
শফিকুল ইসলাম: পানি কমছে আর বারছে যখন খুশি আসে আবার ফিরে যায়। গত কয়েক সপ্তাহে আইছিল পানি এলাকার ফসলের অনেক ক্ষতি হইছে। সকালে হঠাৎ উইডা দেহি ব্রহ্মপুত্র নদে আবার পানি আইছে।
কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের চর ইটালুকান্দা গ্রামের দিন মজুর মোগল হোসেন । তিনি জানান, চর ইটালুকান্দা গ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে দিন মজুুরী কাজ করে সংসার চলে তার। করোনা ভাইরাসের কারণে গত তিন মাস থেকে কাজকার্ম নেই। এদিকে আবার বন্যা । ঘরবাড়ি জমি সব তলিয়ে গেছে। কোনো রকমে চর জাগা ছোট একটি ডিপে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন রাত কাটছে নদীর দিকে তাকিয়ে। নদের পানি কমার অপেক্ষায়। যে খানে চকি বসিয়ে দিন,রাত কাটছে সেখানেও পানি। ঘরের ছাউনি হিসাবে রাতের বেলায় পলিথিন দিনের বেলায় খোলা আকাশ। রান্না দিনে একবার তাও আবার বিশুদ্ধ পানির অভাব। মাঝে মাঝে শুধু লবণ মিশিয়ে ভাত খেতে হয়। কিন্তুু ভারতীয় পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা পানিতে ব্রহ্মপুত্র নদের সকল নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয় দেখা দেয় চরম দুর্ভোগ। এই অবস্থায় কাজ নেই পড়েছে অর্থসংকটে। ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমলেও বানভাসি পরিবারের কাছে পৌঁছেনি সরকারি সহযোগীতা ।

এদিকে পানি আসার ১০ দিন পার হলো ঘরে খাবার নেই। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন। পানি কমিয়ে আসছে সংকট হচ্ছে খাবারের। এমন পরিস্থিতিতে তাকিয়ে থাকে সরকারি সহযোগিতার আশায়। অসহায় শিশু ও পরিবার নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে ৫ বারের নদী ভাঙা এই পরিবারের। নিজের জমি বলে কিছুই নেই তার। অন্যের ৬ শতাংশ জমি বন্ধক নিয়ে বাড়ি করে আছে। সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের, বিশুদ্ধ পানি ও খাবার। মোগল হোসেন এর পরিবারে রয়েছে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে বন্যার সময় অনেক কষ্টে দিন পার করছে । তিনি বলেন সরকার যদি নদের পার ভালো করতো তাহলে আমাদের মনে হয় এমন কষ্ট বারবার হতো না। এই বন্যায় শুকনো ও উঁচু জমির সন্ধানে ছুটছে নৌকায় সব কিছু নিয়ে এচর আর ওচরে।

একই গ্রামের বাহর আলী ১১ জন পরিবার সদস্য সংখ্যা নিয়ে নিজ নৌকায় বসবাস। পেশায় নৌকা চালক। নৌকা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে। কিন্তুু ব্রহ্মপুত্র নদে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি হওয়ায় বাড়িঘর তলিয়ে গেছে দিন রাত কাটছে নৌকায়। কৃষি জমিও নেই তাদের। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে এসব চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়।
পাশ্ববর্তী গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো: মগল আলী এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পরিবারটা খুব অসহায়। দিন এনে দিন খেতো। করোনার জন্য কাজ নেই আবার পানি আসছে। খুব কষ্টে দিন চলছে তাদের। এই দুর্যোগ সময় সরকারের সহযোগিতা পেলে এই পরিবার গুলো খেয়ে পড়ে ভালো ভাবে বাঁচতে পারবে।

৬ নং চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ইউপি সদস্য শাজাহান আলী বলেন, আমরা নিজেরাও পানি বন্দি। ব্যক্তি গত ভাবে যতটুকু সম্ভব আমার ওয়ার্ডের মানুষদের সহযোগিতা করছি। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো প্রকার সহযোগিতা পাইনি।
চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কেএম ফজলুল হক মন্ডল জানান, যতটুকু সম্ভব খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সম্ভব মতো সহযোগিতা করবো। এই বন্যায় আমার ইউনিয়নের প্রায় ২২ হাজার মানুষ পানি বন্দি।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান জানান, বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ডুবে যাওয়া বাড়িঘরের ক্ষয় ক্ষতির সহযোগীতার জন্য তালিকা প্রণয়ন করে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।