অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

Seba Hot News
0
অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে



উল্লাপাড়া প্রতিনিধি : নানা অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। 

কর্মচারিদের ভাতার টাকা আত্মসাত, করোনায় বরাদ্দ হওয়া সুরক্ষা সামগ্রী লোপাট, কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে আপ্যায়নের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত এবং ভুয়া করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি দেখিয়ে অর্থ আত্মসাত, হাসপাতালের ফলজ ও বনজ গাছ বিক্রি ছাড়াও কর্মচারিদের সাথে অসদাচরনের অভিযোগও রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।  

এসব অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৭৩ জন স্বাস্থ্য সহকারি ও ৬২ জন সিএইচসিপি।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন করোনাকালিন সিএইচসিপি ও স্বাস্থ্য সহকারিদের জন্য বরাদ্দ হওয়া সকল সুরক্ষা সামগ্রী লোপাট ও হাসপাতালে ভুয়া করোনা রোগী ভর্তি দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত করেছেন। 

জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উপলক্ষে প্রায় ৬শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে এডভোকেসি মিটিং না করেই  মিটিংয়ের নামে সম্মানী ভাতা ও আপ্যায়নের টাকা তুলে নিয়েছেন। 

অপরদিকে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে আপ্যায়নের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ১৬ লাখ টাকা আত্মসাত এবং ভ্যাট, অডিটসহ নানা অজুহাতে সকল ধরণের প্রশিক্ষণের সম্মানি ভাতা কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে চলতি বছরের শুরুতে ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি) আওতায় উপজেলার ৬৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে মাল্টি পারপাস হেলথ ভলেন্টিয়ার (এমএইচভি) পদে ৪৫৭ জন নিয়োগ দেয়া হয়। 

এসব পদে নিয়োগের নামেও প্রায় তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এমএইচভি পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩৬ জন বিভিন্ন কারণে চাকরী ছেড়ে দেন। 

কিন্তু প্রকল্প থেকে তাদের এখনও ভাতা দেয়া হচ্ছে। এই ৩৬ জনের ৬ মাসের সম্মানি ভাতা ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬শ টাকা ইতিমধ্যে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

আবার এ ভাতার টাকা উত্তোলন করতেও প্রতিজনের কাছ থেকে মাসিক ২শ টাকা হারে কেটে নেন তিনি। 

গত ৬ মাসের ভাতার  মোট ৫ লাখ ৫ হাজার ২শ টাকা কর্তন করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। 

এমএইচভি পদে দ্বিতীয় ধাপে ৪ মাসের সম্মানি ভাতার টাকার মধ্যে তিনি ৩ মাসের টাকা প্রদান করেন। 

বাকী এক মাসের সম্মানি ভাতার টাকাও আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগিরা।

এছাড়াও উপজেলা হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার ভেঙ্গে বিশাল হলরুমের সমান করে নিজের বিলাস বহুল অফিস রুম তৈরি করেছেন। 

হাসপাতাল চত্বরের বেশকিছু গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এমটি (ইপিআই), এএইচআই, সিএইচসিপি, এইচএ সহ বিভিন্ন পদে পদায়ন ও বদলীর ফরোয়ার্ডিংয়ে টাকা ছাড়া স্বাক্ষর করেন না। 

এছাড়াও সর্বস্তরের স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের সাথে দূর্ব্যবাহর, অসদাচারণ এবং বেতন বন্ধের হুমকি দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে নৈরাজ্য ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন এ কর্মকর্তা।  

উল্লাপাড়া পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের ব্রহ্মখোলা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সাইফুল ইসলাম, মাল্টি পারপাস হেলথ ভলেন্টিয়ার (এমএইচভি) রুহুল আমিন, স্বাস্থ্য সহকারি হোসনে আরা বেগমসহ অনেকের সাথে কথা বললে তারা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবায় মহা বিপর্যয় ঘটে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। 

প্রতিটা খাত থেকেই তিনি অর্থ আত্মসাত করেন। পরিবহণ বিলের টাকা থেকে ২৫ থেকে ৩০% কর্তন করেন। যেখানের পূর্বের কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ৫% কর্তন করতেন।

শহীদুল ইসলাম নাদু নামে এক কর্মচারি বলেন, কেউ প্রমোশনের ফরোয়ার্ডিং নেয়ার জন্য স্যারের কাছে গেলে তার কতকগুলো সিএইচসিপি পদের মেয়ে কর্মচারি রয়েছে, তাদের মাধ্যমেই ১০/২০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। 

স্যার যখন কোন স্থানে পরিদর্শনে যান সেখানে ইনচার্জ বা সহকারি ইনস্পেক্টরকে না নিয়ে সিএইচসিপি নাজমা এবং আলিফা নামের দু’জনকে গাড়ীতে তুলে সঙ্গী হিসেবে নিয়ে যান। 

এছাড়াও গত ছয় মাস যাবত নামজা ও আলিফাকে কেন্দ্রে না পাঠিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে তার অফিস কক্ষে বসিয়ে রেখে তাদের দ্বারা বিভিন্ন অনিয়ম করাচ্ছেন তিনি। 

উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য সহকারি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম রাশিদুল হাসান জানান, আমার স্বাস্থ্য সহকারিদের বিনা কারণেই শোকজ করা হয়। 

সিএইচসিপি নাজমার সাথে পরামর্শ করে টার্গেট করে শোকজ করেন তিনি। 

শোকজের জবাব সন্তোষজনক হলেও বিনা কারণে তাদের বেতন কর্তনসহ সার্ভিস বুকে লালকালি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খারাপ রের্কড লেখেন তিনি। 

সিএইচসিপি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, এই অফিসে অনেক ধরনের অনিয়ম-দূর্নীতি হচ্ছে। 

কর্মচারিদের কথায় কথায় বেতন বন্ধ করা, খারাপ ও আচরণ খারাপ ভাষা প্রয়োগ করেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। 

বিনা কারনে হাসপাতালের ৬/৭ জন কর্মচারির বেতন-ভাতা বন্ধ করে রেখেছেন তিনি। বেতন বন্ধ করা কর্মচারি ও তাদের পরিবার অতি মানবেতর জীবন-যাপন করে দিনাতিপাত করছেন। 

ডা. আনোয়ার হোসেন টাকা ছাড়া কারও বেতন ছাড় দেন না। সিএইচসিপি আলিফা ও নাজমার সাথে তিনি গোপন আতায়াত করে এ সমস্ত টাকা হাতিয়ে নেন।   

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, কর্মচারিদের সাথে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। 

এ কারণে তারা অভিযোগ দিয়েছেন। সেগুলো মিমাংসার চেষ্টা চলছে।

সিরাজগঞ্জ উপজেলা সদর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কর্মচারি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. জাহিদুল ইসলাম হীরা বলেন, উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনের সাথে কর্মচারিদের মধ্যে দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়েছে। 

বিষয়টি জেনে আমরা বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) বিষয়টি মিমাংসার জন্য ইউএইচএফপিও ফোরামের পক্ষ থেকে ৪/৫ জন গিয়েছিলাম। ওইদিন বিষয়টি প্রাথমিকভাবে মিমাংসা হয়েছে। 

সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। যার অনুলিপি আমার দপ্তরে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top