জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিকল্প নেই

S M Ashraful Azom
0

: তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে খসড়া সংশোধনী প্রস্তুত, ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং অংশীজনের মতামত গ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করছে তামাক কোম্পানিগুলো।

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিকল্প নেই



 গণমাধ্যম এক্ষেত্রে সঠিক তথ্য-উপাত্ত ও আইন শক্তিশালীকরণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্তকরণে জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারস কনফরেন্স রুমে ১৩ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ অনুষ্ঠিত “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ, কোম্পানির অপতৎপরতা এবং গণমাধ্যমের করণীয়” শীর্ষক দিনব্যাপী ২টি সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহায়তায় তামাকবিরোধী গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) কর্মশালাগুলো আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ৫২ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।


কর্মশালায় জানানো হয় তামাক কোম্পানি এবং তাদের সুবিধাভোগী গোষ্ঠীগুলো প্রেস কনফারেন্স, পলিসি ডায়লগ, মিডিয়া ক্যাম্পেইন প্রভৃতির মাধ্যমে খসড়া সংশোধনীর বিভিন্ন ধারা ভুলভাবে উপস্থাপন করে জনগণ এবং  নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বিশ্বের ৬৭টি দেশ ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বাতিল করে পূর্ণাঙ্গ ধূমপানমুক্ত আইন বাস্তবায়ন করলেও কোম্পানিগুলো এই ধারার বিরোধিতা করছে। ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বহাল রেখে পরোক্ষ ধূমপান থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষা প্রদান কখনই সম্ভব নয়। অন্যদিকে, ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর এবং এটি নিষিদ্ধ হলে প্রচলিত সিগারেটের ব্যবহার বেড়ে যাবে বলা হচ্ছে, যা মোটেও সঠিক নয়। ই-সিগারেটসহ সবধরনের ভ্যাপিংপণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই ভারতসহ অন্তত ৩২টি  দেশ এসব পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। কর্মশালায় আরো জানানো হয় জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আইন বা বিধি প্রণয়নে তামাক কোম্পানি ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো গোষ্ঠির পরামর্শ বা মতামত গ্রহণ সুস্পষ্টভাবেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল- এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ এর লংঘন। বাংলাদেশ এই আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ।


কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমি আশা করবো তামাক কোম্পানির অপতৎপরতা আমলে না নিয়ে জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার আইনটির সংশোধন প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করবে। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে শক্তিশালী আইন এখন সময়ের দাবি।”


কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, সিটিএফকে- বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম, চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র নিউজ এডিটর মীর মাশরুর জামান রনি, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। গণমাধ্যমকমীর্দের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।


উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ) তামাক ব্যবহার করে, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে (২০১৭-১৮) তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি। তামাকের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।


শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top