ভয়াল ১২ নভেম্বর

S M Ashraful Azom
0
ভয়াল ১২ নভেম্বর
সেবা ডেস্ক: আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই রাতে ঘূর্ণিঝড় গোর্কির ছোবলে লন্ডভন্ড হয় ভোলার বিস্তীর্ণ এলাকা। জেলার মনপুরা, চর নিজাম, ঢালচর ও চর কুকরি-মুকরিসহ গোটা এলাকা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। কত মানুষ যে সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলো তার সঠিক হিসাব জানা নেই কারো।
তবে স্থানীয়দের মতে মৃতের সংখ্যা লাখের অধিক হবে। সেদিন এমন কোনো গ্রাম ছিলো না, যে গ্রামের কেউ মারা যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় গাছে উঠে প্রাণে বেঁচেছেন অনেকে। সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি ভোলাবাসী। সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো আঁতকে উঠেন তারা। দুর্যোগ মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করলেও এখনো সিগনাল দেখলে ভয় পান ৭০ সালের প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ঘূর্ণিঝড়ে স্বজনহারা আলীনগর এলাকার মো. মনির বলেন, আমার তিন বোনকে হারিয়েছি। তাদের কথা মনে করে আজো আমরা কাঁদি।

প্রত্যক্ষদর্শী তুলাতলী এলাকার বাদশা মিয়া বলেন, মেঘনা নদী দিয়ে মানুষের মরদেহ ভাসতে দেখেছি। পরিচিত কাউকে উদ্ধার করেছি। বাকি মরদেহ স্রোতে ভেসে গেছে।

স্থানীয় রহমত আলী, ছিদ্দিক ও সিরাজ উদ্দিন বলেন, সেদিনের ঝড়ে মদনপুরের ১৮টি ঘরের মধ্যে ৪০ জনের মরদেহ পাওয়া যায়। একটি পরিবারে কেউ বেঁচে ছিলেন না।

প্রত্যক্ষদর্শী শাহে আলম বলেন, সেদিন দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। রাতে পুরোদমে ঝড় শুরু হয়। ভোরে জলোচ্ছ্বাসে মানুষ মারা যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মনপুরা, চরফ্যাশন, লালমোহন উপজেলায়।

প্রবীণ সাংবাদিক ও দৈনিক বাংলার কন্ঠ সম্পাদক এম হাবিবুর রহমান বলেন, বন্যার পরে সাপ আর মানুষ দৌলতখানের চৌকিঘাটে জড়িয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি। স্নেহময়ী মা তার শিশুকে কোলে জড়িয়ে পড়েছিল মেঘনার পাড়ে। সোনাপুরের বাগানে গাছের ডালে এক নারীর মরদেহ ঝুলতে দেখেছি। এমনিভাবে মনপুরা, চরফ্যাশন, লালমোহন, তজুমদ্দিন ও দৌলতখানসহ সমগ্র জেলায় মানুষ আর গবাদিপশু সেদিন বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জলে ভেসে গেছে। মানুষ শূণ্য হয়ে পড়েছিলো দ্বীপ জেলা ভোলা।

প্রবীণ সংবাদিক এম এ তাহের বলেন, ভয়াল সে রাত কেটে গেলে পরদিন শুক্রবার শহরময় ধ্বংস স্তুপ দেখা যায়। প্রায় কোমর পানি ছিলো সর্বত্র। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল শুধু মরদেহ আর মরদেহ। ওই সময় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহাজানসহ আরো অনেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বেড়িয়ে পড়েন। সেদিন সবাই মিলে প্রায় সাড়ে ৩০০ মরদেহ দাফন করি।

এদিকে উপকূলবাসীদের অভিযোগ, উপকূলে একের পর এক দুর্যোগ আঘাত হানলেও আজো টেকসই বেড়িবাঁধ বা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ হয়নি। প্রতিবছরই ঝড় আসে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু এখানের মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে ভোগে। ঝড় বা ঘূর্ণিঝড় আসলে মৃত্যু তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top