
রেজাউল করিম বকুল, শেরপুর প্রতিনিধি: ছবিরণ নেছা (৫০)। তিনি মৃত হায়দার আলীর স্ত্রী। বিধবা এই নারী শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার তামাগাও গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শোনান তার ওপর নির্যাতন আর ভিটেমাটি হারানো গল্প। তার ১০ শতাংশ জমিতে একটি বাড়ি ছিল। দুই ছেলেকে নিয়ে সেখানে থাকতেন। বাড়ির পাশে ঝিনাইগাতী মহিলা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ। বাড়িভিটাটি ক্রয়ের প্রস্তাব দেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান। ভিটেমাটি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। পরে অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান ভিটের বদলে ওই বিধবার কনিষ্ঠ পুত্র শরাফত আলীকে কলেজের অফিস সহকারি পদে চাকরি দেয়ার প্রস্তাব দেন। এতেও টালবাহানা করেন। অবশেষে অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান ও তার কলেজের কতিপয় কর্মচারী যায় ওই বিধবার বাড়িতে। তাকে উচ্ছেদের জন্যে গাছে বেঁেধ শারীরিক নির্যাতন করে। এ সময় ওই বিধবার ছেলে সোহেল বাঁধা দিতে গেলে তাকে আটক করে। পরে তাকে দেয় পুলিশের হাতে। এ ব্যাপারে সোহেলসহ ৬ জনের নামে মিথ্যা মামলা করেন। এই ফাঁকে ওই বিধবার বাড়ির মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। গুড়িয়ে দেয় বসতভিটা। সেখানে নির্মাণ করে কলেজের সীমানা প্রাচীর। জেলা হাজত খাটে তার ছেলে। ভিটেমাটি হারান বিধবা ছবিরণ নেছা। এই ঘটনাটি ঘটে প্রায় দুই বছর আগে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি। ওই সময় অধ্যক্ষ খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেনি। এসব নির্যাতনের কথা বলতেই কেঁদে ফেলেন বিধবা ছবিরণ নেছা।
এখানেই থেমে থাকেননি অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান। তার বিরুদ্ধে ওঠেছে নানা দুর্নীতি অনিয়ম ও নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ। (১৬ জুলাই) বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষ খলিলুর রহমানের অপসারণের দাবিতে মানব বন্ধন করেছেন উপজেলার সচেতন মানুষরা। উপজেলা পরিষদের সামনে সড়কে অনুষ্ঠিত মানব বন্ধনে এসে ছবিরণ নেছা বলেন, ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। আমরা আশা করি বিচার পাবো।
মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আজীবন দাতা সদস্য ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. বেলায়েত হোসেন, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবু তাহের, সদস্য আয়শা সিদ্দিকা রুপালি, সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফারুক আহমেদ ও উপজেলা তাতীলীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম প্রমূখ। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে হয়রানী করা হচ্ছে। সম্প্রতি ওই কলেজের এমপিও বঞ্চিত দুই প্রভাষকের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব এর নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ তদন্ত করছেন। তিনি কালের কন্ঠকে বলেন, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। দ্রæতই রিপোর্ট প্রদান করা হবে।

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।