সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তি এখনো দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। তবে, এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
বুধবার বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনীতে সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে তাকে সহজে নামানো যাবে না। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, আমরা এই করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শুভ জন্মদিনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব অপতৎপরতা প্রতিহত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো। এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে দেশকে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ ও বঞ্চনা মুক্ত, ক্ষুধা, দারিদ্র ও নিরক্ষরতা মুক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাল্লাহ। এটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এগিয়ে যাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক্ষার প্রহরের আজ অবসান হতে চলেছে। আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মর্যাদাশীল উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।
‘মাথাপিছু আয় সম্মানজনক ২ হাজার মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে, দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে, দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণ হয়েছে এবং মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।’
বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক সূচকে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টা এবং জনগণের ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফসল আজকের এই প্রাপ্তি।
ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কেননা তারা আমাকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৭ মার্চ আমরা প্রতিবছর জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপন করি। শিশু দিবসে প্রতিটি শিশুর জন্য আমার ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা রইল।
তিনি বলেন, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এ বছর আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূরণ হচ্ছে। আমরা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী একযোগে উদযাপন করছি। ‘মুজিব চিরন্তন’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ১৭ মার্চ থেকে ২৬-এ মার্চ পর্যন্ত আমরা দেশে ও বিদেশে বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছি। আজ তার সূচনাপর্ব। তবে আমাদের উৎসব ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় আমি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভ্রাতৃপ্রতিম মালদ্বীপের জনগণের প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইলো।
প্রধানমন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি জিন শি জিংপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগাকে শুভেচ্ছা বাণী পাঠানোয় ধন্যবাদ জানান। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বক্তৃতার শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার-নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষার মর্যাদা অর্জনের যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন সে ধারাবাহিক সংগ্রামের সাফল্যের ফসলই আমাদের স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, শোষণ, বঞ্চনা, ক্ষুধা, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের এ জনপদকে একটা পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার মত কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে। অসাধ্য সাধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং যুদ্ধ-পরবর্তী দেশ গড়ার কাজে যেসব বন্ধুপ্রতিম দেশ ও নেতারা আমাদের সাহায্য করেছিলেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।
রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ ও তার সহধর্মিণী রাশিদা খানম এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ ও তার সহধর্মিণী ফাজানা আহমেদ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে শত শিশুর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরই শিশুরা সমবেত কণ্ঠে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি এবং দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতির পিতার ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও অংশগ্রহণ করেন। শেখ রেহানাও সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত থিম এ কণ্ঠ মেলান।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপেং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা এবং প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্ক টালি অনুষ্ঠানে অভিনন্দন জানিয়ে ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন।
‘মুজিব চিরন্তন’ নামে এই অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ধারণকৃত বর্ণাঢ্য ফ্লাই পাস্টও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। এরপর দেশ বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে কবি কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী রচিত এবং নকীব খানের সুরারোপিত ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, হৃদয়ের বাতিঘর’ পরিবেশিত হয়।
১০দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার থিম ‘মুজিব চিরন্তন’ হলেও প্রতিদিন অনুষ্ঠানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন থিম রয়েছে এবং উদ্বোধনী দিনের থিম ছিল ‘ভেঙেছো দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়।’
জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপন বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম স্বাগত ভাষণ দেন।



খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।