বঙ্গমাতার বায়োপিকের নৈপথ্যে কেন এই প্রহসন

S M Ashraful Azom
0

: বঙ্গমাতার বায়োপিকের নৈপথ্যে কেন এই প্রহসন? একজন বাঙ্গালী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম জপা মুখ্য নাকি  তার আদর্শ ধারণ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ? এসব প্রশ্ন মাথায় উকি দিচ্ছে, ভাবাচ্ছে যখন আমি মাথার উপর ঋণের বোঝা নিয়ে এই শহরের শেষ আশ্রয়টুকু হারাবার ভয়ে একটু সহযোগীতার প্রত্যাশায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছি। সবাইকে বিষয়টি জানাবো নাকি নিজের ভেতর চেপে যাবো এ নিয়ে আমার অবস্থা শ্যাম রাখি না কূল রাখি অথবা জাত রাখি না পাত। জাত রাখলে ঠিক কার জাত রাখবো আর পাত রাখলেও ঠিক কার পাত রাখবো এ নিয়েও আমি দ্বিধান্বিত। তবে অবস্থা যা দাড়িয়েছে তাতে সত্য কথাটা সত্য করে বলাটাই সঠিক পথ বলে মনে করছি।

বঙ্গমাতার বায়োপিকের নৈপথ্যে কেন এই প্রহসন



 “ আমি জানুয়ারি মাসের ২৮ নাগাদ বঙ্গবন্ধুর রেণু চলচ্চিত্রের সাথে সংযুক্ত হই। ৩০ তারিখে আমার ডিপার্টমেন্টের প্রধান লুবনা আপার সাথে অর্থনৈতিক ব্যাপারে আলোচনা হয়। সেদিনের কথা অনুযায়ী আমাদের ২২/২৫ দিন শুটিং হবে এবং এর জন্য আমাকে সর্বমোট ৩০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেয়া হবে। আমার যাতায়াত এবং ছবির প্রয়োজোনে আনুসাঙ্গিক অন্যান্য খরচ নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বাইরে অর্থাৎ আলাদাভাবে প্রয়োজন অনুসারে প্রদান করা হবে; এবং ছবির প্রি-প্রোডাকশন এবং চিত্রধারণের কাজ যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে হবে সেহেতু আমার সার্ভাইবাল ইস্যু বিবেচনায় পারিশ্রমিকের একটা অংশ আমাকে অগ্রীম প্রদান করা হবে। প্রাথমিক ভাবে আপা আমাকে একটা ইমার্জেন্সি প্রয়োজনে ২৫০০ টাকা প্রদান করেন এবং বলেন আমার পারিশ্রমিকের অগ্রিম হিসেবে যে টাকা দেয়া হবে সেটা তখন থেকে আরো সাত দিন পরে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের ৭/৮ তারিখ নাগাদ দেয়া হবে। 

আমি যেহেতু শারীরিক এবং মানসিকভাবে এই ছবির সাথে নিজেকে সংযুক্ত করেছি সেহেতু অন্য কোন কাজ করার অপশন আমার হাতে নেই। আমার নিকট অন্য যেসব কজের প্রস্তাব এসেছিলো আমি এই ছবির জন্য সেগুলো সম্মানের সাথে প্রত্যাখ্যান করেছি। বর্তমানে অর্থ সংকটে আমি বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে পারছিনা। আমি লুবনা আপার সাথে দেখা করে আপাকে বিষয়টি অবগত করি, এরপর তাকে মেসেজ পাঠাই এবং আমার সহকর্মী শ্রেয়ার মাধ্যমেও তাকে অনুরোধ করি যেন দ্রুত তিনি দায়িত্বশীল ব্যক্তি বরাবর আমার সমস্যাটি উপস্থাপন করেন এবং সমাধানের ব্যাপারে উদ্যোগী হন।আমার সমস্যাটি ব্যায়বহুল না হলেও খুবই গুরুত্বপুর্ণ। নির্বিগ্নে পুর্নমনোযোগে কাজ করার ক্ষেত্রে আমার বাসস্থানের নিরাপত্তা জরুরী।আমি আপার কাছে আশানরুপ কোন উত্তর পাইনি এবং তিনি এই সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন কিনা সে ব্যাপারেও পরিস্কার করে কিছু বলেননি। আমি সিনেমা ভালোবাসি এবং আমার রাজনৈতিক দর্শনের জায়গা থেকে আমি বঙ্গবন্ধুর রেণু চলচ্চিত্রের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী এবং আমি আমার মেধা ও শ্রমের সর্বোচ্চটা প্রদান করে  এই কাজের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকতে চাই।তবে নিজের আত্নসম্মান এবং বাসস্থান টিকিয়ে রাখতে এইটুকু সহযোগিতা আমার টিমের কাছে আমার পাওনা বলেই মনে করি। আমার বক্তব্য কাউকে আহত করলে বা সীমালঙ্ঘন বা সেরকম কিছু বলে মনে হলে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমার অবস্থা সোচনীয়, আশা রাখি সমস্যাটি সমাধানে আপনারা উদ্যোগী হবেন।’’ 

