীতে মৌসুমে এখানকার প্রায় কয়েক হাজার লবণ চাষী লবণ উৎপাদনের কাজে মাঠে নেমেছেন। তবে লবণ চাষীদের হতাশার শেষ নেই। উচিত মুল্য না পাওয়াতে গত মৌসুমের শতশত মেট্রিকটন লবণ এখনো চাষীদের নিয়ন্ত্রণে মজুদ রয়েছে।
*লবণচাষের মৌসুম শুরু হলেও জমির লাগিত নিচ্ছেনা প্রান্তিক চাষিরা।*উচিত মুল্য না পাওয়ায় হতাশায় ভূগছে উপকূলের লবণচাষিরা।*হারিয়ে যেতে বসেছে লবণশিল্প, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে লবণ চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার থেকে বিকাল পর্যন্ত বাঁশখালীতে গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণ বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা দরে। সে হিসাবে বাঁশখালী তথা চট্টগ্রামে পাইকারি লবণ বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪ টাকা থেকে ৪ টাকা ৭৫ পয়সা দরে।
বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া আবাহালীর লবণ চাষি মো. রহমত উল্লাহ বলেন- "আমি ৮ কানি পর্যন্ত লবণমাঠ চাষ করি। আমার কাছে গত মৌসুমে উৎপাদিত ৫০০শত মণ লবণ এখনো মজুদ আছে। গত বছর মৌসুমের শুরুতে উৎপাদিত লবণের পাইকারি দাম কম হওয়াতে আমাদের ছনুয়ায় আনুমানিক ৪০ হাজার মণ লবণ মজুদ আছে। মৌসুম জুড়ে লবণের দাম নিয়ে হতাশায় রয়েছে উপকূলের হাজার হাজার লবণ চাষি। তিনি বুধবার প্রতিমণ ১৮০ টাকা করে ৭০০ মণ লবণ বিক্রি করেছেন বলে জানান।"
একই এলাকার লবণ চাষি মাহমুদুল হক বলেন, বুধবার প্রতিমণ লবণ মাত্র ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।
উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ লোকের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ লবণচাষের সাথে জড়িত। উপকূলের চাষিরা জানায়, গত মৌসুমের উৎপাদিত লবণ অবিক্রিত রয়ে গেছে, হাজার হাজার মেট্রিকটন। উৎপাদিত লবণের অস্বাভাবিক দর পতন হলেও পেটের তাগিদে চাষিরা বাধ্য হয়ে কম দামে লবণ বিক্রি করে চালাচ্ছে সংসার।
জানা গেছে, দেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী চট্টগ্রামের বাশঁখালীতে কয়েকটি ইউনিয়ন জুড়েই লবণ উৎপাদন হয়ে আসছে। সরকারি হিসাবে প্রতিবছর নভেম্বরের ১৫ থেকে পরবর্তী বছরের মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়। এই সাত মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল হয়েই বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার চাষি তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের লবণ উৎপাদন করে আসলেও সেই চাষিদের কোনো খবর কেউ রাখে না। এদের জীবন জীবীকার একমাত্র উৎস যখন লবণের মাঠ, বাপ দাদার আমল থেকে যাদের লবণচাষ করে চলে সংসার তারা বার বার প্রতারিত হয়। পায় না ন্যায্য মুল্য। কুচক্রি পাইকারের কাছে মণপ্রতি লবণে ৭ থেকে ১০ কেজী বেশী গুণতে হয়। শ্রমিকের মজুরী, জমির লাগিয়তসহ সব মিলে লোকসানের মাশুল গুনতে হয় লবণচাষীদের। প্রান্তিক লবণচাষিরা জানায়, পাইকারি লবণের দাম একেবারে কমে গেলেও পাইকাররা করছে আরো জুলুম। তারা লবণের ঘাটতির নাম করে প্রতিমণে ৭ থেকে ১০ কেজি লবণ বেশি নিচ্ছেন। তারা বলেন, একে তো লবণের দাম কম তার উপর প্রতিমণে ফড়িয়া বা দালালরা লবণের ঘাটতির নামে অতিরিক্ত লবণ নিয়ে চাষিদের আরো ঠকাচ্ছেন।
উত্তর পশ্চিম গন্ডামারা লবণ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি. এর সাধারণ সম্পাদক আমির হোছেন বলেন- "এখনো আমাদের বাঁশখালীতে গত মৌসুমের উৎপাদিত প্রায় ২ হাজার মেট্রিকটন লবণ মজুদ আছে। উচিত মুল্য না পাওয়াতে চাষিরা হতাশায় ভোগছে। আমাদের সমিতির আওয়তায় ১২শত কানি লবণ চাষের জমি আছে। এখনো অনেক লবণের মাঠ লাগিয়ত হয়নি। চাষিরা লবণের লোকসান গুণতে গুণতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে লবণ চাষ থেকে।" তিনি আরো বলেন- "এ কারণে চাষিরা চান, উৎপাদিত লবণ সরকারিভাবে ক্রয় করা হলে তারা অন্তত উৎপাদিত লবণের প্রকৃত মূল্য পেতেন। শিল্প কারখানার ব্যবহারের বিপরীতে আমদানিকৃত লাখ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত লবণই জনস্বাস্থ্য ও আইনের তোয়াক্কা না করে অসাধু চক্র প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করায় একদিকে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবণের দরপতন শুরু হয়, যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে।"
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।