
রফিকুল আলম,ধুনট (বগুড়া): মা স্বপ্ন দেখতেন তার মেয়ে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হবে। মেয়ের সাফল্যে হাসি ফুটবে তার মুখে। কিন্তু সেই মা ভুগছিলেন হৃদ রোগে। অবশেষে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বপ্নময়ী মা ইন্তেকাল করেছেন। মাকে চিরনিদ্রায় রেখে বুকে পাষাণ বেঁধে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে এসেছে তার সেই মেয়ে।
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ঘটেছে বেদনা বিধুর এ ঘটনাটি। মেয়েটির নাম ফাতেমা সরকার নিহা। শনিবার ছিল ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা। তার কেন্দ্র ধুনট সরকারি এনইউ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। কক্ষ নম্বর ১০৭। কেন্দ্রের কক্ষের ভেতর আসনে অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে বসে বারবার চোখ মুছতে মুছতে পরীক্ষা দেয় সে।
ফাতেমা সরকার নিহা বগুড়ার ধুনট উপজেলার জোড়খালী গ্রামের হেলাল উদ্দিন সরকারের মেয়ে। তার মা হোসনেয়ারা পারভীন উপজেলা উপ-সহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ছিলেন। হৃদরোগে অসুস্থ্য হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাত পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
পরীক্ষার আগে মেয়েকে নিজ হাতে তৈরি করে দেবেন মা। এরপর ভালোবাসা ও দোয়া দিয়ে পরীক্ষার হলে পাঠাবেন। এটাই ছিল স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু নিহার ভাগ্যে তা আর হয়নি। মেয়েকে রেখেই চিরদিনের জন্য চলে গেলেন মা। মায়ের নিকট থেকে দোয়ার পরিবর্তে মাকে কবরে রেখে কেন্দ্রে আসতে হয় তাকে। সে উপজেলার গোসাইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী। মমতাময়ী মায়ের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে কেন্দ্রে এসেছে নিহা।
সংবাদ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব আলহাজ্ব মশিউর রহমান নিহার খোঁজ-খবর নিতে পরীক্ষা কক্ষে যান। তিনি শোকাহত নিহার পাশে দাঁড়িয়ে শান্ত¡না দেন। এসময় নিহার রোনাজারিতে কক্ষের অনেকের চোখেই পানি চলে আসে। নিহার ভালোভাবে পরীক্ষা দেয়া ও বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন কেন্দ্র সচিব।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা বলেন, এ বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টের। তিনি একজন জনবান্ধব কর্মকর্তা ছিলেন। মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও তার শোক সন্তোপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।