
বকশীগঞ্জ সংবাদদাতা: জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় গত বছরের জুলাই মাসে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ বন্যায় গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হলেও অধিকাংশ রাস্তা গুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেই। এসব রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় কোন বরাদ্দ না থাকায় টিআর, কাবিখা, ইজিপিপি প্রকল্পের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরকে।
ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সাত মাস পরেও সিংহভাগ রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
আগামি বন্যা বা বর্ষার আগে মানুষের চলাচল করা জনগুরুত্বপূণ রাস্তা গুলো সংস্কার করা না হলে দুভোগের শেষ থাকবে না মানুষের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ওই বন্যায় বকশীগঞ্জ উপজেলার সাত টি ইউনিয়নে শতভাগ এবং একটি পৌরসভার ৯০ ভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়। মাস খানেক বন্যার পানি স্থায়ী হওয়ায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও এলজিইডির গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশেষ করে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন, মেরুরচর , বগারচর , নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তা গুলো বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সাধুরপাড়া ইউনিয়নের গাজীরপাড়া বাজার থেকে কামালের বার্ত্তী বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তাটি বন্যার কবলে পড়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এই রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় স্কুল শিক্ষার্থী,পথচারী, ব্যবসায়ী সহ মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গাজীরপাড়া বাজার থেকে বাংগালপাড়া গ্রামের রাস্তাটির অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পূর্ব গাজীরপাড়া গ্রামের খালের উপর ব্রিজটি বন্যায় ভেঙে পড়লে বাঁশের সাঁকো দিয়ে কোন রকমে চলাচল করছেন এই এলাকার মানুষ। বাংগাল পাড়া গ্রাম থেকে কুতুবের চর গ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটিতে বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
একই ইউনিয়নের উত্তর ধাতুয়াকান্দা থেকে আলীরপাড়া পর্যন্ত রাস্তাটির সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত গেছে গত বছরের ওই বন্যায় । এই রাস্তার উপর একটি ব্রিজ থাকলেও ব্রিজের দুই পাশের মাটি সড়ে যাওয়ায় ব্রিজটি কোন আসছে না।
আচ্চাকান্দি গ্রাম থেকে ডেরুরবিল বাজার পর্যন্ত রাস্তাটিতে বিশাল একটি খাল হওয়ায় তিন কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয় এই গ্রামের মানুষের।
শুধু সাধুরপাড়া ইউনিয়নেই নয় মেরুরচর ইউনিয়নেও একই অবস্থা। এই ইউনিয়নের মেরুরচর বাজার হতে পূর্ব কলকিহারা গ্রামের পাকা রাস্তাটি ভেঙে বড় বড় খাল তৈরি হয়েছে। ফলে চরের মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
একই ইউনিয়নের মেরুরচর থেকে ফারাজীপাড়া পর্যন্ত রাস্তাটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারিভাবে সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি।
তবে বকশীগঞ্জ ইউএনও আ.স.ম. জামশেদ খোন্দকারের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি সংস্কার করেছেন এলাকার মানুষ। এছাড়াও ঘুঘড়াকান্দি ব্রিজ থেকে উজান কলকিহারা গ্রামের রাস্তাটিও বন্যায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
অপরদিকে বগারচর , নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি রাস্তা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হলেও এখন পর্যন্ত সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের কোন ব্যবস্থা করা হয় নি। বন্যা পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় রাস্তা গুলো সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। রাস্তা গুলো সময়মত মেরামত না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে স্ব স্ব এলাকার মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার করা না হলে বর্ষা মৌসুমে চলাচলে আরো ভোগান্তি বাড়বে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
তারা আগামি বন্যার আগেই বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে রাস্তা গুলো সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। অনেকেই মনে করেন আগামি বন্যার আগে পুনঃনির্মাণ বা সংস্কার করা না হলে এই এলাকার মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না। তাই জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা গুলো সংস্কার করা উচিত বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হাসান মাহবুব খান জানান, গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা গুলো টিআর, কাবিখা এবং অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি ( জিপিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে মেরামত করা হচ্ছে। কিন্তু সব রাস্তা এই বরাদ্দ দিয়ে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য বিশেষ বরাদ্দ পাওয়া গেলে তা দ্রুত কাজ করা যেতে পারে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।