ব্যবসায়ীদের চোখে জ্বলে উঠলো আশার আলো

S M Ashraful Azom
ব্যবসায়ীদের চোখে জ্বলে উঠলো আশার আলো

সেবা ডেস্ক: ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শর্ত-সাপেক্ষে আগামী রবিবার থেকে সারাদেশের দোকানপাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে এবার আশার আলো দেখছেন পোশাক খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাই ঈদ বাজার ধরতে পোশাকের পাশাপাশি ঈদের আনুষঙ্গিক অন্যসব পণ্য বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার রাজধানীর ইসলামপুরের পাইকারি মার্কেট থেকে ট্রাকবোঝাই করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পোশাক পাঠিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিন রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জ থেকেও ঈদের তৈরি পোশাক দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা জানালেন, করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই অনেক ব্যবসায়ী ঈদের পোশাক তৈরি করে রেখেছিলেন। তবে সরকারী সিদ্ধান্তে দোকান খুললেও পোশাকের খুচরা বিক্রেতারা বেচাকেনা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তারা মনে করছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অনেকেই কেনাকাটা করতে বের হবেন না। এছাড়া ঢাকায় পর্যাপ্ত বিক্রয়কর্মীও নেই। অনেকেই বাড়িতে গিয়ে আটকা পড়েছেন। তারপরও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান চালু করবেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। এ ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপরে কয়েক ধাপে সরকারী ছুটি বাড়ানো হয়। আগামী ১৬ মে পর্যন্ত দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা থাকলেও সোমবার বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়ে ১০ মে থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশের শপিংমলগুলো খোলা রাখা যাবে জানিয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর সামনে রেখে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। এক্ষেত্রে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলতে হবে। দোকান খোলার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে সকল ধরনের ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই অনেক ব্যবসায়ী ঈদের পোশাক তৈরি করে রেখেছিলেন। কিছু ব্যবসায়ী করোনার মধ্যেও শ্রমিক দিয়ে কারখানা চালু রেখেছিলেন। তবে দোকান বন্ধ থাকায় পাইকারি বা খুচরা বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সরকারের সিদ্ধান্তে দোকান খুলতে পেরে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা। ইসলামপুরে বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির নিবন্ধিত ছোট-বড় দোকান রয়েছে প্রায় চার হাজার। এর বাইরে আরও অন্তত ছয় হাজার ছোট ও মাঝারি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন টং মার্কেট, হাজি শরফুদ্দিন ম্যানশন, হাজী ইউসুফ ম্যানশন, আমানউল্লাহ কমপ্লেক্স, হাজী কে হাবিবুল্লাহ কমপ্লেক্স মার্কেট, লতিফ টাওয়ার, আহসান মঞ্জিল (মিউঃ) সুপার মার্কেট, এ মাবুদ রাইন টাওয়ার, লায়ন টাওয়ার, মদিনা ভবন, হাজী শামসুদ্দিন ম্যানশন, ২৪ নম্বর মসজিদ মার্কেট নুরজাহান ম্যানশন, হালিম প্লাজা, সোনার বাংলা মার্কেটসহ আশপাশের বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাইকারি বেচাকেনা হয়। এসব দোকানে সালোয়ার-কামিজ, শার্ট-প্যান্ট-পাঞ্জাবি, শাড়ি-লুঙ্গি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের থান ও গজ কাপড় বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর গাউসিয়া থেকে শুরু করে নিউমার্কেট, বিভিন্ন বুটিক ও ফ্যাশন হাউসসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায় ইসলামপুরের পোশাক। রোজার এই সময়ে ইসলামপুরে পাইকারি বিক্রি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব কিছু বন্ধ ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার ইসলামপুরের পাইকারি মার্কেট থেকে ট্রাকবোঝাই করে যশোর, কুষ্টিয়া, জামালপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঈদের পোশাক পাঠিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ শামসুল আলম সবজল বলেন, ইসলামপুরে কাপড় কিনতে সারাদেশের খুচরা ব্যবসায়ীরা আসেন। এবার আমাদের প্রস্তুতিও ভাল ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু এলোমেলা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ বছর ইসলামপুরের ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা। দেরি হলেও শপিংমল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এখন দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ শুরু করেছেন। সে মোতাবেক পণ্য পাঠানো শুরু হয়েছে।

