৪ শত কোটি বই বিতরণ করে বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন বাংলাদেশের
🕧Published on:
সেবা ডেস্ক: বিশ্বে’র বুকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে তৈরি করেছে স্বকীয় অবস্থান। নানা সীমাবদ্ধতা’র মধ্যেও দেশে’র শিক্ষা খাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আ’র এ’র সুফল ভোগ ক’রছে দেশে’র অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা খাতে’র নানা উদ্যোগগুলো’র মধ্যে অন্যতম শিক্ষার্থীদে’র বিনামূল্যে বই বিত’রণ কর্মসূচী।
এই কর্মসূচী’র আওতায় প্রতিবছ’র দেশে’র প্রায় সব স্কুলে’র শিক্ষার্থীদে’র মধ্যে বিনামূল্যে বিত’রণ করা হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক।
২০১০ সালে বর্তমান স’রকারে’র নেয়া এই উদ্যোগটি এত ব্যাপকতা পেয়েছে যে মাত্র ১৩ বছরে বিত’রণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি বই।
সোয়া চা’র কোটি শিক্ষার্থীদে’র মাঝে বিত’রণ করা হয়েছে এসব পাঠ্যপুস্তক। যা সারা বিশ্বে’র মধ্যে অন্যতম বি’রল দৃষ্টান্ত বলে দাবি ক’রছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১০ সাল থেকে বই উৎসবে’র মাধ্যমে শিক্ষাবর্ষে’র প্রথম দিন ঘটা করে শিক্ষার্থীদে’র হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেয়া হয়।
মহামারী করোনা’র কা’রণে গত দুই বছ’র উৎসব না হলেও বিনামূল্যে বই ঠিকই পেয়েছে দেশে’র সব শিক্ষার্থী।
রাজধানীসহ দেশে’র জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে’র সব স্কুলেই বছরে’র প্রথম দিন বিত’রণ করা হচ্ছে এসব বই। টানা ১৩ বছ’র এই কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়াকে মাইলফলক হিসেবে মন্তব্য ক’রছেন অনেকেই।
উৎসবে’র আমেজে বছরে’র প্রথম দিন খালি হাতে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নতুন বই
হাতে নিয়ে খুশি হয়ে
বাড়ি ফি’রছে শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০২২ (চলতি শিক্ষাবর্ষ) সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে মোট ৪শ’ ৩৫ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজা’র ৪১টি বই শিক্ষার্থীদে’র মধ্যে বিত’রণ করা হয়েছে। এসব বই দিতে স’রকারে’র বছ’র প্রতি খ’রচ হচ্ছে ১ হাজা’র কোটি টাকা’র বেশি।
এই হিসেবে ১৩ বছরে খ’রচে
হিসাব দাঁড়ায় প্রায় ১৩ হাজা’র কোটি
টাকা’র বেশি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
এই সংখ্যা আ’রও বাড়া’র সম্ভাবনা
‘রয়েছে।
এনসিটিবি বলছে, এ কর্মসূচী’র শুরু’র বছ’র অর্থাৎ ২০১০ সালে প্রাথমিক (বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন), মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন), ইবতেদায়ি, দাখিল ও দাখিল (ভোকেশনাল), এসএসসি (ভোকেশনাল) এ’র মোট ২ কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজা’র ৫২৯ শিক্ষার্থী’র মধ্যে বিত’রণ করা হয় ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৯৬ হাজা’র ৫৬১টি বই।
একইভাবে ২০১১ সালে ৩ কোটি ২২ লাখ ৩৬ হাজা’র ৩২১ শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় ২৩ কোটি ২২ লাখ ২১ হাজা’র ২৩৪টি বই।
২০১২ সালে’র মোট ৩ কোটি ১২ লাখ ১৩ হাজা’র ৭৫৯ শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় ২২ কোটি ১০ লাখ ৬৮ হাজা’র ৩৩৩টি বই।
বিনামূল্যে বই বিত’রণ কর্মসূচীতে ২০১৩ সালে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৬ হাজা’র ১৭২ শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় ২৬ কোটি ১৮ লাখ ৯ হাজা’র ১০৬টি বই।
২০১৪ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় শিক্ষার্থী’র ক্ষেত্রে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজা’র ২০১ জন। আ’র বই বিত’রণ করা হয় ৩১ কোটি ৭৮ লাখ ১২ হাজা’র ৯৬৬টি।
একইভাবে ২০১৫ সালে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজা’র ৩৭৪ শিক্ষার্থী’র মধ্যে বিত’রণ করা হয় ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজা’র ৯২৩টি বই।
২০১৬ সালে
৪ কোটি ৪৪ লাখ
১৬ হাজা’র ৭২৮ শিক্ষার্থী বিনামূল্যে
বই পায় ৩৩ কেটি
৩৭ লাখ ৬২ হাজা’র
৭৬০টি।
তবে নতুন করে মাইলফলক শুরু হয় ২০১৭ সালে। এ বছ’রই প্রথমবারে’র মতো অন্যান্য বিষয়ে’র সঙ্গে বিনামূল্যে বই বিত’রণ কর্মসূচীতে যুক্ত করা হয় প্রাক-প্রাথমিক, প্রাক-প্রাথমিক (৫টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী’র ভাষায়: মা’রমা, চাকমা, গারো, সাদ্রি ও ত্রিপুরা), এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল (ট্রেড বই), দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদে’র জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক নির্দেশিকা (প্রাথমিক) শিক্ষক শিক্ষাক্রম নির্দেশিকা (মাধ্যমিক) যুক্ত করা হয়।
ফলে ওই বছ’র শিক্ষার্থীদে’র সংখ্যা’র সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে বিত’রণকৃত বইয়ে’র সংখ্যাও। মোট ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজা’র ৯২৯ শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজা’র ২৪৫টি বই।
এ’র ধারাবাহিকতা চলে ২০১৮ সালেও। ওইবছ’র ৪ কোটি ২৬ লাখ ৯৮ হাজা’র ৬৬৩ শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দেয়া হয় ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজা’র ১৬২টি।
একইভাবে ২০১৯ সালে ৪
কোটি ২৬ লাখ ১৯
হাজা’র ৮৬৫ শিক্ষার্থীকে দেয়া
হয় ৩৫ কোটি ২১
লাখ ৯৭ হাজা’র ৮৮২টি
বই।
২০২০ সালে অন্যান্য বিষয়ে’র সঙ্গে যুক্ত করা হয় ৬ষ্ঠ শ্রেণী’র জন্য সম্পূ’রক কৃষি শিক্ষা বইটি। ওই বছ’র ৪ কোটি ২৭ লাখ ৭২ হাজা’র ৭৪৭ শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজা’র ১৯৭টি বই।
এ’র প’রপ’রই বিশ্বজুড়ে আঘাত হানে অতিমারী করোনা। লকডাউন-শাটডাউনে স্থবি’র হয়ে পরে পুরো বিশ্ব। কিন্তু তবুও চলমান থাকে শিক্ষার্থীদে’র জন্য বিনামূল্যে বিত’রণে’র জন্য বই ছাপা’র কাজ। তবে এ সময় কমে শিক্ষার্থী এবং বই ছাপানো’র সংখ্যাও।
এনসিটি’র মতে, ২০২১ সালে মোট ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজা’র ৪৫৩ শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে দেয়া হয় ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজা’র ৮৫৭টি বই। একইভাবে চলতি শিক্ষাবর্ষে’র জন্যও বিনামূল্যে বই বিত’রণ কর্মসূচী অব্যাহত রাখে স’রকা’র।
নানা প্রতিবন্ধকতা’র মধ্যেই এ বছ’র মোট ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজা’র ৮৫৬ শিক্ষার্থীকে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজা’র ১৩০টি বই পৌঁছে দেয়া হবে।
১ জানুয়ারি এ’র প্রায় ৮০ শতাংশ বই শিক্ষার্থীদে’র হাতে পৌঁছে গেছে। বাকি বইগুলোও চলতি মাসে’র মধ্যেই পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ। এনসিটিবি’র সদ্য বিদায়ী চেয়া’রম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বিশ্বে’র ইতিহাসে এমন কয়টি দেশ আছে আমা’র জানা নেই। আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি এই কর্মসূচী নি’রবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যেতে। আশা ক’রছি সুদূ’র ভবিষ্যতেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
নিজে’র অভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি, এই কর্মসূচী শুরু’র আগে দেশে ঝরেপড়া শিক্ষার্থী, স্কুলবিমুখ শিক্ষার্থী’র সংখ্যা ছিল অসংখ্য। সবাইকে একসঙ্গে বিনামূল্যে বই দেয়ায় শিক্ষার্থীদে’র মধ্যে বৈষম্য যেমন কমছে, দিন দিন বাড়ছে শিক্ষার্থী’র সংখ্যাও।
আবা’র ঝরেপড়াও কমছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্তরে বিনামূল্যে বই দেয়া শুরু’র ১২ বছরে’র মাথায় প্রায় পৌনে দুই কোটি’র বেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে। যা অবিশ্বাস্য। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি আগে শুধু প্রাথমিক স্তরে অর্ধেক বই বিনামূল্যে দেয়া হতো।
বাকি বই কিনে
পড়তে হতো। আ’র মাধ্যমিক
স্তরে’র সব শিক্ষার্থীকে বই
কিনতে হতো। তখন শিক্ষার্থীদে’র
সব বই হাতে পেতে
পেতে কয়েক মাস চলে
যেত। তাদে’র অনেকে আবা’র টাকা’র অভাবে কিনতেও পা’রত না। এ’র ফলে
শিক্ষার্থীদে’র মধ্যে বৈষম্যে’র তৈরি হতো। যা
এখন আ’র নেই।
এই কর্মসূচী’র মূল উদ্যোক্তা সাবেক
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও বলেছেন, এমন কার্যক্রম পৃথিবীতে
খুবই বি’রল। আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক
সম্মেলনে যখন গিয়েছি তখন
দেখেছি এত বিপুল পরিমাণ
বই বিনামূল্যে দেয়া’র কথা শুনে বিশ্বে’র
বড় বড় দেশে’র প্রতিনিধিরা
অবাক হতেন। সেই সব দেশে’র
কোথাও বিনামূল্যে এত বই দেয়া
হয় না।
তিনি
বলেন, ২০১০ সাল থেকে
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে
সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই দেয়া
শুরু করে স’রকা’র। এই
কার্যক্রমে’র ব্যাপ্তি এখন আ’রও বেড়েছে।
এখন প্রাক-প্রাথমিক ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী’র
(৫টি ভাষায় ‘রচিত তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত) শিক্ষার্থীদে’রও বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে।
যা খুবই আশাব্যঞ্জক। তবে
কখনও কখনও বইয়ে’র মান
এবং বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
উল্লেখ করে তিনি বলেন,
বড় কোন কাজে এ’রকম
ছোট ছোট বাধা থাকবেই।
এগুলো’র সমাধানও খুঁজে বে’র ক’রতে হবে।
তবে কোনভাবেই কর্মসূচীতে যেন বাধা না
পড়ে সেই বিষয়টি খেয়াল
রাখতে হবে।
বিনাম্যূল্যে
বই বিত’রণ কর্মসূচি’র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদে’র অনেক উপকা’র হচ্ছে
এটি সর্বজন স্বীকৃত উল্লেখ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক
স’রকারে’র প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা
রাশেদা কে চৌধুরী সাংবাদিকদে’র
বলেন, বিনা মূল্যে বই
দেওয়া’র আগে দেখা যেত,
অসংখ্য শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে। আবা’র
কখনো কখনো সব শিক্ষার্থী’র
বই পেতে জুন পর্যন্তও
সময় লেগে যেত। কিন্তু
বিনা মূল্যে বই দেওয়া’র প’র
দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদে’র মধ্যে বৈষম্য কমে গেছে। ঝরে
পড়াও কমছে। এখন বছরে’র শুরুতেই
শ্রেণি কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হচ্ছে। ইতিবাচক
এই পরিবর্তনে’র বড় কা’রণ বিনা
মূল্যে বই দেওয়া।
তবে শিক্ষার্থীরা যাতে শুধু বাধ্যতামূলক শিক্ষা নয় বরং আনন্দে’র সঙ্গে শিখতে পারে সেই জন্য শিক্ষাক্রম ঢালাও করে সাজানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে রূপকল্প ২০৪১ ঘোষণা করেছেন, তা বাস্তবায়ন ক’রতে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পরিবর্তনশীল বিশ্বে’র শ্রমবাজারে’র চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। স’রকা’র জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা’র পরিবর্তে দক্ষতা ও প্রায়োগিক শিক্ষায় গুরুত্বারোপ ক’রছে। সে লক্ষ্য অর্জনে নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়নে’র কাজ চলমান ‘রয়েছে। তিনি জানান, ২০২২ সালে ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলাম পাইলটিং হবে এবং ২০২৩ সাল থেকে নতুন পাঠ্যক্রমে’র ভিত্তিতে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা হবে। শিক্ষাব্যবস্থা’র সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা’র চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষা’র গুণগত মান বৃদ্ধিতে চেষ্টা অব্যাহত ‘রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, দেশে দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টি ক’রতে স’রকা’র কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি’র হা’র ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০ শতাংশ এবং ২০৪০ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশে উন্নীত করা’র লক্ষ্য নির্ধা’রণ করা হয়েছে। যা দেশকে অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
0comments
মন্তব্য করুন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।