দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে গাইডলাইন প্রকাশ করলো মাউশি

S M Ashraful Azom
0
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে গাইডলাইন প্রকাশ করলো মাউশি


সেবা ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সারাদেশের স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এরই মধ্যে মাউশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে গাইডলাইনও প্রকাশ করেছে।

প্রকাশিত গাইডলাইনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বাজেট তৈরিতে নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। এই গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পাওয়া মাত্র শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

গাইডলাইনে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলো তিন ফুট দূরত্বে স্থাপন করতে বলা হয়েছে। গাইডলাইন অনুসারে পাঁচ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে একজন এবং পাঁচ থেকে সাত ফুট দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে দুইজন শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারবে। প্রতিটি বেঞ্চে দুইজন করে ছয়টি বেঞ্চে ১২ জন শিক্ষার্থী বসতে পারবে। স্কুলে ঢোকার আগেই থার্মোমিটার ব্যবহার করে তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতেই এই সকল ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মাউশির গাইডলাইনে বলা হয়েছে, চারটি ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমত, নিরাপদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা করা; দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা; তৃতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরাপদে চালু করা; চতুর্থত, শিক্ষা কার্যক্রম চলাকালে করোনার বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নেয়া।

গাইড লাইনে আরো বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুকরণ’ শীর্ষক নির্দেশিকায় স্কুল-কলেজ খোলার আগে পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় করাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের শিফটিং করে নিরাপদ দূরত্বে ক্লাসে বসা, প্রথম ১৫ দিন শিক্ষা কার্যক্রমে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি এবং দুই মাসের মধ্যে কোনো পরীক্ষা না নেয়ার কথা বলা হয়েছে। ইউনিসেফের সহযোগিতায় ৩৯ পৃষ্ঠার নির্দেশনাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

সংক্রমণের বিস্তার রোধে ব্যবস্থার ব্যাপারে গাইডলাইনে বলা হয়, করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় সবার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে- বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলাফেরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থারও পরিকল্পনা করা।

নিরাপদ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে মাউশির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কতজনকে নিয়ে একই শিফটে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে তার পরিকল্পনা করতে হবে। তিন ফুট দূরত্ব নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের বসাতে হবে। শিক্ষার্থীর চাহিদা ও অভিভাবকের মতামতের ভিত্তিতে এবং প্রতিষ্ঠানের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করতে হবে।

আনন্দঘন শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপারে বলা হয়, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের সৃষ্ট মানসিক চাপ থেকে মুক্ত করতে নিরাপদ ও আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রথম ১৫ দিন শিক্ষা কার্যক্রম কেমন হবে, কতটা সময় শিখন কার্যক্রম এবং কতটা সময় মনো-সামাজিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা রাখা হবে তার পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। প্রথম এক বা দুই সপ্তাহ পাঠক্রমভিত্তিক শিখনের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মনো-সামাজিক সহায়তা এবং মানসিক ও শারীরিক কার্যক্রমের মধ্যে খেলাধুলা, মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, গাছ লাগানো ও পরিচর্যা, সংগীতচর্চা, ছবি আঁকা, সামাজিক সেবামূলক কাজ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর প্রথম দুই মাসের মধ্যে কোনো পরীক্ষা বা মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা যাবে না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুতকরণের জন্য নির্দেশনায় বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জীবাণুনাশক প্রয়োগ করতে হবে। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের দায়িত্ব বণ্টনসহ নির্দিষ্ট সময় পরপর ২০ সেকেন্ড ধরে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দৃশ্যমান নানা জায়গায় করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত পোস্টার ঝুলিয়ে রাখতে হবে।

কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে মাউশির গাইডলাইনে বলা হয়, কোনো শিক্ষার্থীর শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বাড়িতে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানে ঢোকার পথে তিন ফুট দূরত্ব মার্কিং করতে হবে। সবার জন্য মাস্ক রাখতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে হটলাইন নম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top