সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে দেশকে করোনামুক্ত করতে

S M Ashraful Azom
0
সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে দেশকে করোনামুক্ত করতে

সেবা ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব প্রথম দিকে চীন থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চীন লকডাউন করলেও স্পেন, ব্রিটেন ও আমেরিকা তাদের সংক্রমিত এলাকাগুলো লকডাউন করেনি। ফলে সেখানে ব্যাপক হারে মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করতে শুরু করে। আমরাও প্রথম দিকে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বিমান আসা-যাওয়া বন্ধ করতে পারিনি। যেহেতু অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরছিলেন। যারা এসেছেন তাদের সঠিক ব্যবস্থাপনা করাও সম্ভব হয়নি। তাই আমাদের দেশেও রোগটি ছড়িয়ে পড়ে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
জাহিদ মালেক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউন দিলাম কিন্তু সেটা মানুষ সেভাবে মানেনি। সে কারণে এপ্রিল মাসে দেশে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার। কিন্তু ঢিলেঢালা লাকডাউনের কারণে মে মাসে এটি ৫০ হাজারে উন্নীত হয়। এ সময় সবাই বাজার করতে শুরু করলো, হাট-বাজার উন্মুক্ত হয়ে গেলো। পাশাপাশি ঈদকেন্দ্রিক বাজার। এছাড়া একবার গার্মেন্টস খোলা হলো আবার বন্ধ করা হলো। এখানেই শেষ নয়; ঈদ উপলক্ষে মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে ফেরি পারাপার হলো সেসব কারণেই দেশে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলো। আর এই সময় এটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ সাধারণ ছুটির পর দেশের ১৫ শতংশ দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তুা করে লকডাউন শিথিল করা হলো। কিন্তু পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি জানাই। কিন্তু গোটা দেশ লকডাউনের প্রস্তাব দেইনি। তবে যে পাঁচটি শহর হটস্পট সেইগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা সেটা আলোচনা করি। তিনি বলেন, বিশ্বের যেখানেই সংক্রমণ বেড়েছে, সেখানেই লকডাউন করেছে, সব ধরণের মুভমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে, ভাল ফলও পেয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, লকডাউন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একক কোন সিদ্ধান্ত নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথ্য দিতে পারে কিন্তু বাস্তবায়ন করবে স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে। বর্তমানে যে কার্যক্রম চলছে সেটির সঙ্গে এইসব মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যলায়, কেবিনেট বিভাগ, আইসিটি মন্ত্রণালয় জড়িত রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা ফলাফলের ওপর আইসিটি মন্ত্রণালয় ম্যাপিং করছে। তারা রেড, ইয়ালো, গ্রিন জোন নির্ধারণ করছে। ৬০ বা এর অধিক হলে রেড, কম হলে ইয়ালো এবং আরও কম থাকলে গ্রিন। সেই ভাবেই কাজ চলছিল। কিন্তু এরই মধ্যে জোন ছোট করতে বলা হলো। এখন বিশেষজ্ঞরা সেই কাজই করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টেকনিক্যাল কমিটি এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন করেননি। ঢাকা শহরের অলি-গলি বেশি এবং একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িত। এলাকাগুলোও অনেক বড়। তাই পরিকল্পনায় সময় লাগছে। সবকিছু ঠিক করে অনুমোদন হলেই সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশে করোনার ভয়াবহতা প্রতিদিনই বাড়ছে এক্ষেত্রে র‌্যাপিড টেস্টে যাবে কিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, চীন থেকে আসা মেডিকেল টিম বলে গেছেন, র‌্যাপিড টেস্টের প্রতি তারা গুরুত্ব দেননি। এতে অনেক ভুল হওয়ার শঙ্কা থাকে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও র‌্যাপিড টেস্টের অনুমোদন দেয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। তারা যদি বলে তখন বিষয়টি ভেবে দেখা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কিভাবে দেশকে করোনামুক্ত রাখা যায়। এ জন্য যেখান থেকে যে ধরনের পরামর্শ আসছে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সেগুলো নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ ও নির্দেশনায় কাজ করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস দুর্যোগটি সবার কাছেই নতুন তাই আমাদের বিশেষজ্ঞদেরও কিছু সমস্যা হচ্ছে পরিস্থিতি আঁচ করতে। তবে যেভাবেই হোক সমস্যার সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। জাহিদ মালেক বলেন, প্রথমে বলা হয়েছে ভেন্টিলেশন লাগবে, সেগুলোর ব্যবস্থা করা হলো। অক্সিজেন সিলিন্ডারও যথেষ্ট আছে। এখন বলছে হাই ফ্লো অক্সিজেন লাগবে, আমরা দশ হাজার সিলিন্ডার আমদানি করছি। প্রয়োজনে আরও করা হবে। তবে সবার কাছেই এই পরিস্থিতিটি নতুন বিষয়। তাই অনেক সময়ে কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যদিও পরবর্তীতে তা কাটিয়ে উঠছি।


