
বকশীগঞ্জ(জামালপুর)প্রতিনিধি: জামালপুরের বকশীগঞ্জে সবজি চাষে বদলে গেছে অনেকের ভাগ্য। সবজি চাষের কারণে এ উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে যেতে শুরু করেছে। কৃষকরা ধান ও অন্যান্য অলাভজনক চাষাবাদ বাদ দিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। ফলে মানুষের ভাগ্যও যেমন পরিবর্তন হচ্ছে তেমনি পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। আগামি পাঁচ বছর এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ অঞ্চলের পুরো অর্থনীতি বদলে যাবে ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাইয়ে ভয়াবহ বন্যায় রোপা আমনের পর কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরপরও থেমে থাকেন নি এ উপজেলার কৃষক। তারা বিভিন্নভাবে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।
উপজেলা কৃষি দপ্তরের পরিবেশ বান্ধব সবজি উৎপাদনের পরামর্শ পেয়ে কৃষকরা উৎসাহ পেতে থাকেন। প্রতি বছরই এই উপজেলায় কমবেশি সবজি চাষ হলেও এই বছর সবজি চাষ বেড়ে গেছে।
এ বছর বকশীগঞ্জ উপজেলার সাত টি ইউনিয়নে ৮০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকারের শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে কম খরচে বেশি লাভ করা যায় এমন সবজি চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়।
কৃষি দপ্তরের পরামর্শে এবং উন্নয়ন সংঘ রি-কল ২০২১ প্রকল্পের সার্বিক সহযোগিতায় মেরুরচর ইউনিয়নের পূর্ব কলকিহারা গ্রামে জহুরা বেগমের সাফল্যের গল্প এখন সবার মুখে মুখে। জহুরা বেগম গত বছরের রোকেয়া দিবসে সবজি চাষ করে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করায় শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন। এরকম অনেক নারীই এখন সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
বগারচর ইউনিয়নের বালুরচর গ্রাম এখন নিরারপদ সবজির গ্রাম নামে পরিচিত হয়েছেন। এই গ্রামের ৯০ ভাগ মানুষ সবজি চাষ করে থাকেন। সবজি চাষ করে বেশির ভাগ মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করেছেন। এ বছর এই গ্রামে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে খ্যাতি অর্জন করে অনেক কৃষক। কপি, টমোটো, বেগুন, মুলা, ডাটা শাক , শসা, বরবটি, লাউ সহ বিভিন্ন ফসল পরিবেশ বান্ধব ।
বালুরচর গ্রামের সবজি চাষি মিনুকা বেগম, বাসেনা বেগম, আমিরন বেগম সবজি চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। এখন তারা বছর জুড়ে সবজি চাষ করেন।
এই গ্রামের সবজি চাষি মিনুকা বেগম জানান, উন্নয়ন সংঘ রি-কল ২০২১ প্রকল্পের সহায়তায় আমি ও আমার গ্রামের অনেকেই সবজি উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ পেয়ে সবজি চাষের উপর জোর দেই। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই আমি জৈব সার, কেঁচো কম্পোষ্ট ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত উপায়ে সবজি চাষ করে থাকি। এ কারণে ফসল উৎপাদন খরচ কম ও ভাল ফলন পাচ্ছি।
এরকম প্রায় প্রতিটি গ্রামেই সবজি চাষ করা হয়েছে। বিশেষ করে বেগুন, কপি, টমোটো , গোল আলু, ডাটা শাক, শসা চাষ জনক হওয়ায় কৃষকরা এসব চাষেই বেশি ঝুঁকছেন। শীতকালীন সময়ে সবজি চাষ শেষে অনেকেই আবার নতুন করে শসা, করলা, চিচিঙ্গা, ঢেরস চাষ শুরু করেছেন।
এবারের মৌসুমে সবজি দাম ভাল পাওয়ায় মোটা অংকের লাভ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতি বদলে যাচ্ছে। মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর আজাদ জানান, আমরা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। বিশেষ করে কৃষককে নিরাপদ সবজি চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি ভোক্তারা বিষমুক্ত সবজি পাচ্ছেন।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।