সেবা ডেস্ক: গত সাতদিন ধরে লকডাউনে আছেন প্রাণঘাতি নভেল করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়া দিনমজুর আলম ও তাঁর আশপাশের ছয়বাড়ি। শুধু আলম ছাড়া বাকি পাঁচ বাড়ির লোকজন মোটামুটি স্বচ্ছল। দিন এনে দিন খাওয়া দিনমজুরের স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় ওই দিনমজুরের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিন উপজেলা প্রশাসন তাঁকে ১০ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, সয়াবিন, এক কেজি আলু ও এক কেজি লবন দিয়ে আসেন। বাড়িতে সবজি ও মসলা কিছুই ছিল না। শুধু চাল ছাড়া চারদিনেই উপজেলা প্রশাসনের ওই খাদ্য সহায়তা শেষ হয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার ওই দিনমজুর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে ফোন করেও কোনো সুরাহা পাননি। বৃহস্পতিবার ওই পরিবার শুধু পেঁয়াজ দিয়ে পানথা ভাত খেয়েছে। উপায়ন্তর না পেয়ে ওই দিনমজুর সখীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সমকালের সখীপুর প্রতিনিধি এনামুল হককে ফোন করে তাঁর মানবেতর জীবনযাপন করার কথা বলে কান্না করেন বলে জানা যায়।
শুক্রবার চাল, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ ছাড়া রান্না করার আর কিছুই ছিল না তাঁর। শুক্রবার দুপুরে ওই সংবাদকর্মী যাদবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম আতিকুর রহমান আতোয়ারের সঙ্গে ওই দিনমজুরের মানবেতর জীবনযাপন করার বিষয়টি শেয়ার করেন।
তিনি (চেয়ারম্যান) ওই সাংবাদিককে চাল, ডাল ও সবজি কেনার জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা দেন। সাংবাদিক এনামুল তাঁর নিজের পকেট থেকে এক হাজার ও নজরুল ইসলাম নাহিদ নামের আরেক সাংবাদিকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে মোট সাড়ে তিন হাজার টাকার বাজার করে শুক্রবার বিকেলে ওই দিনমজুরের বাড়িতে হাজির হন। ২০ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি, সেমাই, গুড়ো দুধ, সাবান, মসলা, সবজি ও ৫০০টাকার ওষুধ পেয়ে ওই দিনমজুর আনন্দে কেঁদে ফেলেন। পরে আলমের হাতে মেয়রপুত্র হাসান আজাদের দেওয়া নগদ ৫০০ টাকাও দিয়ে আসেন।
দিনমজুর আলম বলেন, ‘আমি করোনা রোগী। আমার লেবুর রস, ডিম, ফলমূল খাওয়ার কথা ছিল। আমি শুধু ভাত, আলু ভর্তা ও ডাল খেয়েছি। গত ছয়দিনে কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। অথচ সখীপুরে প্রতিদিন শত শত কর্মহীন, দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা ও ঈদ উপহার দিচ্ছে। কই কেউ তো আমার বাড়িতে এল না। আমি করোনা রোগী। আমার বাড়িতে আসতে সবাই ডরায় (ভয় পায়)।’
সখীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ অপরিচিত এক নম্বরে ফোন আসে। ওই প্রান্ত থেকে বলে, আমাকে চেনেন না ? আমি বহেড়াতৈলের সেই করোনা রোগী। আমার নাম আলম। এই বলে সে কেঁদে দেন। বলে, আমি পানথা ভাত খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। আমাকে একটু সহযোগিতা করেন।’
আলম বলেন, ইউএনও স্যারকে ফোন দিয়েছিলাম তিনি বললেন, ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন দিতে। ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন দিলে তিনি বলেন, যা দিয়েছি, তাই খেয়ে আল্লাহ আল্লাহ করেন, আল্লাহকে ডাকেন। পরে চেয়ারম্যান সাহেব বৃহস্পতিবার তিনি আমার দুঃখ শোনে এক পোয়া কাঁচা মরিচ ও এক কেজি পেঁয়াজ পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে যেখানে কোনো সবজি নেই সেখানে কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে কি হবে ?
সাংবাদিক নজরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আতোয়ার চেয়ারম্যানের কাছ থেকে নেওয়া ১৫০০ টাকা, আমার ও সাংবাদিক এনামুল ভাইয়েরসহ সর্বমোট সাড়ে তিন হাজার টাকার প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, ঈদ সামগ্রী, মসলা ও সবজিসহ ওই বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসি। এতগুলো বাজারে দেখে আলম কেঁদে ফেললেন। আমরা দুই সাংবাদিক তাঁর খোঁজ খবর নেওয়ায় সে খুবই খুশি হন।
আলম বলেন, সাংবাদিকরা যা কিছু দিয়েছেন তা এক সপ্তাহ খাওয়া যাবে। আমি আর কারও কাছে হাত পাতবো না। এক সপ্তাহ পর থেকে আমি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাবো।
আলমের অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বহেড়াতৈল ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফেরদৌস শুক্রবার বিকেলে বলেন, আজ শনিবার তাঁর বাড়িতে চাল, ডালসহ যাবতীয় খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। বৃহম্পতিবার ওষুধসহ কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাঁর বাড়িসহ আশপাশের আরও পাঁচবাড়ি লকডাউন ঘোষণা হয়। ওই দিনমজুর আলমের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা ও তাঁর দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে।