মতামত: যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের খেসারত সে দেশকেই দিতে হবে

S M Ashraful Azom
0
মতামত যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের খেসারত সে দেশকেই দিতে হবে



সেবা ডেস্ক: ব্লগা’র বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ হত্যা’র জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে পদচ্যুত এবং পলাতক মেজ’র সৈয়দ জিয়াউল হক এবং অন্যান্যদে’র ধরিয়ে দেওয়া’র জন্য যুক্তরাষ্ট্র স’রকারে’র মোটা অংকে’র পু’রস্কা’র ঘোষণা’র খব’রটি নিশ্চিতভাবে অত্যন্ত প্রশংসনীয়। 

কিন্তু মেজ’র জিয়া’র মতো ধর্মান্ধ জঙ্গিদে’র দমন কাজে বাংলাদেশে যে বাহিনীটি বহুলাংশে সাফল্য অর্জন করেছে, সেই ্যাবে’র কয়েকজন সাবেক বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে’র কর্তৃপক্ষ ঠিক উল্টো কাজটিই করে বাংলাদেশে’র সকল শান্তিপ্রিয় মানুষে’র নিন্দা’র শিকা’র হয়েছেন।

গত কয়েক বছ’র ্যাব বাংলাদেশে জঙ্গি দমন, মাদক দমন, জলদস্যু দমন, দুর্নীতিবাজদে’র পাকড়াওসহ অন্যান্য হিতক’র কাজে’র দ্বারা সমাজ জীবনে শান্তি ফেরাতে নি’রলস কাজ করেছে বলে সাধা’রণ মানুষে’র কাছে এ’র প্রচু’র জনপ্রিয়তা ‘রয়েছে। বাংলাদেশে উগ্র জঙ্গিবাদ চ’রমপন্থা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ্যাব সাধা’রণ মানুষে’র কাছে প্রশংসা অর্জন করেছে।  শায়খ আব্দু’র ‘রহমান, বাংলা ভাই প্রমুখ তালেবানি জঙ্গিদে’র দমন দিয়ে ্যাব জঙ্গিবাদ উগ্রবাদ দমনে শুরু থেকেই ভূমিকা রেখে আসছিল। 

২০১৩ সালে’র মে তারিখে হেফাজতি জঙ্গিদে’র উৎখাত, হলি আর্টিসান আক্রমণকারীদে’র চিহ্নিত এবং ওই হত্যাকাণ্ডে’র পেছনে থাকা ব্যক্তিদে’র খুঁজে বে’র করা’র  জন্য ্যাবে’র একে’র প’র এক সাঁড়াশি অভিযান সকলে’রই প্রশংসা কুড়িয়েছে। সুন্দ’রবনে এবং বঙ্গোপসাগরে’র উপকূলে জলদস্যুদে’র দমনও ্যাবে’র সফলতা।

বিগত কয়েক বছরে ্যাব বেশ কয়েকজন সুচতু’র ধর্ষক এবং করোনাকালে কয়েকটি প্রতা’রক হাসপাতাল মালিকদে’র পাকড়াও করে। এতোকিছু সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র পুলিশে’র এই বাহিনী’র সব সাফল্য এড়িয়ে গিয়ে ্যাবে’র বিরুদ্ধাচ’রণ করায়, গুটি কয়েক স্বার্থান্বেষী লোক ছাড়া বাংলাদেশে’র সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক বিস্মিত। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন ধর্ষককে গ্রেপ্তা’র করে এবং সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি’র জন্য দায়ী কয়েকজন ধর্মান্ধকে আটক করে ্যাব অর্জন করেছে প্রচু’র জনপ্রিয়তা। যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী জঙ্গি দমনে’র কথা বলছে অত্যন্ত উচ্চস্বরে, সেই দেশটিই কী করে বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে’র কাজে সফল সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত ক’রলো?

