রফিকুল আলম, ধুনট (বগুড়া) : বাস্তুহারা মানুষের মাঝে নেই করোনা আতঙ্ক। তাদের চোখে মুখে শুধু ক্ষুধার জ্বালা। এদের কেউ কেউ কৃষি শ্রমিক। অন্যের জমিতে কাজ করলেই চুলোয় ওঠে ভাতের হাঁড়ি। তাই করোনা সংক্রমণ নিয়ে এরা চিন্তিত নয়। এদের কপালে চিন্তার ভাজ দু'মুঠো ভাতের যোগান নিয়ে।
সরেজমিন বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রিত বাস্তুহারা পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে বহমান যমুনা নদী। বারা বার নদী ভাঙনে এখানকার মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছেন। এর বড় অংশটি যমুনার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের ঝুঁকিটা শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি জীবন ধারণের। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিটাও অন্যদের থেকে বেশি। তারা থাকেন অস্বাস্থ্যকর, ঘিঞ্জি ও নোংরা পরিবেশে।
বাঁধের ধারে ছোট্ট একটি ঘরে অনেক মানুষ গাদাগাদি করে থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। তবে করোনার কারণে বাস্তুহারা মানুষগুলো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন, তার থেকে বেশি উৎকণ্ঠিত ক্ষুধা নিবারণের জন্য। তাদের একটাই কথা-কাম না করলে খামু কেমনে? বউ-বাচ্চাকে কী খাওয়ামু? শ্রম বিক্রিই নদীভাঙনে নিঃস্ব এসব পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকার পথ। তাই নিজেদের জীবিকার তাগিদে তাদের প্রতিদিনের সকালটা শুরু হয় কাজের সন্ধানে।
সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব কিংবা সঙ্গরোধের বালাই নেই এসব মানুষের মধ্যে। বাড়ির বাইরে নদীর চরে চলছে কৃষি কাজ। কেউবা ব্যস্ত ভুট্টা উত্তোলনে। চরের উত্তপ্ত বালুর বুকে কেউ কেউ তুলছেন বাদাম। সচেতনতার অভাবের চেয়ে এখানকার মানুষের পেটের ক্ষুধা মেটানোর অভাবটা একটু বেশি। তাই সরকারি নির্দেশনা কিংবা করোনা মোকাবিলায় সঙ্গরোধে থাকার বিষয়টি এখানে উপেক্ষিত।
ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল বলেন, বাঁধে আশ্রিত খেটে খাওয়া মানুষজন জীবিকার তাগিদে কাজে ছুটছেন। এখানে চলাফেরাতেও নেই কোনো সীমাবদ্ধতা। এসব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে করোনা সংক্রমণ রোধে সঙ্গরোধ বা সামাজিক দূরত্বও নিশ্চিত হবে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত থাকবে বাঁধের মানুষও।