ন্যায্যমূল্য পেয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বাঁশখালী উপকূলের লবণ চাষীরা

S M Ashraful Azom
0
ন্যায্যমূল্য পেয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বাঁশখালী উপকূলের লবণ চাষীরা
বাঁশখালী উপজেলার বঙ্গোপসাগরের উপক‚লবেষ্টিত বিভিন্ন ইউনিয়নে এ বছর প্রায় ৫০ হাজার লবণচাষি চাষ শুরু করছেন। ন্যায্যমূল্য পেয়ে খোশ মেজাজে মাঠে কাজ করছে লবণচাষীরা। প্রতিবছর এই সময়ের মধ্যে চাষিরা হাঁড়ভাঙা পরিশ্রম করে লাখ লাখ মে.টন লবণ উৎপাদন করে দেশকে লবণে স্বনির্ভর করে তোলে। লবণ সংশ্লিষ্টদের মতে দেশের উৎপাদিত লবণ বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হলেও নীতিমালার অভাবে তা হচ্ছে না। বাঁশখালীতে পুইছড়ি, ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, চাম্বলের ডিপুটিঘোনা, শীলকুপের পশ্চিম মনকিচর, সরল, মিনজির তলা, কাথরিয়া, খানখানাবাদ (আংশিক) এলাকায় লবণের ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে

শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: বাঁশখালী উপজেলার উপক‚ল জুড়ে চলছে লবণ উৎপাদনের মহোৎসব। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মাঠে নেমে পড়েছেন উপক‚লের লবণচাষিরা। বর্ষার চিংড়ি ঘের শেষে লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে পুরোদমে। 

বাঁশখালী উপজেলার বঙ্গোপসাগরের উপক‚লবেষ্টিত বিভিন্ন ইউনিয়নে এ বছর প্রায় ৫০ হাজার লবণচাষি চাষ শুরু করছেন। ন্যায্যমূল্য পেয়ে খোশ মেজাজে মাঠে কাজ করছে লবণচাষীরা। প্রতিবছর এই সময়ের মধ্যে চাষিরা হাঁড়ভাঙা পরিশ্রম করে লাখ লাখ মে.টন লবণ উৎপাদন করে দেশকে লবণে স্বনির্ভর করে তোলে। লবণ সংশ্লিষ্টদের মতে দেশের উৎপাদিত লবণ বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হলেও নীতিমালার অভাবে তা হচ্ছে না। বাঁশখালীতে পুইছড়ি, ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, চাম্বলের ডিপুটিঘোনা, শীলকুপের পশ্চিম মনকিচর, সরল, মিনজির তলা, কাথরিয়া, খানখানাবাদ (আংশিক) এলাকায় লবণের ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে।

গত বছর লবণের দাম মণপ্রতি দেড়শত টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১শত ৯০ টাকা ছিল। গত বছর প্রান্তিক চাষীরা প্রতি কানি মাঠ বর্গা নিয়েছেন সর্বনিম্ন ১৩ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে জমির লাগিয়ত কানিপ্রতি ১০ হাজার করে নিয়েছেন প্রান্তিকের লবণ চাষীরা। এখন মণপ্রতি লবণ ৩০০-৩৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। শ্রমিকের মজুরি দৈনিক ৮ ঘন্টা পরিশ্রমে ৮০০ টাকা। সৌসুমে কানি প্রতি লবণ উৎপাদন হয় ২০০ থেকে ২৫০ মণ। পাইকারও হাতের নাগালে। সব মিলিয়ে বাঁশখালীর লবণচাষীরা এবছর রয়েছে খোশমেজাজে। পাচ্ছে লবণের ন্যায্যম‚ল্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে তাদের এই মাঠ তৈরির কাজ। কেউ কেউ আবার নিজেই মাঠে রান্না করে খাচ্ছেন। অনেকে আবার আগাম সময়ে দ্রæত মাঠ তৈরি শেষে নিজেদের রপ্ত কৌশলে জমিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি জমিয়ে তাতে সূর্যের তাপ দিয়ে পানি শুকিয়ে তৈরি করছেন লবণ। ম‚লত প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে পরের বছরের জুন মাস পর্যন্ত চলে এই লবণ উৎপাদন মৌসুম। দেশের বঙ্গোপসাগর উপক‚লবর্তী চট্টগ্রামের বাশঁখালীতে কয়েকটি ইউনিয়ন জুড়েই লবণ উৎপাদন হয়ে আসছে। সরকারি হিসাবে প্রতিবছর নভেম্বরের ১৫ থেকে পরবর্তী বছরের মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়। এই সাত মাসের মধ্যে সম্প‚র্ণ আবহাওয়ার উপর নির্ভশীল হয়েই বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার চাষি তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের লবণ উৎপাদন করে।

