সারাদেশের ৭০ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালু হচ্ছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

S M Ashraful Azom
0
সারাদেশের ৭০ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালু হচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সেবা ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাসপাতালগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিগিগরই দেশের ৭০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হবে। এছাড়া ১ হাজার হাই ফ্লো অক্সিজেন নেজাল ও ১০ হাজার সিলিন্ডার কেনা হচ্ছে। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানিয়েছেন।


স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনায় বহির্বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যু হার কম। শনাক্ত বিবেচনায় আমেরিকায় মৃত্যু হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ইউরোপের কোনো কোনো দেশে মৃত্যু হার ৯ থেকে ১০ ভাগ। বহির্বিশ্বে গড় মৃত্যু হার ৬ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে মৃত্যু হার ১ দশমিক ২৯ শতাংশ। এতে স্পষ্ট যে বাংলাদেশে চিকিত্সাব্যবস্থা ভালো। তিনি বলেন, দেশে মোট আক্রান্তের ৮৫ ভাগই ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বাসিন্দা। বাকি ১৫ ভাগ সারাদেশে। সম্প্রতি নরসিংদীতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আর ভাইরাস রেখে অর্থনীতি বেগবান হবে না। বিশ্বও পারবে না।

যখন চীনে সংক্রমণ শুরু হয় তখন বাংলাদেশ কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, চায়না থেকে ভাইরাসটি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম দিকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্বের কোনো দেশই প্রস্তুত ছিল না। তখন দেশের এয়ারপোর্টগুলোতে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। জ্বর মাপার পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। একই সঙ্গে যাত্রীদের উপদেশ দেওয়া হয়, জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার এবং আইসোলেশনে থাকার। বিমানবন্দর দিয়ে যারা আসত তাদের একটি স্লিপ দেওয়া হতো। সেখানে কোন দেশ থেকে এসেছে, কোথায় থাকবে সব কিছুর তথ্য থাকত। পরে ঠিকানা অনুযায়ী তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়া হতো। এভাবে মনিটরিং করা হতো। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু আছে। পাঁচটি থেকে বাড়িয়ে ৫০টি হটলাইন চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, উহান প্রদেশে যখন বাংলাদেশি দেড় শতাধিক ছাত্র আটকা পড়ে, তখন বিশেষ ফ্লাইটে করে তাদের দেশে আনা হয়। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ বাংলাদেশি দেশে আসতে থাকেন। এরাই সর্বনাশ করেছে। কোয়ারেন্টাইনে না থাকায় মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। ইতালিফেরতরা তো কোয়ারেন্টাইন না মানতে রীতিমতো আন্দোলন শুরু করে দেয়। এরপর দেশে যখন ভাইরাসটি দেখা দেয়, তখন দেশে কোভিড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়। জেলা থেকে উপজেলা পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়। প্রথম দিকে পিপিই সংকট ছিল। পরে সেই সমস্যার সমাধান করা হয়। ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ৩০ লাখ পিপিই প্রদান করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পিপিই মজুত রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা এক সপ্তাহ সেবা প্রদান করে ২১ দিন বাইরে থাকে। এক্ষেত্রে তিন গুণ জনবল প্রয়োজন হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ডাক্তার ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেন। ১৫ দিনের মধ্যে তাদের যোগদানের ব্যবস্থা করি। এছাড়া ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। করোনা চিকিত্সাসেবার প্রটোকল বা গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ পর্যন্ত সাত বার গাইডলাইন পরিবর্তন করেছে। বর্তমানে সপ্তম গাইডলাইন চলছে। বাংলাদেশেও সেই গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিত্সাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সব সেক্টরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মিডিয়াতে সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত আছে। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য হোটেলে থাকা-খাওয়া ও চলাচলের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন খুবই প্রয়োজন। এ জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বর্তমানে ৬৭টি ল্যাবে করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন ১৮ হাজার পরীক্ষা করা হচ্ছে। একজনের পরীক্ষা করতে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। দিনে ২০ হাজার পরীক্ষা করলে ১০ কোটি টাকা খরচ হবে। আইসিইউতে ভেন্টিলেটর ১৩৫ থেকে আরো অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৩ হাজার ৫০০ হেলথ টেকনোলজিস্ট নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনায় আক্রান্তের ৮০ ভাগের কোনো উপসর্গ নেই। এরা বিপজ্জনক। তাদের মাধ্যমে রোগ ছড়াচ্ছে। তাই রিপোর্ট পজিটিভ হলে নিরাপদে থাকতে হবে। তিনি বলেন, চীন থেকে যে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক টিম এদেশে আসে, তারা সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা দেশের বর্তমান সেবা ব্যবস্থাপনা দেখেছে। এটি আরো উন্নত করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলা করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে সম্ভব না। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানে না, সামাজিক দূরত্বও মেনে চলছেন না। এক্ষেত্রে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সবকিছু অবহিত করেই তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। দেশের ১৫ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। তাদের জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।

জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর ৮০ ভাগই যায় বেতন-ভাতা দিতে। বাকি টাকা হাসপাতালগুলোতে কেনাকাটায় খরচ হয়। মন্ত্রণালয়ে থাকে আপদকালীন ২৫০ কোটি টাকা। যা একটি হাসপাতালে বরাদ্দের চেয়ে কম। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় হয়। কেনাকাটা, টেন্ডার সবকিছুই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টররা করেন। এছাড়া স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সরাসরি কেনাকাটা করে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতালের দেখভাল করছে সরকার। সেখানে ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বেড সবকিছুই আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ১৪০০ বেডের একটি হাসপাতাল চালু হচ্ছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। এই হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ডাক্তার-নার্সদের জন্য ২৫০ বেড প্রস্তুত করার অর্থ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top