বিভিন্নজন মার্কিন সিদ্ধান্তকে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তবে দলীয় বা আদর্শগত স্বার্থে’র দ্বারা প্রভাবিত কিছু ব্যক্তি ছাড়া প্রায় সকলেই মার্কিন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। কেউ কেউ মনে ক’রছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনে’র বিরুদ্ধে এশিয়া-প্রশান্ত কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশে’র সমর্থন আদায়ে’র জন্য চাপ প্রয়োগে’র পন্থা হিসেবেই এটি করেছে। পৃথিবী’র কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদে’র ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে নিজ নিজ প্রভাব বলয়ে রাখা’র প্রচেষ্টা বহুকাল ধরেই করে আসছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন তাঁ’র পতনে’র আগ পর্যন্ত তৃতীয় বিশ্বে’র পক্ষেই অবস্থান নিতো। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নে’র সমাপ্তি’র পরে বর্তমান রাশিয়া’র বিশ্ব মোড়লগিরি করা’র প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোটেও কম নয়। পৃথিবীতে মোড়লে’র ভূমিকা বজায় রাখা’র জন্য এরা একে অন্যে’র প্রতিদ্বন্দ্বীও বটে। উপনিবেশবাদে’র পতনে’র প’র শুরু হয়েছে নব্য উপনিবেশবাদ, যা’র মূল উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক ফায়দা লুটা। সে লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদে’র ৫টি স্থায়ী দেশ কারো থেকে কেউ কম যায় না। এক সময়ে’র তুলনামূলক স্বল্পোন্নত দেশ চীন আজ আর্থিক এবং সামরিক দিক থেকে মহীরূহ হিসেবে পরিণত হওয়া’র প’র সেও বিশ্ব মোড়লে’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ঠিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে’র মতোই, সে দেশটি’র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। বলা যেতে পারে চীনে’র এহেন প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে’র চেয়েও একধাপ উপরে। তবে বিশ্ব মোড়লগিরিতে যুক্তরাষ্ট্রই এখনো মুখ্য ভূমিকায় ‘রয়েছে। ১৮২৩ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো, আমেরিকা মহাদেশে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদকে ঠেকানো’র জন্যমনরো ডক্টরেননামে যে তত্ত্বে’র সূচনা করেছিলেন, প’রবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সে তত্ত্বকেই বিশ্বব্যাপী মার্কিন প্রভাব বিস্তারে’র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহা’র করেছেন প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে। তাদে’র অন্যায় মোড়লগিরি’র প্রমাণ ভুরিভুরি। ১৯৪৫ সালে অগাস্ট মাসে দ্বিতীয় মহা সম’র যখন শেষ হওয়া’র পথে, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্র জাপানে দুই দুটি আণবিক বোমা নিক্ষেপে’র মাধ্যমে কমবেশি দুই লাখ লোককে হত্যা করেছিল, সমাপ্তপ্রায় যুদ্ধ বন্ধ করা’র জন্য যা’র প্রয়োজন ছিল না। বিশ্বে’র অনেক গুণীজন, বিশেষ করে লর্ড বার্ট্রান্ড রাসেল এবং আণবিক বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনেস্টাইনও ১৯৫৫ সালে’র জুলাই মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই মর্মে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে আণবিক আক্রমণ ছিল অপ্রয়োজনীয়, বরং এটি করা হয়েছিল আণবিক বোমা’র