মোঃ ফয়জুর রহমান : বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও আতঙ্কিত এক মহামারি রোগের নাম করোনা ভাইরাস (কোভিড -১৯)। চীনের উহান থেকে উৎপত্তি হওয়া এ ভাইরাস খুব দ্রূত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত এ রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের রোগব্যাধি কেন দুনিয়াতে আসে ; এ সময় করণীয় কী এ ব্যাপারে নানা নির্দেশনা পাওয়া যায় কোরআন ও হাদিসে। মুসলিম পণ্ডিতগণের মতে এ ধরনের মহামারি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কৃতকর্মের কারণেই আসে। যেমনটা আল্লাহর বাণী "মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে - স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ হতে) ফিরে আসে।" (সুরা রুম:৪১)
পবিত্র হাদিসে অপরিচিত মহামারি ছড়িয়ে পড়ার যে কারণ উল্লেখ রয়েছে তাহলো- 'অশ্লীলতার ভয়াবহ সয়লাব।' মহামারি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়বে তখন তাদের মধ্যে এমন এমন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায়নি।" (ইবনে মাজাহ)
আবার অনেকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মামুষকে পরীক্ষা করার জন্যও এ ধরনের মহামারি আসে বলে মনে করেন। মু'মীন বান্দাকে নানা বিপদ-মুসীবত দিয়ে তাঁর ঈমানের দৃঢ়তাকে পরীক্ষা করা হয়। আল্লাহ বলেন "তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদের ক্ষতি , জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি (এসবের) কোনকিছুর দ্বারা নিশ্চয়ই পরীক্ষা করব, ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর।" (সুরা বাকারা:১৫৫)
সহীহ মুসলিম শরীফে এ ধরণের মহামারিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স) বলেন "যে গজব বা শাস্তি বনী ইসরাইলদের এক গোষ্ঠীর উপর এসেছিল; আর তার বাকী অংশই মহামারি।"
এ ধরণের মহামারি কিয়ামতের আলামত হওয়ার সম্ভাবনা হিসেবেও দেখছেন অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ। কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার আগে অনেক ছোট ছোট আলামত লক্ষ্য করা যাবে। সহীহ বুখারী শরীফের বর্ণনায় যেসব আলামতের কথা পাওয়া যায় তন্মধ্যে মহামারি অন্যতম।
যেভাবেই বিবেচনা করা হোক না কেন সকল ঘটন-অঘটনের প্রবর্তক মহান আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছুই হয় না। তাই এটাকে নির্মূল করার ক্ষমতা তাঁর হাতেই ন্যস্ত।
এ মহামারিতে ইসলামের দৃষ্টিতে আমাদের করণীয়:
আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের পাশাপাশি এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সতর্কতা ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা কঠিন এ রোগের মোকাবেলা করতে পারি। মু'মীনগণকে সতর্কতার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন "হে ঈমানদারগণ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন কর।" (সুরা নিসা:৭১)
করোনা ভাইরাস যেহেতু সংক্রামক রোগ তাই জন সমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা যে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছি এ নির্দেশনা চৌদ্দশত বছর আগে মহানবি (স) প্রদান করে গেছেন। যেমন তিনি বলেন, "কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ১০৬৫)
'পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।' এ সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে। অপরিষ্কার হাত দ্বারা নাক, মুখ, চোখ বা মুখমন্ডল স্পর্শ করা যাবে না।
স্বাস্থ্য-সম্মত হালাল খাবার গ্রহণ করতে হবে। মহানবী (স) কঠিন রোগের নিরাময় হিসেবে আযওয়া খেজুর, ত্বীন, ডুমুর, মধু, কালিজিরা, মাশরুম ও দুধের নাম উল্লেখ করেছেন।
সার্বক্ষণিক তওবা ও ইস্তেগফার করতে হবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এর থেকে পরিত্রান চাইতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, "যখন তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে এরূপ অবস্থায় আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না।" (সুরা আনফাল:৩৩)
মহানবী (স) কঠিন মসিবত ও মহামারিতে আমল করার জন্য কিছু দোয়া শিখিয়ে গেছেন:
(১) 'বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়া দুররু মাসমিহি শাইয়ূন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।'
(২)'আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া ছাইয়্যি ইল আসকাম’।
সর্বোপরি তওবা, ইস্তিগফার ও নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আমাদের আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হবে। সরকারি নির্দেশনা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললেই এ মহামারি থেকে আল্লাহ আমাদের মুক্তি দিতে পারেন।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন