পর্যালোচনা করা হচ্ছে ৪৩টি দেশের চুক্তি

S M Ashraful Azom
0
পর্যালোচনা করা হচ্ছে ৪৩টি দেশের চুক্তি

সেবা ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, আঞ্চলিক সম্পর্কগুলো থেকে যে ধরনের বাণিজ্যিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, সেই সুবিধার পাশাপাশি এখন বাণিজ্য বাড়াতে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের চুক্তির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে ৪৩টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভুটানের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সম্পন্ন হয়েছে। পার্শ্ববর্তী নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সূত্রগুলো জানায়, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা বর্তমানে ৩৮টি দেশে একতরফা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। এরমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশ এবং জাপান, চিলি, নরওয়ে, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা অন্যতম। এ ছাড়া কয়েকটি দেশের সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় (আপটা, সাফটা, বিমসটেক, ডি-এইট) বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ শুল্ক সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব পশ্চিমা বিশ্বে ছড়িয়ে যাওয়ার পর দেখা গেছে, উন্নত বিশ্বের শুল্ক সুবিধার ওপর অতিরিক্ত বাণিজ্যিক নির্ভরশীলতা দেশের বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। এ জন্য আঞ্চলিক চুক্তির পাশাপাশি সরকার এখন দেশে-বিদেশে বাণিজ্য বাড়াতে বিশেষ বিশেষ দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ, পিটিএ করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন কৌশল গ্রহণের পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের নতুন গন্তব্য খুঁজে বের করতে বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স কাজ শুরু করে গত এপ্রিলে। এই টাস্কফোর্স খোঁজ নিয়ে দেখতে পায়, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩টি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য সম্পর্কিত চুক্তি থাকলেও বেশির ভাগ চুক্তিই কার্যকর নয়। এখন সেই চুক্তিগুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যে ৪৩ দেশের চুক্তি রয়েছে সেগুলো হচ্ছে : ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, চীন, ইরাক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, কোরিয়া, মিয়ানমার, কুয়েত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, জিম্বাবুয়ে, জাম্বিয়া, উগান্ডা, সুদান, সেনেগাল, মরক্কো, লিবিয়া, কেনিয়া, আলজেরিয়া, আফ্রিকা, মালি, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, জার্মানি, চেক রিপাবলিক, বুলগেরিয়া, বেলারুশ, ব্রাজিল, আলবেনিয়া, উজবেকিস্তান ও ইউক্রেন। 

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে এই যে ৪৩টি দেশের বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক চুক্তি রয়েছে, এটি আমাদের জন্য বড় ধরনের সম্ভাবনার পথ খুলে দিয়েছে। কারণ কোনো দেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে বছরের পর বছর চলে যায় আলোচনায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে সমস্যা নেই। বিদ্যমান চুক্তিগুলো কিছুটা সংস্কার বা সংশোধন করেই এই ৪৩ দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় নেওয়া সম্ভব।
সচিব জানান, দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো কার্যকর করতে যেসব দেশের সঙ্গে এখনো যৌথ বাণিজ্য কমিশন (জেটিসি) গঠন হয়নি, প্রাথমিকভাবে সেটি গঠন করা হবে। এরপর সেই জেটিসির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে প্রয়োজনমতো প্রস্তাব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নেওয়া হবে বলেও জানান সচিব।

সূত্রগুলো জানায়, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে আলজেরিয়ার করা একটি চুক্তি কার্যকর করতে দেশটির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত রাবাহ লারবি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে পৃথক বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি বলেন, মুক্তবাণিজ্যের প্রয়োজনে দুই দেশের (বাংলাদেশ-আলজেরিয়া) বিদ্যমান চুক্তি সংশোধনও হতে পারে। কারণ আলজেরিয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, তামাক এবং ফার্নিচারের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ আলজেরিয়ায় এসব পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে চায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে-বিদেশে বাণিজ্য বাড়াতে শুধু আলজেরিয়া নয়, এরই মধ্যে ভুটানের সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী নেপালের সঙ্গেও পিটিএ চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে পিটিএ, এফটিএ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরীফা খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে  জানান, ভুটানের সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন চুক্তির দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে মন্ত্রিসভায় সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ একাধিক আঞ্চলিক মুক্ত ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির সদস্য হলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে দেখা যাচ্ছে, এখনো কোনো দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি শুল্ক সুবিধা বিনিময় সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় অগ্রাধিকারমূলক চুক্তি থাকলেও প্রয়োজনীয় প্রটোকল চূড়ান্ত না হওয়ায় সেটি কার্যকর হয়নি। তবে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪৩টি দেশের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করেছে যেগুলো মূলত গুইউইল ধরনের চুক্তি, যাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহযোগিতা বৃদ্ধি, তথ্য বিনিময়, অশুল্ক বাধা দূরীকরণ, ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব চুক্তির কোনোটির মাধ্যমেই শুল্ক সুবিধা বিনিময়ের সুযোগ নেই। এখন জেটিসি গঠনের মাধ্যমে এই চুক্তিগুলো কার্যকর করার পাশাপাশি ভুটানের সঙ্গে এফটিএর বিষয়ে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাধ্যমে মুক্তবাণিজ্যের পথে পথ চলা শুরু হবে বাংলাদেশের।

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top