গরম পানির ভাপ ও ৪ ট্যাবলেটে করোনার চিকিৎসা

S M Ashraful Azom
গরম পানির ভাপ ও ৪ ট্যাবলেটে করোনার চিকিৎসা

সেবা ডেস্ক: করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রূপসা উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মী শাহারুল ইসলাম ২৩ এপ্রিল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়াটারে আইসোলেশনে রয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. রিজভির প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাচ্ছেন তিনি। তিনি জানালেন, ‘প্রতিদিন জি ম্যাক্স ৫০০ এমজি, নাপা এক্সট্রা ও মন্টিয়ার ওষুধ খাই। সেই সাথে আদা ও লেবু দিয়ে গরম পানি গড়গড়া করছি। চা ও গরম দুধ খাচ্ছি।’

শাহারুল ইসলামের সংস্পর্শে এসে গত ২৮ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৈশপ্রহরী আল মামুন মৃধা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়াটারে আইসোলেশনে থাকা মামুন জানালেন, ‘তার ১০০ ডিগ্রি জ্বর, গলায় ব্যথা ও সর্দি আছে।

তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী সকালে ও রাতে খালি পেটে এজিথ্রোমাইসিন ৫০০ এমজি ট্যাবলেট, তিন বেলা ৩টি প্যারাসিটামল এবং সকালে ও রাতে ভরা পেটে সিটিরিজিন ট্যাবলেট খাচ্ছি। এছাড়া গ্যাসের সমস্যা থাকায় তিন বেলা ভরা পেটে অ্যান্টাসিড খাচ্ছি।’ সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় এ পর্যন্ত ৬৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন নগরীর করিমনগর এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আজিজুর রহমান। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে ও রাতে একটি করে অ্যান্টিবায়োটিক জি ম্যাক্স এবং ৩ বেলা তিনটি নাপা, কোনো কোনো দিন ৪টি নাপাও খেয়েছেন। এছাড়া যথারীতি ডায়াবেটিস ও প্রেসারের ওষুধ খেতেন। দিনে ২/৩ বার গরম পানির বাষ্প নাকে-মুখে টানতেন।

গরম পানির ভাপ নিলে তখন তার কাশি কমে যেত, শরীরও ভালো লাগতো। তিনি জানান, গত ২০ এপ্রিল এবং ২২ এপ্রিল দুই দফায় তার নমুনা পরীক্ষার পর ফলাফল করোনা নেগেটিভ এসেছে। চিকিৎসক তাকে ৪ মে পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। করোনা আক্রান্ত রূপসা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মোবাইল সার্ভিসিং প্রকৌশলী নূর আলম খান গত ২১ এপ্রিল মারা যান। তার স্ত্রী করোনা নেগেটিভ হলেও তার ২ ছেলে ফাহিম (১৪) ও মাহিম (৩) করোনা পজেটিভ। তারা বাড়িতেই চিকিৎসাধীন রয়েছে। নূর আলমের স্ত্রী মানসুরা আকতার স্বপ্না জানান, ২ ছেলের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তাদের এখন আর জ্বর-কাশি নেই। বাচ্চা ২ জনের কারও ওষুধ খাওয়া লাগছে না।

রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নাজনিন নাহার জানান, তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিন বেলা তিনটি প্যারাসিটামল, সকালে ও রাতে হিস্টাসিন এবং সকালে ও রাতে এজিথ্রোমাইসিন ৫০০ এমজি ওষুধ খাচ্ছেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়াটারে আইসোলেশনে রয়েছেন। রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাসের এখনও কোনো ওষুধ বের হয়নি। তবে করোনা আক্রান্তদের সাধারণত জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সে কারণে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাকে অবস্থা বুঝে এজিথ্রোমাইসিন বা জি ম্যাক্স ৫০০ এমজি, নাপা বা নাপা এক্সট্রা বা প্যারাসিটামল এবং হিস্টাসিন বা সিটিরিজিন বা মন্টিয়ার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া গরম পানি গড়গড়া করা কিংবা নাকে-মুখে গরম পানির ভাপ নেওয়ার জন্যও পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ জানান, করোনা আক্রান্ত প্রত্যাশা আবাসিক এলাকার পুলিশ সদস্য আলী আজম খানের শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় তাকে ২৭ মার্চ বিকালে খুলনা করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া করোনা আক্রান্ত খুলনা মেডিকেল কলেজের নার্স শীলা রানী দাস, নগরীর মহেশ্বরপাশা কালিবাড়ি এলাকার বিষ্ণু দাস এবং রূপসা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের বৃদ্ধা জরিনা বেগমকে ৩০ এপ্রিল রাতে করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের কাউকে এখনও আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হয়নি।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ জানান, করোনা আক্রান্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ জন চিকিৎসক বর্তমানে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ডা. মাসুদ আহমেদ এখনও অসুস্থ্য, অন্য ২ জনের অবস্থা মোটামুটি ভালো। সিভিল সার্জন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইইডিসিআর এর নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা করা হচ্ছে।


ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top