ভেন্টিলেটরের বিষয়ে জাহিদ মালেক বলেন, সরকারিভাবে ৫শ’র মতো আছে। আগে অল্প ছিল। গত বছরই ২২৫টি আনা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনার আগে প্রতি জেলায় ৫টি আইসিইউ বেড, ১০টি ডায়ালাইসিস বেড ও হার্টের রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর রাখা হতো। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর ২/৩ মাস আগেই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ও নির্দেশে কুর্মিটোলা, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল, চট্টগ্রাম মেডিকেল ও কক্সবাজারে ভেন্টিলেটর বাড়ানো হয়। তিনি বলেন, ভেন্টিলেটর কিন্তু সবার দরকার নেই। ক্রিটিকাল রোগীদের প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে ১ হাজার ভেন্টিলেটর আছে। এখন কিন্তু ভেন্টিলেটর নিয়ে কথা কম। অথচ কিছুদিন আগেও এ নিয়ে সবাই ক্ষুদ্ধ ছিল।

এখন হাই ফ্লো অক্সিজেনের কথা বলছে বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর হাই ফ্লো অক্সিজেন আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তিনি বলেন, করোনা শুরুর পর বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। কাঁচামাল থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি আমদানি বন্ধ ছিল। এই মহামারীর সাথে কেউ পরিচিত নয়; তাই আগে থেকেও ব্যবস্থা নেয়াও সম্ভব ছিলো না। সমস্যা কি ধরণের হবে তাও বোঝা যাচ্ছিল না। এখন বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। কাঁচামাল থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ দ্রুতই সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে এ জন্য কাউকে দোষারোপ না করে সবাইকে একসঙ্গে দেশের জন্য কাজ করার আহবান জানান তিনি।

জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সব ক্রয় হয় স্বাস্থ্য অধিদফতর ও এর অধীন ১৯ পরিচালকের চাহিদার ভিত্তিতে। ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্তি প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, আমার দফতরে কোন ঠিকাদার আসার সুযোগ নেই। তবে যারাই অন্যায় করবে তারাই ব্ল্যাক লিস্টেড হবে। অধিদফতর ও সিএমএসডি মিলে ক্রয় করছে। তারা বলতে পারবে ভালো-খারাপ। তবে সবাই খারাপ তা বলা যাবে না। ফিলিপস, সিমেন্স, তোশিবাসহ ভালো ভালো কোম্পানির মালও অনেকে দিচ্ছে। তাই খারাপ হলে অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠান কালো তালিকায় আসবে।
কেন্দ্রীয় ওষুধাগার (সিএমএসডি) প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সেখানকার বিগত পরিচালক ৯শ’ কোটি টাকার কেনাকাটা করেছে। এখনো কোন বিল মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি। মাস্ক ক্রয়ে অনিয়মের বিষয়ে জাহিদ মালেক বলেন, প্রত্যেকটা ক্রয় হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে। মহাপরিচালকের নেতৃত্বে সিএমএসডিসহ ১৯ পরিচালক ক্রয়সহ অন্যান্য কাজগুলো করেন। সবকিছু শেষে মন্ত্রণালয়ে আসে। আর প্রত্যেকটি কাজের অর্ডার, অনুমোদন, দাম ও মাল বুঝে পাওয়াসহ সব ডকুমেন্ট আছে। সেগুলো দেখলেই হয়। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি বা কাউকে জড়ানোর কিছু নেই।


স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমিই উদ্যোগ নিয়ে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় ডেডিকেটেড করেছি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের আধুনিকায়ন ও এক্সটেনশনের ব্যবস্থা করেছি। দশ হাজার ডাক্তার ও ১৫ হাজার নার্স নিয়োগ প্রধানমন্ত্রী নিজে অনুমোদন দিয়েছেন। সারাদেশে আইসিইউ স্থাপন ও ভেন্টিলটর সংযুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমআরআই, সিটিস্ক্যানসহ ১২শ’ কোটি টাকার ভারী যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সেগুলো মেরামতের নির্দেশ দিয়েছি। নতুন মেশিন কেনার ক্ষেত্রে ৮ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানের শর্ত প্রদান করেছি। বিগত ৫০ বছরে স্বাস্থ্যখাতে এতো কাজ হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর শাসনামলে হয়েছে। যদিও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দেড় বছর হতে চলেছে। এরমধ্যে এক বছর গেল ডেঙ্গু। আর ছয় মাস যাচ্ছে করোনা নিয়ে। করোনার কারণে অনেক পিছিয়ে গেছি। স্বাস্থ্যখাতের অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও এই দুর্যোগের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
সবশেষে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যখাতের নানা উন্নয়ন চিন্তা বাস্তবায়নে আমাকে মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। যতদিন সুযোগ থাকবে আমার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত নির্দেশ অনুসরণ করে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন করা।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top