ধ্বংস ক্ষমতা পরীক্ষা’র জন্য। যে আণবিক বিজ্ঞানী’র পরামর্শ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ম্যানহাটন প্রজেক্ট দ্বারা আণবিক বোমা তৈরি করেছিলেন, সেই বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনই জাপানে আণবিক বোমা নিক্ষেপে’র কথা শুনে নির্বাক হয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৫৫ সালে’র জুলাই লন্ডনে পাগওয়াশ সম্মেলনে লর্ড বার্ট্রান্ড রাসেল আইনস্টাইনে’র মিলিত বৈঠকেও জাপানে মার্কিন আণবিক আক্রমণে’র কঠো’র সমালোচনা করেছিলেন উক্ত দুইজন মনীষীসহ আ’রও অনেকে। প’রবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া, চিলি, পানামা, নিকারাগুয়া, গ্রেনেডা, ইরাক প্রভৃতি দেশে আধিপত্য বিস্তারে’র জন্য কী কী করেছে, তাতো কারো অজানা নয়। তবে ইন্দো-প্রশান্ত প্রকল্পে’র জন্য বাংলাদেশে’র সমর্থন আদায়ে’র জন্যই ্যাববিরোধী সিদ্ধান্ত বলে যারা ভাবছেন তাদে’র সাথে এজন্য একমত পোষণ ক’রতে পা’রছি না এজন্য যে বাংলাদেশ এ’রই মধ্যে অত্যন্ত যৌক্তিক কা’রণেই ইন্দো-প্রশান্ত এবং বঙ্গোপসাগ’র সহ সকল সমুদ্রকে সব দেশে’র জন্য উন্মুক্ত রাখা’র দাবি’র প্রতি সমর্থন দিয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা’র সাম্প্রতিক ফরাসি দেশ ভ্রমণকালে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এই দাবি’র সাথে যুক্তরাষ্ট্র প্রবর্তিত ইন্দো-প্যাসিফিক পরিকল্পনা মূলত অভিন্ন, কেননা যেখানে চীন তা’র নতুন অর্জিত সামরিক শক্তি বলে বলিয়ান হয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনে’র প্রতি চ’রম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে দক্ষিণ চীন সাগ’রকে তা’র নিজ এবং একক সার্বভৌমত্বে’র আওতায় আনা’র চেষ্টা চালাচ্ছে। তাতে পৃথিবী’র অন্য সব দেশে’র মতো বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থে যে বাংলাদেশে’র জাহাজও নির্বিঘ্নে সে সমুদ্রে যাতায়াত ক’রতে পা’রবে না, সে সমুদ্রে’র তলদেশে প্রাপ্ত খনিজ পদার্থ, যা কিনা আন্তর্জাতিক সমুদ্র কনভেনশনসকল মানুষে’র সম্পদবলে আখ্যায়িত করেছে, তাতে ভাগ বসাতে পা’রবে না, সে এলাকা’র সমুদ্রে’র তলদেশে ক্যাবল বসাতে পা’রবে না। যুক্তরাষ্ট্রে’র প্রস্তাবিতইন্দো-প্রশান্তপরিকল্পনা’র মৌলিক তত্ত্বও হচ্ছে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনে’র বেআইনি একচ্ছত্র দাবি’র বিরোধিতা। সে অর্থে যুক্তরাষ্ট্রইন্দো-প্রশান্তপরিকল্পনায় বাংলাদেশে’র সমর্থন আদায়ে’র জন্য ্যাববিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে মনে হয় না। বরং এখন যা জানা গেছে তা হলো- এই যে লন্ডনে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক ‘রহমান নিযুক্ত একটি লবিস্ট ফার্মে’র দীর্ঘ দিনে’র প্রচেষ্টা’র ফলই হচ্ছে এই মার্কিন সিদ্ধান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে’র কিছু রাজনীতিকে’র চাপেই এই সিদ্ধান্ত বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষে’র কাছ থেকে সম্প্রতি যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তাও কিন্তুলবিস্ট থিওরিকে সমর্থন করে। যে ব্যক্তিবর্গ লবিস্ট নিয়োগ করেছে, তাদে’র উদ্দেশ্য যে বাংলাদেশে’র বর্তমান মুক্তিযুদ্ধে’র পক্ষে’র এবং জঙ্গিবাদ রোধে বদ্ধপরিক’র স’রকা’রকে বিব্রত করা, তা বলা’র অপেক্ষা রাখে না।