বঙ্গবন্ধুর রেণু ছবিতে কাজ করতে গিয়ে অর্থনৈতিক জটিলতা তৈরি হলে এক পর্যায়ে আমি এই বার্তাটি ছবির নির্বাহী প্রযোজক জনাব এন রাশেদ চৌধুরী  বরাবর প্রেরণ করি। মেসেসটি আমাদের কস্টিউম ডিসকাসন গ্রূপে সেন্ড হবার পরপর লুবনা আপার নির্দেশে তার আরেক সহকারী এবং আমার সহকর্মী অরুন্ধুতী শ্রেয়া  আমাকে সিনেমার হোয়াটস এপ গ্রুপ থেকে রিমুভ করে , লুবনা আপা মেসেজটি ডিলিট করে দেন ও একই সাথে আমাকে ফেসবুকে ব্লক করে দেন এবং আমার ফোনে একটি এস এম এস দিয়ে আমাকে পরদিন তার অফিসে ডেকে পাঠান। আমি উনার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে বিপজ্জনক বলে আখ্যা দেন এবং বলেন “সিনেমা তো আর সরকারী চাকরী না। সিনেমার কাজ যে কোন সময় চলে যায়।” তিনি আরো বলেন যে তিনি নিজেও আর এই সিনেমায় কাজ করতে আগ্রহী নন।তিনি আমাকে ২৫০০ টাকা অফার করে বলেন, “আমি তোমাকে যাতায়াত খরচ বাবদ এই ২৫০০ টাকা দিলাম নিয়ে চলে যাও আমি আর তোমাকে কাজে রাখতে চাইনা। তুমি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখলেও আমি তোমাকে আর কাজে নিবোনা এবং তুমি কোন টাকাও পাবানা। তোমার বাসা ভাড়া দেবার দায়িত্ব আমার না” আমি তাকে বলি, আমার বাসা ভাড়া দেবার দায়িত্ব আপনার না হলেও আমাকে প্রতিশ্রুত পারিশ্রমিক দেয়া নিশ্চয়ই আপনার দায়িত্ব। তখন তিনি উচ্চস্বরে চিৎকার করে আমাকে অফিস থেকে বের করে দেন এবং আমার পারিবারিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।  

এর একদিন পর রাশেদ ভাইয়ের সাথে আমার ফোনে কথা হয়। আমি তাকে আমাকে অব্যহতি দেবার বিষয়টি অবগত করি; উনি আমাকে আশ্বস্ত করেন যে আমি কাজটি ফিরে পাবো, সহযোগীতাও পাবো এবং বলেন তিনি লুবনা আপার সাথে কথা বলে আমাকে জানাবেন। পরবর্তীতে তিনি আর আমাকে কিছুই জানাননি। আমি তাকে ফোনে পাইনা।এদিকে আমার অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে।অর্থের সংকটে আমি সামজিকভাবে আমার আশেপাশের মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হতে থাকি।এমতবস্থায় আমি হোয়াটস এপে আমার অবস্থার বর্ণানা দিয়ে জনাব এন রাশেদ চৌধুরীকে নিম্নোক্ত বার্তাটি প্রেরণ করি।  

