দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কাজ করে যেতে হবে: সামির সাত্তার

S M Ashraful Azom
0

: ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামির সাত্তার প্রতিষ্ঠানটির চার হাজারেরও বেশি সদস্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি জানান, চলতি বছর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে বাংলাদেশকে। বিরাজমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সহজ বা রাতারাতি কোনো সমাধান নেই। এ সময়টায় আমাদের পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে নীতি সংস্কার করতে হবে। 

দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কাজ করে যেতে হবে



 ২০২৩ সালে ব্যবসা বাণিজ্যে কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন? 

সামির সাত্তার : করোনা অতিমারির মারাত্মক প্রভাব থেকে বৈশ্বিক অর্থনীতি কেবল গতি ফিরে পেতে শুরু করছিল। এরই মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, রিজার্ভ কমে আসা, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর পর্যাপ্ত এলসি খুলতে না পারা, স্থানীয় বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ ইত্যাদি কারণে ২০২৩ সালের শুরু থেকেই অর্থনীতি বেশ চাপে রয়েছে। আমরা যদি সামগ্রিক অর্থনীতির কথা বিবেচনা করি, তাহলে দেখতে পাব যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সরাসরি আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলছে। বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় ও শিল্পসংশ্লিষ্ট পণ্যের আমদানি খরচ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বছরটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাত্রা করল। তবে বেসরকারি খাত ও সরকার যৌথভাবে এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে ব্যবসার জন্য জন্য একটি সহায়ক পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এ বছরটি আমাদের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে বলে মনে হয়। 


সিপিডি বলছে, ২০২২ সালে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনায় সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল দুর্নীতি। বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

সামির সাত্তার : দুর্নীতি দেশের অর্থনীতির গতিকে স্থবির করে দেয়, এটা অনস্বীকার্য। দুর্নীতি থাকলে একটা দেশ কোনোভাবেই সামনে এগোতে পারে না। তবে ২০২২ সালে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা ছিল দুর্নীতি, আমি এ মতের সঙ্গে একমত নই। কারণ ২০২২ সালের শুরুতেও আমরা করোনা অতিমারি থেকে বের হতে পারিনি। ২০২২ সালের প্রথমার্ধেও করোনার কারণে অর্থনীতির স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়নি। তারপর কোভিড আক্রান্তের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে এলেও এর প্রভাব বছরব্যাপী ছিল, এমনকি এখন পর্যন্ত আমাদের তা বহন করে যেতে হচ্ছে। তবে সবক্ষেত্রে অটোমেশন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাস্তবায়ন করতে পারলে দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণসুবিধা সহজ করতে কী কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?

সামির সাত্তার : ব্যাংকগুলো অনেক সময় টার্গেট পূরণের জন্য ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ না দিয়ে মাঝারি বা বড়দের দিতে বেশি পছন্দ করে। ব্যাংকগুলো সাধারণত বলে থাকে যে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারছে না। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে প্রচুর ডকুমেন্টেশন প্রয়োজন হয়, যা অনেক সময় ছোট উদ্যোক্তাদের পক্ষে ম্যানেজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ বিষয়টিকে সম্প্রতি আমরা ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টিগোচরে নিয়ে আসি, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সিএমএসএমইদের জন্য সম্প্রতি ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া কিছুটা সহজীকরণ করেছে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনার টাকা থেকে ইতোমধ্যে ৭৯ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট অংশ যেন দ্রুত দেওয়া যেতে পারে, সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে।


রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আপনার পরামর্শ কী?

সামির সাত্তার : আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে এলসি খোলার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডেফার্ড পেমেন্ট বা বায়ার্স ক্রেডিটের বিষয়টিও কাজে আসতে পারে। তা ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির আরও নতুন নতুন উৎস খুঁজে বের করা প্রয়োজন। রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে আমদানি পর্যায়ে কর ও মূসক আপাতত রমজান পর্যন্ত মওকুফ করা যেতে পারে, তাতে ব্যয় কিছুটা হ্রাস পাবে। সরকারের পক্ষ থেকেও কঠোর বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে করে বাজারে পণ্যের মূল্য ও গুণগতমান বজায় থাকে। জ্বালানি সরবরাহ এখনকার মতো স্বাভাবিক থাকলে পণ্য পরিবহন ব্যয়ও যৌক্তিক পর্যায়ে থাকবে। ফলে আগামী রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে আমি আশা করছি। 


দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে?

সামির সাত্তার : অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী, ইন্টারনেট পেনিট্রেশন অনেক বেশি। সবার হাতে হাতেই এখন স্মার্টফোন। প্রযুক্তির প্রসার যে বেড়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের টেলি-ডেনসিটি প্রায় ১০০ শতাংশ, ইন্টারনেট পেনিট্রেশন প্রায় ৭৫ শতাংশ। দেশব্যাপী ২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে স্বপ্ন তার সঙ্গে সবাই একাত্মতা প্রকাশ করেছিল। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই পথে আমরা অনেকদূর এগিয়েছিও। 


শিক্ষিত কর্মহীন তরুণদের প্রতি কী পরামর্শ রাখবেন?

সামির সাত্তার : আমাদের প্রধান সমস্যা শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। কিন্তু সেটা আমরা করতে পারছি না। প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষিত তরুণ নতুন করে চাকরির বাজারে যুক্ত হচ্ছেন। তবে শিক্ষিত তরুণদের শুধু চাকরির পেছনে ছোটা উচিত হবে না। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে তরুণরা চাইলে নিজেদের স্টার্টআপ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।


শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top