যুক্তরাষ্ট্রে’র সিদ্ধান্তে’র সাথে সাথেই বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী’রসহ কিছু নেতা সেই সিদ্ধান্তে’র সমর্থনে মত প্রকাশে’র প’র এটি আরো পরিষ্কা’র হয়ে যায় যে, তারেক ‘রহমানে’র নেতৃত্বে নিয়োজিত লবিস্টরাই মার্কিন সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। জানা গেছে ‘রবার্ট মেনেনডাজ, যিনি মার্কিন সিনেটে’র প’ররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি’র চেয়া’রম্যান, তিনি গত দুবছ’র ধরেই বাংলাদেশে’র ্যাবে’র বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে মার্কিন প্রশাসনকে প্রভাবিত করা’র চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন এবং ব্যাপারে একাধিক চিঠি লিখেছেন। আরো জানা গেছে, যে বাংলাদেশভিত্তিক দুটি সংস্থা বেশ কিছু সময় ধরেই মার্কিন কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে ্যাববিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে। উল্লেখযোগ্য যে এই দুটি সংস্থা’র একটি হচ্ছে সেটি- যেটি কিনা ২০১৩ সালে মে শাপলা চত্ব’র থেকে হেফাজত ইসলামে’র সমর্থকদে’র উচ্ছেদে’র প’র এই মর্মে গাঁজাখুরি কথা প্রকাশ করেছিল যে সেদিন বহুহেফাজতিকে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হত্যা করেছে। যে দাবি ছিল প্রমাণিতভাবেই মিথ্যাচা’র, যে কা’রণে সংস্থাটি পেয়েছে গণধিক্কা’র। আরো জানা গেছে বিদেশে পলাতক কয়েকজন ব’রখাস্তকৃত সেনা কর্মকর্তা এবং তথাকথিত সাংবাদিক, যাদে’র বিরুদ্ধে বাংলাদেশে’র আদালতে’র হুলিয়া ‘রয়েছে, যারা প্রকাশ্যভাবেই মুক্তিযুদ্ধে’র চেতনা’র বিরোধী, পাকিস্তানপ্রেমি এবং একই মতবাদে বিশ্বাসী বাংলাদেশে বসবাস’রত কয়েকজন মুখ চেনা ব্যক্তিও নি’রলসভাবে মার্কিন কর্তৃপক্ষে’র নিকট উদ্ভট তথ্য স’রবরাহ করে যাচ্ছিল। যা’র ফলেই সাম্প্রতিক মার্কিন সিদ্ধান্ত। মির্জা সাহেবরা দাবি ক’রছেন ্যাব মানবাধিকা’র লঙ্ঘন ক’রছে। অথচ তা’র প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যে ২০০২ সালে প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়েঅপারেশন ক্লিন হার্টনামে বিনাবিচারে নিরীহ মানুষদে’র হত্যাযজ্ঞ চালানো’র নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা’র ফলে আইন প্রয়োগকারীরা কয়েক শত মানুষকে হত্যা করেছিল, বিকলাঙ্গ করেছিল, নিরাপরাধ মানুষকে আটক করেছিল, যে কথাগুলো প’রবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্ট উল্লেখ করেছেন, সে কথা ফখরুল সাহেবরা ভুলে গেলেও দেশে’র মানুষ ভোলেননি। মির্জা ফখরুল গংদে’র এটিও স্ম’রণ করিয়ে দিতে চাই যে খালেদা জিয়া’র নির্দেশে প্রশাসনিক নির্দেশে সেই অপারেশন ক্লিন হার্ট পালন ক’রতে যেয়ে আইন প্রয়োগকারীরা কয়েক শত নিরাপরাধ লোককে হত্যা, কয়েক শত লোককে পঙ্গু করে, বেআইনি আটক করে দেশে প্রথমবারে’র মতো বিচা’র বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে’র সংস্কৃতি’র সূচনা করেছিল। পরে নিরাপরাধ লোকদে’র হত্যাকারীদে’র বিচা’র থেকে ‘রক্ষা করা’র জন্য খালেদা জিয়া তা’র স্বামী’র অনুক’রণে ২০০৩ সালে একটি ইনডেমনিটি আইনও করেছিল, যেটি প’রবর্তীতে হাইকোর্ট বেআইনি করে দেন। সে রায়ে হাইকোর্ট অপারেশন ক্লিন হার্টে’র আদেশ পেয়ে হত্যা, গুম, নির্যাতন, আটক প্রভৃতি’র কঠো’র সমালোচনা করেন। অপারেশন ক্লিনহার্টে’র কালে বিচা’রবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে’র নির্দেশদাতা হিসেবে খালেদা জিয়াও আইনে’র দৃষ্টিতে হুকুমে’র আসামি। এই প্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুলদে’র কথা ভূতে’র মুখে রামে’র নামে’রই মতো।