‘‘ভাইয়া আমি আপনাকে গত বৃহস্পতিবার কল করেছিলাম। লুবনা আপা আমাকে কয়েকদিনের যাতায়াত খরচ বাবদ ২৫০০ টাকা দিয়ে কাজ থেকে অব্যহতি দিয়ে দিয়েছেন। আমি শুধু আমার অবস্থার কথা জানিয়েছিলাম। আমার মনে হয়না নিজের অবস্থার কথা জানিয়ে প্রতিশ্রুত অর্থ চাওয়া কোন অন্যায় এবং সে অন্যায়ের জন্য কাউকে কাজ থেকে বের করে দেয়া যায়। আমি আগেই বলেছি বঙ্গবন্ধুর রেণু ছবিতে সংযুক্ত  হবার কারণে আমাকে অন্যান্য কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছে। যার ফলে আমি অর্থনৈতিকভাবে ভিষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। আমার বাড়িওয়ালা আমাকে সময় বেধে দিয়েছেন এর মধ্যে ভাড়া পরিশোধ করতে না পারলে আমার ল্যাপটপটি তিনি নিয়ে যাবেন। আমি একজন লেখক ল্যাপটপটি আমার একমাত্র লেখার সরঞ্জাম , এটা নিয়ে নিলে আমি কি করবো আমি জানিনা। আপনি বলেছিলেন আপনি লুবনা আপার সাথে কথা বলবেন। জানিনা বলেছেন কিনা কিংবা ভূলে গেছেন কিনা। আমার টেক্সট পেলে প্লিজ রেসপন্স করবেন। সিনেমা করতে এসে আমার পরিবার , আত্নিয় স্বজন সবার কাছ থেকে আমি গত কয়েক বছর যাবত বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করছি। আমার অনেক কষ্টে কেনা ল্যাপটপটি আমি হারাতে চাইনা। আমার প্রতি সদয় আচরণ করুণ। আমাকে কাজে পুনর্বহাল করুণ এবং মিনিমাম অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিয়ে আমাকে এই সংকট থেকে বাচান। আমি সিনেমার ব্যাপারে বরাবরই সৎ এবং আমি আমার সর্বোচ্চ এফোর্ট দিয়ে কাজ করবো।’’

তিনি মেসেজটি দেখেন কিন্তু এরপর তার পক্ষ থেকে কোন উত্তর আসেনি এখন অব্দি। এরপর দুইদিন ফোন করেও তাকে পাইনি। বংবন্ধু  বাঙ্গালী জাতির পিতা, আমাদের আদর্শ কিন্তু তার সহধর্মীনীর বায়োপিক নির্মাণের নৈপথ্যে কেন এরকম জুলুম আর মানসিক চাপের গল্প থাকবে তা আমার বোধগম্য হয়না।এই ছবির সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তারা প্রত্যেকেই আমার আস্থাভাজন তাদের কাছ থেকে এমন নীরব নিগ্রহ কখনোই আমার কাম্য নয়। আমাকে কাজে ডেকে নিয়ে এভাবে বিপদের মধ্যে ফেলে দেবার কি মানে ছিলো আমি জানিনা। আমার সাথে তো কারো কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই আমি তো কারো কোন ক্ষতি করিনি।তবে আমার সাথে এই প্রহশন কেন করা হলো? আমি যেনে শুনে কম পারিশ্রমিকে এই কাজটি করতে রাজী হয়েছিলাম এই জন্য যে এই ছবিটি আমার দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাস বহন করে। ভেবেছিলাম এই ছবিটি আমাকে সমৃদ্ধ করবে , আমার মানসিক উতকর্ষ বৃদ্ধি করবে। অথচ এই ছবি আমাকে ঠেলে দিলো ঘোড় বিপদে এবং আমার অন্যায় বলতে কেবল এটাই ছিলো যে আমি আমার পাওনা টাকা চেয়েছিলাম এবং বিপদে পরেই চেয়েছিলাম। 

উল্লেখ্য “বঙ্গবন্ধুর রেণু” চলচ্চিত্রটি সরকারী অনুদানে নির্মিত হচ্ছে। ছবিটি পরিচালনা করছেন মারুফা আক্তার পপি যতদূর জানি ছবির পরিচালক একজন সাংসদ। তাকে যতটুকু দেখেছি সজ্জন ব্যাক্তি বলেই মনে হয়েছে।একদিন কাজ শেষে ফেরার সময় তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে আমার একতারায় গান শুনেছিলেন। যদিও ঐদিনের পর লুবনা আপা শ্রেয়ার মাধ্যমে আমাকে একতারা সাথে নিয়ে যেতে বারণ করে দেন। 


আহমেদ সাব্বির 
লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং সাবেক সহকারী কস্টিউম ডিজাইনার “বঙ্গবন্ধুর রেণু”

শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top