
রফিকুল আলম, ধুনট: পুরো এলাকা জুড়ে লকডাউন। ঘাটে বাঁধা সারি সারি নৌযান। নদীর বুকে ছুটে চলা মাঝি মাল্লাদের নেই কোন কর্মব্যস্ততা। নেই হাঁক-ডাক। শ্রমিকদের কর্মকান্ডে স্থবিরতা। ঘাটের দোকানপাটও বন্ধ। থেমে গেছে তাদের সংসারের চালিকা শক্তি। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্দিন যাচ্ছে তাদের। কেউ ডাকলেই জীবনের মায়া ত্যাগ করে নৌযান চালাতে চান তারা। স্বল্প আয়ে জীবন চলা এই মানুষ গুলোর জীবন থামিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। এটি বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে বহমান যমুনা নদীর শহড়াবাড়ি নৌঘাটের চিত্র।
জানা গেছে,শহড়াবাড়ি ঘাট থেকে বৈশাখী চর, নাটুয়ার পাড়া, শংকরপুর, সানবান্ধা ঘাট, বোয়াল চর, মাঝিড়া, মল্লিকপাড়া, মেলানদহ চর, কালিবাড়ি, মাঝিড়া, শনপচা, ধারাবর্ষা, তারাকান্দি ও কেষ্টার চরে ইঞ্জিন চালিত নৌকা যাতায়ত করে। প্রতিবছর এই ঘাট বগুড়া জেলা পরিষদ থেকে বার্ষিক ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ টাকায়।
শহড়াবাড়ি নৌঘাটের ইজারাদার হযরত আলী জানান, এই ঘাট থেকে যমুনা নদীর ১৪টি রুটে শতাধীক নৌযান চালচল করে। প্রতিদিন এসব নৌকায় মালামাল ওঠানো এবং নামানোর কাজে জড়িত পাঁচ শতাধীক শ্রমিক। করোনার প্রভাবে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট অচল হয়ে পড়েছে। ঘাটের মাঝি মাল্লা, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে পড়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি নিজেও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
নৌঘাটের মাঝি মাল্লা ও শ্রমিকেরা জানান, প্রতিদিনের আয়ের টাকা দিয়েই চলত তাদের সংসার। প্রথম দিকে তারা ভেবেছিলেন অল্প কিছুদিন বন্ধ থাকার পর হয়তোবা আবারও নৌযান চালাতে পারবেন। তারপর তাদের আর্থিক কষ্ট কেটে যাবে। সেই আশায় ধার-দেনা করে যেনতেন ভাবে পার করেছেন দেড় মাস। কিন্ত এখনও নৌঘাট চালু হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে অর্থনৈতিক সংকটের চিন্তায় তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। দিন গুনছেন, কবে প্রাণ ফিরে পাবেন তাদের জীবিকার সহায়ক সেই নৌঘাট।
ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল কমির আপেল জানান, যমুনা নদীর নৌঘাটের মাঝি-মাল্লা ও শ্রমিকেরা এখন বেকার। কর্মহীন এই সব মানুষ গুলো পরিবার পরিজন নিয়ে নিদারুন কষ্টে দিন পার করছে। সরকারিভাবে কিছু সংখ্যক শ্রমিককে সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে জরুরী ভিত্তিতে আরও সরকারি-বেসরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন। তিনি কর্মহীন এসব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।