চাষিরা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রায় পানির দরেই লবণ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। অনেক সময় লবণের উচিত ম‚ল্য না পেয়ে মজুদ করে রাখতে হয়েছে নুন্যতম ম‚ল্যের আশায়। তবে স¤প্রতি নানামুখী পদক্ষেপের কারণে লবণের ম‚ল্য কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় লবণ উৎপাদনে আশার আলো দেখছেন তারা। জানা যায়, এই বছর বাঁশখালী উপজেলার সরল, গন্ডামারা, শেখেরখীল, পুইছড়ি, ছনুয়া, কাথরিয়া, খানখানাবাদ ও বাহারছড়া ইউনিয়নের উপক‚লীয় এলাকার ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষ করা হচ্ছে। চাষিরা নিজেদের জমি বা লিজ নিয়ে এই লবণ চাষ করে। অনেকে আবার জমি মালিকের সঙ্গে ভাগাভাগিতে চাষ করে। চলতি মৌসুমে গত মৌসুমের ১ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। তা ছাড়াও বর্তমান প্রতি মণ লবণের বাজার ম‚ল্য ৩০০-৩৫০ টাকা। 


গন্ডামারা লবণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ওসমানগণি জানান, 'গত বছরের চেয়ে এ বছর লবণের দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে লবণচাষীরা উপকৃত হচ্ছে। লবণ মাঠে চাষীরা লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছে। তাছাড়া প্রান্তিক চাষিদের থেকে আমরা ন্যায্যম‚ল্যে লবণ সংগ্রহ করছি পাইকারি দরে। এ অঞ্চলের উৎপাদিত লবণ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। লবণ মাঠের লাগিয়ত, শ্রমিকের মজুরি, লবণের ন্যায্যম‚ল্য সহ সব মিলিয়ে লবণচাষীরা খুশি।

উত্তর-পশ্চিম গন্ডামারা লবণ উৎপাদন সমিতির উপদেষ্টা আবু আহমদ জানান, বর্তমানে প্রতি বস্তা (দুই মণ) লবণ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬৫০ টাকা করে। অথচ গত বছরের জুলাই-আগস্টে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছে ধোলাই খরচসহ ১৯০, ২১০ ও ২২০ টাকা করে। সে ক্ষেত্রে লবণের প্রকৃত ম‚ল্য পাওয়া গেছে ১৬০, ১৮০ ও ১৯০ টাকা করে। অথচ প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে কৃষককে গুনতে হয়েছে গড়ে ২৪৭ থেকে ২৫০ টাকা। তাছাড়া শিল্প আই আরসি ও ব্যাক টু ব্যাক এলসির সুবিধা নিয়ে সোডিয়াম সালফেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের আড়ালে সরাসরি অতিরিক্ত লবণ আমদানি করায় দেশের বাজারে প্রচুর লবণ চলে আসায় মাঠে উৎপাদিত লবণের দাম পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক বলেন, গত বছরের নভেম্বর থেকে ধানের চাষ শেষ। প্রায় ৫০ হাজার কৃষক এখন লবণ উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। বৃষ্টি না হলে, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে বাঁশখালীর লবণ চাষীরা বেশ উপকৃত হবে। এ বছর লবণের ন্যায্যম‚ল্য পেয়ে প্রান্তিকের চাষিরা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে।

  


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top