ইসলামপুরের পাশাপাশি দেশের পোশাক বাজারের বড় সরবরাহ হয় ঢাকার পাশের কেরানীগঞ্জ থেকে। এখানকার হাজার হাজার কারখানা জিন্স ও গ্যাবার্ডিন কাপড়ের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ ও বাচ্চাদের হরেক রকম পোশাক তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। আবার বিভিন্ন জেলার ছোট ছোট ব্র্যান্ড যাদের একটি বা দুটি শোরুম রয়েছে, তারাও এখান থেকে নিজস্ব ডিজাইন ও কাপড়ে পোশাক বানিয়ে নেয়। কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকরা জানিয়েছেন, এলাকায় প্রায় সাত হাজার তৈরি পোশাকের কারখানা রয়েছে। আর ৯ থেকে ১০ হাজার দোকান রয়েছে, যারা পাইকারি পোশাক বিক্রি করে। এসব কারখানা ও দোকানে কর্মসংস্থান হয়েছে দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের। দেশের তৈরি পোশাকের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই সরবরাহ হয় কেরানীগঞ্জ থেকে। সারাদেশের নিম্ন আয়, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনা করে এখানে পোশাক তৈরি হয়। রমজান শুরুর দুই মাস আগে থেকেই ঈদ উপলক্ষে পোশাক বানানো হয়। পোশাক বিক্রি হয় শব-ই-বরাতের পর থেকে। চলে ২০ রোজা পর্যন্ত। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারী বন্ধ ঘোষণার পর থেকে কেরানীগঞ্জের দোকানপাট বন্ধ। ফলে ঈদ উপলক্ষে তৈরি করা কোন পোশাকই বিক্রি হয়নি। সরকারী সিদ্ধান্তে মার্কেট-শপিংমল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি স্বাধীন শেখ বলেন, এ বছর এক টাকারও বৈশাখী পোশাক বিক্রি হয়নি। অথচ অধিকাংশ ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ বৈশাখী পোশাক তৈরি করেছিলেন। রোজার ঈদ ঘিরেও আমাদের প্রস্তুতি ভাল ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে ঈদের পোশাক তৈরি বন্ধ করে অনেক ব্যবসায়ী মাস্ক তৈরি করেছেন। এবার মার্কেট-শপিংমল খোলা হলে ব্যবসায়ীদের কিছুটা হলেও ক্ষতি পোষানো সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে খুচরা, পাইকারি ও উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। এর মধ্যে খুচরা ব্যবসায়ীরা রয়েছেন মহা দুশ্চিন্তায়। তারা মনে করছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অনেকেই কেনাকাটা করতে বের হবেন না। এছাড়া ঢাকায় পর্যাপ্ত বিক্রয়কর্মীও নেই। অনেকেই বাড়িতে গিয়ে আটকা পড়েছেন। তারপরও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান চালু করবেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ঢাকা নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের আগমন ও বেচাকেনা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। গাউসিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী হাজী মকবুল হোসেন বলেন, শর্তসাপেক্ষে শপিংমল ও মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এই সিদ্ধান্তের পর যেন পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের আগে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে খুশি তারা। মিরপুর ১ নম্বর এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ রিংকু বলেন, গত দু’দিন দোকান খুললেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়ে রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে মার্কেট বন্ধ রয়েছে। অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। ভেবেছিলাম দোকান-পাট, মার্কেট ঈদের আগে আর খুলবে না। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তের পর মনে হচ্ছে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাচ্ছি। আজিজ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী রাসেল সিকদার বলেন, এতদিন ধরে সব বন্ধ। দোকান ভাড়ার টাকাটা পর্যন্ত বাসা থেকে আনতে হয়েছে। এখন যে কোন শর্ত সরকার দিক, আমরা তা মেনে নিয়ে দোকান খুলতে চাই। ঈদের আগে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য সুদিন বয়ে আনতে পারে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, দোকান খোলার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আনন্দ ফিরে এসেছে। দোকান খোলা হলে সরকারের দেয়া সব শর্ত বা নির্দেশনা মেনেই দোকান খোলা রাখতে হবে। কোন ধরনের অনিয়ম করা যাবে না। সরকার যেমন দেশের সব জনগণের কথা চিন্তা করে, ক্রেতা বা আমাদের কথাও চিন্তা করেছে, ঠিক তেমনি আমাদেরও সরকারের নির্দেশনাও মেনে চলা উচিত। তিনি বলেন, প্রত্যেক শপিংমলের প্রবেশপথে হাত ধোয়া বা জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। পাশাপাশি অবশ্যই যানবাহনকে জীবণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহসান বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আমরা সবাই খুব খুশি। ঈদের আগে আমাদের ব্যবসায়ীদের দোকান-পাট, শপিংমল খোলা খুব জরুরী ছিল।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top