রাজু আহমেদ সাহান- উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : চলনবিল অধ্যাষিত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলে শোভা পাচ্ছে মনোরম দৃশ্য। পুরো মাঠ ঢেকে আছে হলুদ বর্ণের চাঁদরে। সুন্দর ও অপরূপ দৃশ্যের আলোকে মধু চাষীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার ক্ষেতে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহের কাজে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এই মৌসুমে ফসলের জমির পাশে পোষা মৌমাছি দিয়ে শত শত বক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন মৌ চাষীরা। ওই সব বক্স থেকে পোষা মৌমাছিগুলো উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষার হলুদ ফুলে।
মৌ চাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বক্স ফেলে রাখেন। তাতে একেকটি বক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম থাকে। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করে থাকে চাষিরা। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন।
উল্লাপাড়া বাঙ্গালা ইউনিয়নের ইসলামপুর মাঝিপাড়া ধরইল গ্রামের মাঠে সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে মধু চাষী মনজু ইসলাম জানান, প্রায় দশ বছর হলো মধু আহরন ব্যবসার সাথে জড়িত তিনি। মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বক্স। যার উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। বক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি সাতটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে এক ধরনের সিট। পরবর্তীতে বক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। তিনি আরো জানান, আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। প্রায় ২০/২৫ লাখ টাকা মুলধন নিয়ে তিনি মৌ খামারী ব্যবসায় নেমেছেন। উপজেলার ধরইল গ্রামের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ২১০টি বক্স বসিয়ে আট দিনে গড়ে প্রায় ৭ শত কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন বলে তিনি জানান। অন্য বছরের তুলনায় মধুর দাম এবার কম, গত বছর এক মন মধুর দাম ছিল ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর এ বছর এক মন মধুর দাম হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। তবে মৌ খামারীরা আশায় আছেন হয়তো মধুর দাম বাড়বে। যদি না বাড়ে তাহলে তারা লোকশানে পড়বেন বলে তিনি জানান।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুর্বণা ইয়াসমিন সুমি জানান, এবার চলতি মৌসুমে উল্লাপাড়া উপজেলায় সরিষার অর্জন হয়েছে ২০ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে যা গত বছরের তুলনায় ১৭'শ থেকে ১৮'শ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ বেশি হয়েছে। এবার সরিষার আবাদকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে মৌ খামারী বসেছেন ৮৫ জন এবং মৌ বক্সের সংখ্যা ৯ হাজার। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি ফুলের উপর বসলে পরাগায়নে ফসল ভালো হয় এবং ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বেড়ে যায়। এই উপজেলায় সরিষা ক্ষেত থেকে মধু উৎপাদনে বাংলাদেশের পাইনিয়ার (পথিকৃত)। উল্লাপাড়া উপজেলায় গত বছর মধু উৎপাদন হয়েছিল ১৬৮ মেট্রিক টন এবার তা ১৭০ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান। কৃষি অফিস থেকে মৌ খামারীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।