উল্লাপাড়া প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় স্বামী-সন্তান হারা ৭০ উর্ধ বিধবা মহিলা খাতুন নিজ ভিটায় ঘর তুলতে বাধা দিচ্ছে গ্রামের প্রভাবশালী স্কুল শিক্ষক মোঃ আব্দুল লতিফ ও তার সহযোগীরা।
তারা মহিলা খাতুনের পৈত্রিক বসত ভিটাকে নিজেদের ভিটা বলে দাবি করছে। ওই কথা শুনে মহিলা খাতুনের আকাশ ভেঙ্গে পরার মতো হয়েছে।
মহিলা খাতুন উল্লাপাড়া পৌর এলাকার শ্রীকোলা গ্রামের মৃত সোনা উল্লার মেয়ে।
মহিলা খাতুন অশ্রুসিক্ত চোখের জলে জানান দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বাবার দেওয়া ৪ শতক জমির উপর একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে তাতে বসবাস করে আসছে।
বাবার মৃত্যুর পর মহিলা খাতুনের দুই ভাই, বোনকে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য ১৮৬ ও ১৮৭ খতিয়ানের ৫০১ ও ৫০২ দাগ ভুক্ত ২২ ডেসিমাল ভুমির কাতে ওই জমির ০৪ ডেসিমাল বাড়ি রেজিস্ট্রারী করে দেয়।
১৯৮৯ সালে তার নামে নামজারি করে খারিজ করে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে আসছে। বয়সের ভারে মৃত্যুর কথা চিন্ত করে তার একমাত্র কন্যা মোাছাঃ মায়াতন নেছার নামে ভাইদের দেয়া ওই ৪ শতক বাড়ি রেজিস্ট্রারী কওলা করে দিয়ে সেই বাড়ির ঝুপরি ঘরে বসবাস করে আসছে।
তিনি নিজ গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন মসজিদ- মদ্রাসা ধুইয়ে- পরিস্কার ও মৃত ব্যক্তিদের ধোয়ায়ে যে অর্থ কড়ি পায় তা দিয়ে এবং পাড়া প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবারে তার দিন চলে।
ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম আসায় ভাঙ্গা ঝুপরি ঘর মেরামতের জন্য গ্রাম ও শহরের লোকজন টিন,কাঠ কিনে দেয় এবং ঘর নির্মানের জন্য কিছু নগদ টাকাও সাহায্য করে।
ওই সাহায্য দিয়ে মহিলা খাতুন কামলা নিয়ে তার ঝুপরি ঘরটি ভেঙ্গে ফেলে গ্রামের লোকের দেওয়া টিন, কাঠ দিয়ে নতুন ঘর তোলার উদ্দোগ নেয়।
ঘরের খুটি গাড়ার সময় শ্রীকোলা গ্রামের প্রভাবশালী স্কুল শিক্ষক মোঃ আব্দুল লতিফ মাস্টার ও তার ভাই শামসুল আলম তাদের জায়গা দাবি করে ঘর তোলায় বাধা দেয়। ওই কথা শুনে বৃদ্ধা মহিলা খাতুনের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মতো হয়েছে।
ছু্টে যায় গ্রাম প্রধানদের কাছে, তারা কোনো ব্যবস্থা দিতে না পাড়ায় ছুটে যায় উপজেলা ভুমি অফিসে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করে। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কাগজ পত্র দেখে তার কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ পাঠায় স্কুল শিক্ষক মোঃ আব্দুল লতিফ মাস্টার সহ তার সহযোগীদের কাছে।
নির্দিষ্ট তারিখে মহিলা খাতুন হাজির হলেও লতিফ মাস্টার ও তার সহযোগীরা এক দিনও হাজির হয়নি।
পক্ষান্তরে আব্দুল লতিফ মাষ্টারের ছোট ভাই মোঃ শামসুল আলম দাদার নামের হাল খতিয়ান নং-৪০, দাগ নং-৫৩৯ এ. ০৮০০ডে. সম্পত্তি দাবি করে খারিজ বাতিল চেয়ে মিসকেস করেছেন উল্লাপাড়া উপজেলা ভুমি অফিসে।
অভিযোগ ও কেসের বিষয়ে সরজমিনে তদন্ত করে অতি দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা পৌর ভুমি অফিসকে নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভুমি) মোঃ নাহিদ হাসান খান।
সরজমিনে বৃদ্ধার বাড়িতে গেলে প্রতিবেশীরা জানায় বাবার দেওয়া ভিটায় দীর্ঘ দিন ধরে মহিলা খাতুন বসবাস করে আসছে । প্রতিবেশী আরমান আলী বলেন জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখছি মহিলা খাতুন ওই ভিটায় বসবাস করে আসছে। কখনো শুনিনি ওই ভিটা লতিফ মাস্টারদের।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে পাশের বাড়ি থেকে আব্দুল লতিফ মাস্টারের ছোট ভাই মোঃ শামসুল হকের স্ত্রী আসমা খাতুন এগিয়ে আসলে তার কাছে মহিলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান বহুদিন থেকে সে ওই ভিটায় বসবাস করে আসছে । তবে ওই ভিটা আমাদের, সে নামাজ রোজা করে জন্য তাকে এখনো থাকতে দিয়েছে ।
আব্দুল লতিফ ও শামসুল আলমের সাথে সাক্ষাত করতে চাইলে আসমা জানান তারা বাড়িতে নেই । মোবাইল নম্বর চাইলে তা দিতে তিনি অস্বীকার করে । পরে নম্বর যোগার করে তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি ।
পৌসভার ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল আলীম জানান স্বামী-সন্তান হারা অসহায় মহিলা খাতুনের ভিটায় ঘর তুলতে বাধা দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করেছি কিন্তু তাদের আগ্রহ না থাকায় মিমাংসা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভুমি ও ঘরহীন মানুষদেরকে ঘর করে দিচ্ছেন তখন এক শ্রেনীর ভুমি দস্যু প্রতারক বৃদ্ধা মহিলা খাতুনকে করছে ভিটে ছাড়া । তার পৈতৃক ভিটায় আশ্রয় পেতে দুহাত তুলে অশ্রুসিক্ত চোখে বৃদ্ধা কামনা করছে মেয়র-প্রশাসন অথবা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটু সহযোগিতা।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ নাহিদ হাসান খান জানান দু জোনার অভিযোগ পেয়েছি এবং দ্রুত সরজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা পৌর ভুমি অফিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই উভয়ের কাগজ পত্র দেখে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।