
রেজাউল করিম বকুল, শেরপুর প্রতিনিধি: “বাপ দাদার আমল থাইক্যা পাট চাষ করি। দাদারা পাট চাষ কইরা ঘর দিছে। বাড়ি করছে। আমরা মেলাদিন পাটের দাম পাই নাই। শেখের বেটি পাটের দাম ঠিক কইরা দিছে। এর লাইগ্যা পাটের দাম পাইতাছি। পাট চাষ করার লাইগ্যা সরহার আমগোর সার দেয়। বীজ দেয়। পরামর্শ দেয়। পাটের ফলনও ভাল অইতাছে। লাভ পাইতাছি।” কথা গুলো বলছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দহেরপাড়া গ্রামের কৃষক মৃত ক্ষৃণ কুমারের ছেলে প্রদীপ চন্দ্র বর্মন। ১৫ আগষ্ট শনিবার সরেজমিন গেলে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, শেখ সাব থাহলে আমরাও ধনী অইতাম। অহন এতো কষ্ট করতে অইতো না।
তিনি জানান, এবার ২৫ শতাংশ জমিতে তোষা হাইব্রীড ৯৮ জাতের পাট চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার টাকা। ২২ মণ পাট হয়েছে। প্রতি মণ পাট বিক্রি করছেন ২ হাজার ২শ টাকায়। তার লাভ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রায় ৩ হাজার টাকা মূল্যের রয়েছে পাট খড়ি। মাত্র ৪ হতে ৫ মাসের ব্যবধানে প্রান্তিক ক্ষুদ্র চাষী এই আয় করছেন। একই গ্রামের বাসিন্দা হানিফ উদ্দিন, সন্তেষ মিয়া, খোজেলু মিয়া ও মোতালেবসহ অনেকে জানান, তারা দীর্ঘদিন পাট চাষ করে লোকসানে পড়েছিলেন। এ কারণে তাদের গ্রামে অনেকেই পাট চাষ থেকে সরে যান। গত বছর থেকে পাটের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারো তারা ফিরে আসছেন পাট চাষে। এতে লাভবান হচ্ছেন তারা। সোনালি আশে স্বপ্ন বুনছেন চাষীরা।
উপজেলা পাট অধিদপ্তর ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় প্রায় ১৫শ বিঘা জমিতে পাট চাষ হয়েছে। প্রায় ২ হাজার কৃষক পাট চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। চলতি মৌসুমে উপযুক্ত সময়ে চাষাবাদ আর সার প্রয়োগ ও আবাহাওয়া অনুকুলে থাকায় তারা এ সফলতা পেয়েছেন। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে পাটের বেশ চাহিদা। দামও ভাল। আগামিতে আরো বেশি জমিতে পাট চাষের কথা ভাবছেন তারা। ভেলুয়া গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আমজাদ আলী জানান, এক সময় পাটের চাষ করে কৃষকরা বদলে দিয়েছেন নিজেদের আর্থিক অবস্থা। ক্রমাগত বন্যা আর পাটের দামে ধস নামায় পাট চাষে আগ্রহ হারায় কৃষকরা। তবুও পাট খড়ি ও পাটের আশের জন্যে কেউ কেউ সীমিত আকারে ধরে রেখেছেন পাট চাষ। কয়েক বছর যাবত পাটের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে পাট চাষ। চকবন্দি গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত ২/৩ বছর পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারি নাই। এ জন্য অনেক পাট নষ্ট হয়েছে। গত বছর থেকে সময় মতো বন্যার পানি আসে। এতে সহজেই পাট জাগ দেন। নি¤œাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষকরা জানান, সম্প্রতি টানা বর্ষণ ও নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভেলুয়া, খড়িয়াকাজীরচর, কু[িড়কাহনীয়া, গোসাইপুর ও সদর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে কিছু পাট ক্ষেতের সামান্য ক্ষতি হয়। তবে পাট জাগের সুবিধা, পাটের বাম্পার ফলন আর দাম বাড়ায় সেই ক্ষতি পুষিয়েও লাভবান হচ্ছেন পাট চাষীরা। কিন্তু যারা এখন পাট জাগ দিচ্ছেন তারা পাটের দাম নিয়ে কিছুটা শংকিত বলেও জানান। উপজেলা পাট অধিদপ্তরের উপসহকারি কর্মকর্তা আশ্রাফুল আলম দৈনিক কালের কন্ঠকে বলেন, আমরা পাট চাষীদের সার ও বীজ দিয়ে সহায়তা করি। পাট চাষের ফলন বৃদ্ধির পরামর্শ দেই। ফলে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও পাচ্ছেন ভাল। তিনি আরো বলেন, পাটের বীজ তৈরিসহ আগামিতে পাট চাষের জন্যে এখনি প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।