যুক্তরাষ্ট্রে’র সিদ্ধান্তে’র ব্যাপারে আ’রও যে তথ্য আমরা পাচ্ছি তা হলো এই যে, বাংলাদেশ থেকে পয়সা’র বিনিময়ে যারা যুক্তরাষ্ট্রে’র কর্তৃপক্ষে’র কাছে তথ্য পাঠান, তাদে’র অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে’র চেতনা বিরোধী। তারা তাদে’র নিজ নিজ রাজনৈতিক মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে আপন মনে’র মাধুরী মিশিয়ে অনেক অসত্য, উদ্ভট কথা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে থাকেন। কা’রণে অনেক সময়ই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ অনেক সময়ই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। 

কয়েক মাস আগে খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে যে দৃশ্যত অসত্য প্রতিবেদন ব্রিটিশ স’রকা’র প্রকাশ করেছিল, সেটিও নিশ্চয়ই ঢাকা থেকে  সার্থান্বেষীদে’র পাঠানো মিথ্যা তথ্যে’র ওপ’র ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছিল।

যেসব ্যাব কর্মকর্তা  আইন লংঘন করে মানবতাবিরোধী কাজ করেছে তাদে’র বেআইনি কর্মকাণ্ডে’র ঘটনা জানা’র প’র স’রকা’র তখনই তাদে’র বিরুদ্ধে কঠো’র ব্যবস্থা নিয়েছে। এসবে’র জলজ্যান্ত উদাহ’রণ হলো নারায়ণগঞ্জে খুনে’র দায়ে ্যাবে’র কয়েকজন জৈষ্ঠ কর্মকর্তা’র বিচা’র এবং সর্বোচ্চ সাজা, লিমনে’র পায়ে অন্যায়ভাবে গুলি করা কর্মকর্তা’র শাস্তি এবং লিমনকে ক্ষতিপূ’রণ প্রদানসহ আরো কিছু শাস্তিমূলক ঘটনা। সার্বিক দিক বিবেচনা ক’রলে দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া ্যাবে’র সফলতা’র সঙ্গে অপরাধ দমনে’র পাল্লাটাই অনেক ভারি হবে। অথচ মার্কিন সিদ্ধান্তে এসব হিতক’র বিষয়সমূহ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, সম্ভবত লবিস্টরা তা বলেননি এবং ঢাকায় নিযুক্ত তথ্য প্রদানকারীরা এসব কথা গোপন রেখেছে।

কথা অস্বীকা’র করা’র কোন অবকাশ নেই যে, যুক্তরাষ্ট্রে’র তুলনায় বাংলাদেশে মানবাধিকা’র অবস্থান সহস্র গুণ শ্রেয়। যুক্তরাষ্ট্রে’র আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেভাবে মানবাধিকা’র দলন করে, তা বাংলাদেশে অনুপস্থিত। সেখানে মানবাধিকা’র লংঘনে’র প্রতিবাদ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাও ব্যাপারে তা’র প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছেন। অতীতে এসব মানবাধিকা’র লঙ্ঘনে’র প্রতিবাদ করা’র জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে মার্টিন লুথা’র কিংকে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোন দেশে মানবাধিকা’র লংঘনে’র অর্থ এই নয় যে আমরা তাকে যুক্তি হিসাবে গ্রহণ ক’রতে পারি।তুমি অধম, তাই বলে কি আমি উত্তম হবো না’, আমরা সেই নীতিই অনুস’রণ ক’রছি গত এক যুগ ধরে। আ’র একটি কথা না বললেই নয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলো, অথচ পাকিস্তানে’র মতো জঙ্গি পালনকারী রাষ্ট্রে যে সাঈদ হাফিজে’র মতো আ’রও অনেক কুখ্যাত জঙ্গি, যারা প্রমাণিতভাবে ২০০৮ সালে মুম্বাই আক্রমণে’র মুখ্য খলনায়ক ছিল, তাদে’র ব্যাপারে কিছুই ক’রছে না। সাঈদ হাফিজে’র খোঁজ প্রদানকারী ব্যক্তি’র জন্য যুক্তরাষ্ট্র পু’রস্কা’র ঘোষণা করেছে। অথচ এই দুর্ধর্ষ জঙ্গি পাকিস্তানে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে দণ্ডপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী কয়েকজন অবস্থান ক’রলেও সে দেশটি এদে’রকে তাদে’র দেশে’র ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগ করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে না দিয়ে বরং লালন পালন ক’রছে। যুক্তরাষ্ট্র স’রকারে’র মনে রাখা প্রয়োজন যে বাংলাদেশে’র সাথে সুসম্পর্ক ‘রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ উভয়ে’র স্বার্থেই অপরিহার্য। ইন্দো-প্রশান্ত প্রকল্প ছাড়াও আরো অনেক দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উভয় দেশে’র একত্রে কাজ করা’র প্রয়োজন ‘রয়েছে। তদুপরি তৈরি পোশাক সহ আরো নানাবিধ দ্রব্য আমদানি’র ব্যাপারে বাংলাদেশ হচ্ছে উত্তম স’রবরাহকারী দেশ।

বাংলাদেশে’র বহু মেধাবী ব্যক্তিত্ব যুক্তরাষ্ট্রে’র নাসা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগা’রসহ বিভিন্ন  জায়গায় কর্ম’রত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে’র জন্য অসাধা’রণ অবদান রাখছেন। যুক্তরাষ্ট্র স’রকা’র বাংলাদেশকে ক্ষেপিয়ে তুললে এ’র সবই ভেস্তে যাবে। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু প্রণিতসকলে’র সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’- নীতি বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রে’র সাথে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে তা ‘রক্ষা করা’র দায়িত্ব উভয় দেশে’র। যুক্তরাষ্ট্র একথাটি ভুলে গেলে সে দেশটিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘রয়েছে, তা ভুলে গেলে চলবে না। আ’র বাংলাদেশ আগে’র মতো ভিক্ষা’র ঝুলি বহনকারী দেশ নয়, এ’র উন্নয়ন যুক্তরাষ্ট্রসহ সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। 

লেখক

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি

শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top