করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক কে আনবে? এ নিয়ে চলছে ‘বিশ্বযুদ্ধ’

S M Ashraful Azom
করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক কে আনবে এ নিয়ে চলছে ‘বিশ্বযুদ্ধ’

সেবা ডেস্ক: একটা রাসায়নিক ফর্মুলা! আর তার পিছনে মরিয়া হয়ে ছুটছে পুরো বিশ্ব। ল্যাবরেটরিতে কিছু মানুষের ঘুম হারাম, নিজেদের দিনরাত এক করে দিচ্ছেন তারা। টেস্টটিউব আর কনিক্যাল ফ্লাস্কের টুকটাক শব্দের মাঝেই বিরাজ করছে এক চাপা উত্তেজনা। আর তাদের দিকে মলিন চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা মানুষ আর আতঙ্কিত বিশ্ব জনতা।

এমন ঘটনার শুরু মাস চারেক আগে থেকে। ছোটবড় সব দৈনিকেই খবর হয়েছিল, চিনে এক ‘অজানা জ্বরে’ আক্রান্ত অনেকে। প্রথম মৃত্যু হল ৩১ ডিসেম্বর চিনের উহানে। সেই থেকেই শুরু। এ পর্যন্ত সেই মারণ জ্বর ‘কোভিড-১৯’-এ ১৩ হাজার ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ আট হাজার ৪৬৩ জনে পৌঁছেছে। আর এই রোগকে প্যানডেমিক বা মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

এত কিছুর মাঝেও চলছে এক চাপা ‘যুদ্ধ’। যেদিন থেকেই ভাইরাসটি নিজের জাল ছড়াতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই চিন, ইউরোপ ও আমেরিকা নেমে পড়েছে অন্য এক লড়াইয়ে। কে এ ভাইরাসের প্রতিষেধক আনবে বাজারে? ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো অন্য সময়ে একে অন্যের মধ্যে রেষারেষি করলেও এবার তারা এক হয়ে কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে তারাও পরস্পরকে সব রকম সহযোগিতা করতে রাজি। তবে ক্ষমতার লড়াইয়ে রাষ্ট্রনেতারা ভুলতে পারছেন না ‘প্রথম’ হওয়ার স্বাদ। প্রশ্নগুলো ঘুরছে- ভ্যাকসিনের পেটেন্ট পাবে কোন দেশ, বিপুল মুনাফা লুটবে কে?

তবে ভাইরাসটি প্রতিনিয়তই যেভাবে নিজের রূপ বদলাচ্ছে এতে করে এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা কষ্টসাধ্য ব্যপার হয়ে গিয়েছে। তবে রূপ বদলানো এই ভাইরাসটির পিছু ছাড়ছে না আমেরিকা, ইউরোপ, চিন। ইতোমধ্যেই দেশগুলো ক্লিনিকাল ট্রায়াল (গবেষণাগারে তৈরি ওষুধ মানুষের উপরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ) শুরু করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ আগে থেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করছেন, প্রতিষেধক এলেও বাজারে তার জন্য হাহাকার পড়ে যাবে। কারণ যে দেশ তৈরি করবে, তারা আগে নিজের দেশের বাসিন্দাদের জন্য প্রতিষেধক নিশ্চিত করে তবে বাজারে ছাড়বে।

চিনে অন্তত হাজার জন বিজ্ঞানী ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ‘চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এর প্রধান বলেছিলেন, আমরা কারো থেকে পিছিয়ে নেই।

দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তার নির্দেশ, আমেরিকার মাটিতেই ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে। শুধু নির্দেশ দিয়েই ছাড়েননি তিনি। প্রতিনিয়তই খোঁজ নিচ্ছেন এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কতদূর এগিয়েছে তার দেশ।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে দেশগুলো এখন নিজেরা ড্রোন তৈরি করছে, সাইবার-অস্ত্র তৈরি করছে, ঠিক সেভাবেই তারা ওষুধের জন্য অন্য দেশের মুখাপেক্ষী হতে চায় না। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু মহামারির সময়ে অস্ট্রেলিয়া প্রথম প্রতিষেধক বাজারে আনে। কিন্তু তারা নিজের দেশের নাগরিকদের জন্য ওষুধ নিশ্চিত করে পরে আমেরিকাকে পাঠিয়েছিল। তাতে ওয়াশিংটনের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল সিডনিকে। শোনা যায়, ষড়যন্ত্রও চলেছিল। বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। গবেষণার প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো বন্ধ করে দেয় আমেরিকা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পরমাণু বোমা তৈরি নিয়ে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এত মাথা খাটিয়ে পরমাণুর গঠন আবিষ্কার হয়ে গেল, কিন্তু সেই পরমাণুকে রাজনৈতিক অস্ত্র হওয়া থেকে আটকানো গেল না কেন? জবাবে তিনি বলেছিলেন, পদার্থবিদ্যার থেকে অনেক বেশি জটিল রাজনীতি।

বিশ্বের এই পরিস্থিতিতে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সেই কথার পরিপেক্ষিতে অনেকেরই এখন একটাই প্রশ্ন, মানবতার মায়া থেকেও কি বেশি রাজনীতির মায়া? উত্তরটা সময়ের উপরেই ছেড়ে দিতে হবে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top