৬ বছর কর্মস্থলে না থেকেও বেতন ভাতা উত্তোলন

S M Ashraful Azom
0
৬ বছর কর্মস্থলে না থেকেও বেতন ভাতা উত্তোলন


শফিকুল ইসলাম: কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জেসমিন আখতার কর্মস্থলে না থেকে ঢাকায় বসে মোবাইল ফোনে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ওই কর্মকর্তা তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। অবাগ করার বিষয় হচ্ছে ওই কর্মকর্তা একদিনের জন্যও নিজের কর্মস্থলে রাজীবপুর উপজেলা আসেননি। ঘটনাটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই বাস্তব চিত্র। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে অধিদপ্তরের ওপরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দিনের পর দিন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার সরেজমিনে উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরে খোঁজ খবর নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজীবপুর উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরের দরজায় তালা লাগানো থাকলেও জানালা খোলা পাওয়া যায় প্রায়ই। জানালা খোলা রেখে বছরের পর বছর ওই কার্যালয়ে লাইট, ফ্যান চালু রাখা হয়। তবে অফিসের কাউকে একদিনেও পাওয়া যায়নি। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কর্মকর্তা, অফিস সহকারি ও সহকারি পরিদর্শক কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) রেজাউল করিমের দেখা পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ম্যাডাম ঢাকায় থাকেন। তিনি অফিসে আসেন না। কর্মরত অফিস সহকারি ও সহকারি পরিদর্শক দুইজন মাসে একবার করে অফিসে আসেন। খালি আমি অফিসের দরজা খুলি আর বন্ধ করে থাকি।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেসমিন আখতার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে গত ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে যোগদান করেন। জেলা সমবায় অফিসে যোগদান করেই তিনি ঢাকায় ফিরে যান যা দীর্ঘ সময়েও একদিনেরও জন্যও তার কর্মস্থল রাজীবপুরে আসেননি। তবে প্রতিমাসের সরকারি বেতনভাতা ও আনুষাঙ্গিক খরচের বিল ঠিকই ভোগ করছেন তিনি। কার্যালয়ের অফিস সহকারি জামিউল ইসলাম বেতনভাতা তুলে ওই কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে থাকেন। অফিসের কাগজপত্রে ও বেতনভাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষরের প্রয়োজন হলে ওইসব কাগজপত্র কুরিয়ারের মাধ্যমে তা আদান প্রদান করা হয় বলেও জানিয়েছেন অফিস সহকারি জামিউল ইসলাম। 

এদিকে অফিসের কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকার কারনে কার্যালয়ের অফিস সহকারি ও সহকারি পরিদর্শক পদে কর্মরতরাও তাদের স্যারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। তবে এ দু’জন মাসে একবার করে অফিসে আসেন বেতনভাতা নেয়ার জন্য। কার্যালয়ের একমাত্র সঙ্গী অফিস সহায়ক রেজাউল করিম। তিনি সকাল ১০টার দিকে অফিসের জানালা খুলে দরজায় তালা লাগিয়ে চলে যান আবার বিকালে তা বন্ধ করেন। এ কার্যক্রমও বেশি দিনের নয়। অফিস সহায়ক গত মাসে যোগদান করেছেন। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চরম উদাসীনতা ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারনে সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাধারণ জনগনকে সরকারি যে সেবা পৌঁছে দেয়ার কথা তার ছিটেফোটাও পায় না উপজেলাবাসি। কর্মকর্তার অনুপস্থিতির কারনে সমবায় অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্পূর্নরূপে ভেঙ্গে পড়েছে।

অধিদপ্তরের এক কর্মচারী বলেন, আ’লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক নেতা ম্যাডামের আত্মীয়। এর প্রভাব বিস্তার করেন সমবায় অধিদপ্তরে। ফলে ওপরের কর্মকর্তারাও কেউ কিছু বলেন না, দেখেনও না। ৫ বছরের মধ্যে একদিনও কর্মস্থলে আসেননি তারপরও কিছুই হয় না। সরকারি বেতনভাতা নিয়মিতই তুলছেন। শুনেছি ম্যাডামের স্বামী গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয়ের বড় কর্মকর্তা। ঢাকায় বাড়ি আছে কয়েকটা। অর্থের কোনো অভাব নাই। মোবাইল ফোনে আমাদের নির্দেশনা দেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীরুল ইসলাম জানান, আমি যোগদানের চার মাসের মধ্যে একদিন দেখতে পাইনি। উপজেলা মাসিক সভায়ও অনুপস্থিত। বিষয়টি জানতে পেরে আমি জেলা সমবায় অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি কিন্তু কোনা সাড়া পাইনি। সরকারি চাকরি করে বছরের পর বছরের অফিস ফাঁকি দেয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জেসমিন আখতার চড়া মেজাজে বলেন, আমি রাজীবপুরের কর্মকর্তা ঠিকই কিন্তু ডেপুটিশনে (প্রেষণে) ঢাকায় আছি। তাছাড়া আমি তো সব সময় খোঁজ খবর নিয়ে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তবে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রেষণে থাকার বিষয়টি সত্য নয়।

এ ব্যাপারে জেলা সমবায় কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন এমনটি হতে পারে না। কিভাবে রাজীবপুর অফিসের কার্যক্রম চলে? আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top