শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী সংবাদদাতা: পৃথিবীতে নিজেকে প্রকাশ করা ও জীবনে বেঁচে থাকার অনেক পেশা আছে। সবচেয়ে মহান পেশা, উৎকৃষ্ট পেশা, চিকিৎসাসেবা। এই পেশায় মানুষের কাছে যাওয়া, তাদের সেবা করার সুযোগ আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমানে পত্র-পত্রিকায় চিকিৎসার ওপর যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তা পড়ে গা শিউরে ওঠে।
ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃ’ত্যু। অ'পারেশন করেও রোগী সুস্থ হননি, বরং অবস্থার অবনতি, অ'পারেশনের পর রোগীর পেটে গজ-ব্যান্ডেজ এমনকি কাঁচি রেখেই সেলাই, রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের দুর্ব্যবহার। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে এমনকি সংবাদ সংগ্রহের কারণে সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষা ব্যবহার- আম'রা ইলেক্ট্রনিক প্রচার মাধ্যমে দেখেছি। সরকারি হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের অ'প্রত্যাশিত আচরণ তো আছেই। মুষ্টিমেয় দায়িত্বজ্ঞানহীনদের বিপরীতে আছেন মানববন্ধু, মানবতার পরম বন্ধু, রোগী বান্ধব অনেক চিকিৎসক।
বিশ্বব্যপী করোনায় আতংক। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দিন দিন বেড়েই চলছে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা। মৃত্যুকে কে না ভয় করে, কে না বাঁচতে চায়। যে সময়ে করোনা রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর পাশে যাচ্ছেন না স্বজনেরা। ইতোমধ্যে সরকারী মেডিকেলের চিকিৎসকদের সেবাদানে অবহেলার অভিযোগ সোস্যাল মিডিয়ায় এসেছে। সামান্য সর্দ্দি জ্বরের রোগীদেরও মিলছেনা চিকিৎসাসেবা এমন অভিযোগও অহরহ। করোনার ভয়ে বেসরকারী হাসপাতালের অনেক ডাক্তার চলে গেছেন ছুটিতে। করোনার ভয়ে অনেক চিকিৎসক আজ রোগীদের পাশে নেই। একসময় মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হতো কতোদিকে কতো ডাক্তারে দিচ্ছে চিকিৎসা। আজ সে দৃশ্য নেই। এই চরম দুঃসময়ে বসে নেই মানবতার পরম বন্ধু, যারা সেবাকে মানবধর্ম হিসেবে নিয়েছে। ইতোমধ্যে করোনা আতংকে সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে না ফেরার জগতে পাড়ি দিলেন বেশকয়েকজন চিকিৎসক ও মানববন্ধু।
কিন্ত এতোকিছু অ'ভিযোগের মাঝেও করোনার মতো দুঃসময়ে নীরবে কাজ করে যাওয়া সাদা মনের মানুষদের জন্যেই হয়তো এই মহান পেশার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা বেড়েই চলেছে। তেমনই একজন সাদা মনের মানুষ বাঁশখালী জলদি আধুনিক হাসপাতাল লিঃ এর মেডিসিন, মা-শিশু রোগে অভিজ্ঞ ওই মেডিকেলের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক। তিনি ২০১৬ সালে জলদী আধুনিক হাসপাতালে আসার পর থেকে আজবধি সুনামের সাথে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি বাঁশখালীতে একজন রোগীবান্ধ ডাক্তারের সুনাম কুড়িয়েছেন। অসহায়, গরীব রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন যত্নের সাথে। রোগীদের সাথে পরম মমতার বুলি দিয়ে, সাহস যোগানোর মতো আচরণ দিয়ে মানবিক ডাক্তারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অফিস সময়ের বাহিরেও তিনি রাত-বিরাতে দিয়ে যাচ্ছেন টেলিমেডিসিন সেবা।
করোনার এ দুঃসময়ে থেমে নেই তার স্ত্রীও। মা-শিশু, গাইনী ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামসুন নাহার (মুন্নি) জলদী আধুনিক হাসপাতালে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ীতে দু'বছরের বাচ্চাকে রেখে এ দুঃসময়ে সস্ত্রীক সেবাপ্রদান করে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ডাক্তার আবু বকর দম্পতি।
জলদী আধুনিক হাসপাতালের এমডি এস.এম সোয়াইবুর রহমান বলেন, 'ডাক্তার আবু বকর সিদ্দিক আসলেই একজন ভালো মানুষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক, সাহসী, সুন্দর মনের মানুষ। তাছাড়া তিনি ধার্মিক ব্যক্তি ও রোগীবান্ধব চিকিৎসক। তিনি করোনা পরিস্থিতেও সাহসীকতার সাথে রোগীদের ইনডোর, আউটডোরে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তার সাহসী সেবাকর্মে আমাদের হাসপাতালের সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন তিনি।'
ডা. মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক এর গ্রামের বাড়ি বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর এলাকা কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায়। তিনি হালিশহর বেগমজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি হালিশহর মেহের আফজল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে এসএসসি এবং চট্টগ্রামের বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০০৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিজিসিট্রাস্টে। সেখান থেকে কৃতীত্বের সঙ্গে এমবিবিএস পাসের পর তিনি ঢাকা বারডেম থেকে সিসিডি কোর্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে এমআরসিপি (মেডিসিন) পার্ট-১ Uk এর জন্য অধ্যায়নরত। ইতোমধ্যে তিনি বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর উপর কোর্স সম্পন্ন করেন।