জামালপুর সংবাদদাতা: জামালপুরের মেলান্দহে ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংক গ্রাহকদের আত্মসাতকৃত টাকা ফেরতের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন প্রতারিত গ্রাহকরা।
১৩ ডিসেম্বর সোমবার বেলা ১১টায় মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (ভোকেশনাল শাখা) হল রুমে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন-প্রতারিত গ্রাহক আ: জব্বার।
সম্মেলনে গ্রাহকরা জানান-ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংক মেলান্দহ শাখার পরিচালক মেলান্দহ পৌরসভার ফুলছেন্না গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩৯), ক্যাশিয়ার আদিপৈত গ্রামের মৃত সমেদ শেখের ছেলে আ: সামাদ (৫৫), অফিস সহকারি আ: সামাদের স্ত্রী রেহানা পারভীন (৫০) এবং মোবাইল ব্যাংকিং জামালপুর জেলা শাখার এরিয়া ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম (৬০) এর যোগসাজসে অর্ধ শতাধিক গ্রাহকের একাউন্ট থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছে।
প্রায় ১ বছর যাবৎ মেলান্দহ ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংক শাখায় পাকা রশিদের মাধ্যমে গ্রাহকরা টাকা জমা করে আসছিলেন।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাকা রশিদ দিলেও কোন কোন গ্রাহকের একাউন্টে টাকা জমা করেনি।
সার্ভার সমস্যার অজুহাতে পরে টাকা জমা হবে বলে গ্রাহকদের হাতে পাকা রশিদ দিয়ে বিদায় করা হতো।
বিশ^স্ততা অর্জনের চেষ্টায় কিছু কিছু গ্রাহকের লভ্যাংশের টাকা হাতে এবং গ্রাহকের একাউন্টেও জমা দেখাতো।
এভাবে শত শত গ্রাহকের বিশ^াস স্থাপনের মাধ্যমে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিতো। টানা ২/৩ বছর যাবৎ এভাবেই ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার একপর্যায়ে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে হঠাৎ করেই ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংক শাখাটি বন্ধ রেখে অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে যায়।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মোবাইল ফোনও বন্ধ পেয়ে গ্রাহকরা বিচলিত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় মেলান্দহ থানায় ৯ নভেম্বর প্রতারিত গ্রাহকদের পক্ষে আ: জব্বার বাদি হয়ে মামলা (নং-৩) দায়ের করেন।
মামলার আরজি এবং ডাচ বাংলা জেলা শাখার দেয়া তথ্য মতে অর্ধ শতাধিক গ্রাহকের একাউন্ট থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছে বলে জানা যায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতারিত গ্রাহকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-মশিউর রহমান, ফরিদা পারভীন, ইসমাইল হোসেন, নাসরুল্লাহ, হালিমা বেগম, নূরজাহান প্রমুখ। এ ব্যাপারে গ্রাহকরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মামলার আসামী এবং জামালপুর জেলা শাখার এরিয়া ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম জানান-অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রাহক ছাড়াও ডাচ বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরো পৃথক মামলা করেছেন।
প্রতারিত গ্রাহকদের আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধারে সর্বাত্বক সহযোগিতা করছি। আর বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা না বুঝেই আমাকে আসামী করেছেন।
আমি অভিযুক্ত হলে শাস্তি মেনে নিব। সর্বশেষ আমি যত টুকু জানি মেলান্দহ এজেন্ট ব্যাংকসহ অভিযুক্ত ইসমাইলের আরো দু’টি এজেন্ট ব্যাংক ক্লোজ করা হয়েছে। তদন্তও চলছে।
ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংক মেলান্দহ শাখার পরিচালক অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন জানান-আমার কর্মচারি কেশিয়ার আ: সামাদ ও তার স্ত্রী রেহানা পারভীন আমার নিকট আত্মীয় হবার সুবাদে আমার সরল বিশ^াসের সুযোগ নিয়ে এমন সর্বনাশা কর্মকান্ড ঘটিয়েছে।
আমি সেনাবাহিনীতে থাকাকালে আ: সামাদের নামেই এজেন্ট ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে চালিয়েছিলাম। পরে তার কাছ থেকে ব্যাংকের সত্ত¡ নেয়ার ক্ষোভে এমনটা করেছে।
আমিও আ: সামাদ ও রেহানা পারভীনের বিরুদ্বে আইনী পদক্ষেপ নিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান-এমন অভিযোগের কথা শুনেছি। প্রতারিতদের আইনী পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক মেহেদী হাসান খান জানান-যে কোন ব্যাংকিং সেক্টরে এমন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে অফিসার ইনচার্জ মায়নুল ইসলাম জানান-মামলাটি তদন্তাধীন আছে। আসামী গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।