উল্লাপাড়ায় বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ এলাকাবাসী

S M Ashraful Azom
0

 : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মাটিকোড়া গ্রামে বজ্রপাতে স্কুল শিক্ষার্থী সহ ৯ কৃষকের মৃত্যুতে এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্তব্ধ হয়ে পড়েছে স্বজনেরা।  বাকরুদ্ধ গ্রামবাসী। খোলা শ্যালো মেশিন ঘরটি যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। 

উল্লাপাড়ায় বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ এলাকাবাসী



 প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এলাকার হাজারো নারী-পুরুষ দেখতে আসছে খোলা আকাশের নিচে শ্যালো ঘরটিকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে হালকা ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এমন সময় কয়েকজন কৃষক মাঠে ধানের চারা তুলছিল এবং পাশের শ্যালো মেশিনে বেশকিছু শিশু ও কিশোরেরা গোসল করছিল। ইতিমধ্যে মেঘের সাথে প্রচন্ড বজ্রপাত শুরু হলে পাশের জমিতে চারা তোলা কৃষক ও গোসলে আসা শিশুসহ ১৩ জন ছোট্র খোলা মেশিনের ছাপড়া ঘরে গাদাগাদি করে আশ্রয় নেয়। মেঘের গর্জনে ছাপরায় থাকা ১৩ ব্যক্তিই এ সময় বজ্রপাতের স্বীকার হন। ঘটনাস্থলেই পাশের গ্রাম শিবপুর থেকে চারা তুলতে আসা একই পরিবারের ৫ কৃষক নিহত হয় এবং মাটিকোড়া গ্রামের দুই স্কুল শিক্ষার্থী সহ ৪ জন মোট ৯ মারা যায়। বাকী ৪ জন গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। চোখের সামনে এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। 


শনিবার সকালে ঘটনাস্থল মাটিকোড়া গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায় এমন দৃশ্য। নিহত ৯ জনের মধ্যে শিশু ও কিশোরীসহ ৪ জনের বাড়ী মাটিকোড়া গ্রামে। মাটিকোড়া গ্রামের নিহতরা হলেন- শাহ আলম (৪০), আব্দুল কুদ্দুস (৬০), রত্না খাতুন রিতু (১২) ও মারিয়া (৭)। নিহত অন্য ৫ জন কৃষকের বাড়ী পাশের শিবপুর গ্রামে।


এছাড়াও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন মাটিকোড়া গ্রামের নূরনবীর মেয়ে নূরুন্নাহার নদী (১২) ও সাইফুল ইসলামের মেয়ে রুপা (১২)। অপর দুই জন রফিকুল ইসলামের মেয়ে আমিনা (১৩) ও নুরনবীর মেয়ে জান্নাতি (৯) চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছে।



মাটিকোড়া গ্রামের সোলায়মান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে বৃষ্টি শুরু হলে মাঠের মধ্যে শ্যালো মেশিনের খোলা টিনের ছাপড়ার নিচে আশ্রয় নেয় ১৩ ব্যক্তি। ঠিক এই অবস্থায় বজ্রপাত শুরু হয়। ঘটনাস্থলেই বজ্রপাতে ৯ জন মারা যায়। গ্রামবাসী খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় এবং নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে।


বজ্রপাতে আহত স্কুল শিক্ষার্থী জান্নাতি ও আমিনা জানায়, বজ্রপাতের ঘটনাস্থলে আমরাও ছিলাম। আল্লাহ আমাদের নিজ হাতে বাঁচিয়েছেন। আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।   


ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আরিফুল ইসলাম স্বপন জানান, বজ্রপাতের ঘটনায় একসঙ্গে ৯ জন ব্যক্তি নিহত হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন কঠিন মৃত্যু কখনো আগে দেখিনি।


গ্রামের গৃহবধূ তানজিলা জানান, গ্রাম এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রত্যকটি মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘুমাতে গেলেই ভয় হয়।


বজ্রপাতে নিহত শাহ আলমের মেয়ে শম্পা বলেন, আমার পরিবারে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা সব হারালাম।



পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তাক আহমেদ মোহন জানান, একইসঙ্গে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতস্ক বিরাজ করছে এবং শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।


উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ উজ্জল হোসেন জানান, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করতে ব্যাপক চেষ্টা চলছে।


শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top